শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাবাসনের কৌশল পরিবর্তনে জোর বিশেষজ্ঞদের

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

মিয়ানমারের দিক থেকে নতুন কৌশলের প্রয়োগ বিবেচনায় নিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের গত দুই বছরের নেয়া কৌশল পাল্টানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে 'গণহত্যা অভিপ্রায়' নিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল মিয়ানমার, যারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস, মিয়ানমার ১৯৮২ সালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে নাগরিকত্ব্ব বাতিল করার পর যারা রাষ্ট্রহীন বলে বিবেচিত।

গত ২২ আগস্টসহ পরপর দুবার তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও নাগরিকত্বসহ সার্বিক অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে কোনো রোহিঙ্গা যেতে রাজি হয়নি। ফলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত প্রত্যাবাসন চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা- ইউএনএইচসিআরকে রাখাইন রাজ্যে কাজ করার জন্য এখনও 'কার্যকর প্রবেশাধিকার' দেয়নি মিয়ানমার।

এ বিষয়ে আলাপচারিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ প্রশ্ন তোলেন, রোহিঙ্গারা কেন ফিরে যাবে। মিয়ানমার কি কোনো কিছু পরিবর্তন করেছে।

বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়া রাখাইন রাজ্যে ভয়াবহ 'নিধনযজ্ঞের' বার্ষিকীতে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আন্তরিক নয়। তারা এটি নিয়ে কূটনীতি এবং রাজনীতির খেলা খেলছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সামনে রেখে কোনো কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া লোক দেখানোর জন্য প্রত্যাবাসনের কথা বলেছিল।

সাবেক কূটনীতিক বলেন, 'যারা গণহত্যা করেছে এবং তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে, তারাই এখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে। তারা কেন ফিরে যাবে? তারা কি বোকা?

তিনি বলেন, মিয়ানমার যদি আন্তরিক হতো, তাহলে গত দুই বছরে সবচেয়ে বড় কাঠামোগত পরিবর্তন করে আইন পরিবর্তন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করত। এখন পর্যন্ত এ পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

'মিয়ানমার তখনই আন্তরিক হবে, যখন তাদের ওপর বড় আন্তর্জাতিক চাপ আসবে। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা নিতে হবে।'

বাংলাদেশ কী করতে পারে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও রোহিঙ্গারা প্রতিবেশী দেশ ভারত, মালয়েশিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, এমনকি অস্ট্রেলিয়াসহ আরও ১৮ বা ১৯টি দেশে বাস করছে।

'বাংলাদেশ এসব দেশকে নিয়ে একটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা কমিশন গঠনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে। ওই দেশগুলো পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, যেহেতু রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণে তাদের খরচ বাড়ছে।

জাতিসংঘের ভেতরে বা বাইরে পদক্ষেপ নেয়ার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কাছে তাদের ভাষায় বাংলাদেশের বক্তব্য নিয়ে হাজির হতে হবে।

'মিয়ানমার নাগরিকরা জানে না আমরা কী বলছি। তাদের সরকার যেটা বলছে, তারা সেটাই জানে। আমাদের একটি বর্মি ভাষার রেডিও থাকতে পারে। যা তারা শুনবে এবং কী ঘটছে ও তাদের সম্পর্কে কী আলোচনা হচ্ছে তা জানতে পারবে।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ব্রম্ননাই এবং চীন সফরকে স্বাগত জানিয়ে ইমতিয়াজ বলেন, এ ধরণের সফর বাড়ানো দরকার। বিনিয়োগকারী দেশগুলো থেকে চতুর্মুখী চাপ এলেই মিয়ানমার বদলে যাবে।

'পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে। কিন্তু তাদের অনেকে বিশ্বের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী মিয়ানমারে বিনিয়োগও করছে। বাংলাদেশ এসব পশ্চিমা দেশকে বলতে পারে।'

প্রত্যাবাসনের সাম্প্রতিক ব্যর্থ প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা তো চাপ অনুভব করছেই না। উপরন্তু নাটক মঞ্চস্থ করেছে। তাদের ফাঁদ নিয়ে সচেতন হওয়া দরকার।

'মিয়ানমার যখন বলেছিল, রোহিঙ্গাদের তারা ফিরিয়ে নেবে। তখন প্রথমে তাদের কাছে অন্তত ১০ সাংবাদিক ও ১০ রোহিঙ্গা সদস্যকে সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে দেয়ার সুযোগ চাওয়া উচিত ছিল।'

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিলেই এ জায়গায় সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন বলেন যে এটি 'অত্যন্ত জটিল' প্রক্রিয়া এবং এতে উত্থান-পতন থাকবে তা গ্রহণ করতে হবে। তবে পরিস্থিতি বিশ্লেস্নষণ করে কূটনৈতিকসহ সব ধরনের প্রচেষ্টা নিতে হবে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও সংবেদনশীল হয়ে সবার সহযোগিতা নিয়ে এই সংকট মোকাবেলার ওপর জোর দেন তিনি।

'মাত্র চার দিন আগে যদি আপনি তাদের বলেন, আপনি ২২ আগস্ট ফিরে যাবেন ... এটা শুনেই তো তাদের হতবাক হওয়ার কথা ... তারা কোথায় যাবে?'

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, 'আমরা একাত্তরে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভারত যদি মাঝপথে আমাদের বল তো, তোমরা ফিরে যাও... আমরা কি ফিরতাম? আমার মনে হয় কেউ ফিরত না। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমরা সকলেই ফিরে এসেছি।

মিয়ানমারেও যদি মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে তবে তারা (রোহিঙ্গারা) স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফিরে যাবে। এনজিওর প্রয়োজন হবে না বা ইউএনএইচসিআরের দরকার হবে না।' বিডি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<64048 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1