শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের পেছনে দুই বছরে খরচ ৭২ হাজার কোটি টাকা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের বাস্তুচু্যত নাগরিকের সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, এই বিপুল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য গত দুই বছরে বাংলাদেশ সরকারের খরচ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা। রোহিঙ্গাদের পেছনে প্রতি মাসে সরকারের খরচের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৭ লাখ ৪৫ হাজার। এর আগে একই কারণে ১৯৭৮-৭৯, ১৯৯১-৯২ ও ১৯৯৬ সালেও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়ার পর রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা আশ্রয় ক্যাম্পে নতুন করে জন্ম নিয়েছে আরও ৬০ থেকে ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। এসব মিলিয়ে জাতিসংঘ মনে করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার পরিমাণ ১০ লাখ। সরকারের বিভিন্ন দফতর, কঙ্বাজার জেলা প্রশাসন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজারের কিছু বেশি। এ তথ্য জানিয়েছে কঙ্বাজার জেলা প্রশাসন সূত্র। এদিকে ২০১৮ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ১০ লাখ রোহিঙ্গার পেছনে সরকারের বছরে ব্যয় হতে পারে কমপক্ষে ৬০ কোটি ডলার। দুই বছরে এর পরিমাণ ১২০ কোটি ডলার। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের পেছনে মাসে মাথাপিছু ব্যয় প্রায় ৭০০ ডলার। কিন্তু রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনেও একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু এই ব্যয় নির্বাহের জন্য বৈধ পথে কোনো আয়ের উৎস নেই। অথচ ব্যয় হচ্ছে। আর এ কারণে টানা দুই বছর ধরে এই বিশাল ব্যয় নির্বাহ করতে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকেই।

এর বাইরেও গত অর্থবছরে সরকারের বাজেটে আলাদা করে রোহিঙ্গাদের জন্য ৪শ' কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী আবাসন গড়তে নোয়াখালীর ভাসানচরে আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ভাসানচরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামে এক হাজার ৪৪০টি ব্যারাক ও ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র।

কঙ্বাজার জেলার সাবেক ডিসি আলী হোসেন জানিয়েছেন, নগদ টাকার বাইরেও সরকারের আরও খরচ রয়েছে, যা মূল খরচের তুলনায় অনেক বেশি। এসব খরচ কখনোই একত্র করে দেখা হয়নি। এই বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুষ্ঠুভাবে বসবাসের জন্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যয় রয়েছে। বিষয়টি সরকারের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়াসহ তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ দিতে হয়েছে অতিরিক্ত জনবল। এজন্য বাড়তি খরচ জুগিয়েছে সরকার। কখনোই এসব খরচ একত্র করে উপস্থাপন করা হয়নি বা সম্ভব নয় বলেও জানান সাবেক এই কর্মকর্তা।

কঙ্বাজার জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের চিহ্নিতকরণ-সংক্রান্ত একটি কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার আশ্রয় ক্যাম্প। পাহাড় ও বন কেটে স্থাপন করা হয়েছে এসব আশ্রয় ক্যাম্পের অবকাঠামো। এ কারণে উজাড় হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি। এতে ৩৯৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৩ টাকার সমপরিমাণ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়েছে বলেও মনে করে জাতিসংঘ।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, গত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকার ও দাতা সংস্থাগুলোর ব্যয় কখনোই একত্র করে হিসাব করা হয়নি, যা সম্ভবও নয়। কারণ, এসব ব্যয় জেলা প্রশাসনের তদারকিতে হয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেনাবাহিনী। এক্ষেত্রে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিতরণ করা হয়েছে, যার মূল্য নির্ধারণ করার প্রয়োজন পড়েনি। করাও হয়নি। সম্ভবও নয়। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেও বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'রোহিঙ্গাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ স্বাস্থ্য, চিকিৎসা খাতে ব্যয়ের পরিমাণ বিপুল।'

এদিকে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২-এর ৪/১৪ (ক) অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো প্রকার অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ করার ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাংলাদেশ বন বিভাগের এই আইন উপেক্ষা করে কঙ্বাজারের কুতুপালংয়ের ৪০১ দশমিক ৪০ একর, জামতলী ও বাঘঘোনার ৫১৬ একর, বালুখালীর ৮৩৯ একর, তাজনিমা খোলার ৪৫১ একর, উখিয়ার বালুখালী ঢালা ও ময়নারঘোনার ৩১০ একর, শফিউলস্নাহ কাটা এলাকার ২০১ দশমিক ২০ একর, নয়াপাড়ার ২২৪ একর, টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের পুঁটিবুনিয়ার ৮৮ দশমিক ৬০ একর, কেরনতলী ও চাকমারকুল এলাকার ৭৯ দশমিক ৮০ একর এবং লেদারের ৪৫ একর সংরক্ষিত বনভূমি উজাড় করে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছে।

কঙ্বাজার বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় হিসাবে এই পরিমাণ জমির দাম দাঁড়ায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা, যা সরকারের নিজস্ব সম্পত্তি। যা আর কোনোদিনই ফেরত পাওয়া যাবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জানিয়েছেন, সরকার ও দাতাদের সহায়তা মিলিয়ে ব্যয়ের এই পরিমাণ তো অনেক। ১১ লাখ মানুষের দুই বছরের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর ব্যয়, যা বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে জোগান দেয়া হয়েছে। ত্রাণ বা সহায়তা বাবদ রোহিঙ্গাদের পেছনে দাতা গোষ্ঠী বা অন্য কোনো সূত্র থেকে পাওয়ার বাইরেও সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অনেক টাকাই ব্যয় হয়েছে।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63744 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1