শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দোষারোপের বৃত্তে ডুবছে চামড়াশিল্প

নতুনধারা
  ২১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর লালবাগের পোস্তা এলাকায় আড়তদাররা কাঁচা চামড়া বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন -যাযাদি

বিডি নিউজ

ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে এবার ব্যাপক আলোচনায় এলেও গত তিন বছর ধরে কমছে চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি; অথচ সরকারের পক্ষ থেকে একে সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।

আদালতের নির্দেশে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে সরিয়ে নেওয়ার পর থেকে নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে দোষারোপ চলছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কারখানা মালিকদের।

এবার ঈদে চামড়ার ব্যাপক দরপতনের পর আবার পরস্পরের দোষারোপ শুরু হয় আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের, যা এই শিল্পের সংকটকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

এভাবে চলতে থাকলে চামড়া শিল্প ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন তারা।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং বা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, 'এই পরিস্থিতির জন্য ব্যবসায়ীদের দায় যেমন রয়েছে, তেমনি সরকারি নীতি-নির্ধারকদেরও আন্তরিকতার অভাব দেখা গেছে। এর সামগ্রিক প্রভাবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই খাত নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে।'

সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সরকারি সংস্থাকেই অগ্রণী ভূমিকা পালনের পরামর্শ দেন তিনি।

২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে স্থানান্তর করা হয় সাভারের হেমায়েতপুরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) গড়ে তোলা চামড়া শিল্প নগরীতে।

১৫৪টি কারখানাকে এই শিল্প নগরীতে জমি বরাদ্দ দেওয়া হলেও তিন বছরেও কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি সবাই। যারা উৎপাদন শুরু করেছেন, তারাও অবকাঠামোগত নানা সমস্যার কথা বলে আসছেন।

রপ্তানিতে ভাটা, প্রভাব কাঁচা চামড়ায়ও

২০২১ সালের মধ্যে চামড়া খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৭ সালে চামড়াকে 'প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার' ঘোষণা করেছিল সরকার।

রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ১১৬০ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার। পরের বছর (২০১৬-১৭) রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ১২৩৪ মিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।

পরের বছর এই খাত থেকে রপ্তানি আয় কমে যায় ১২ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। সে বছর (২০১৭-১৮) রপ্তানি হয় ১০৮৫ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় আরও ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১০১৯ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন ডলারে।

এই সময় চামড়ার জুতা রপ্তানি অব্যাহত থাকলেও সবচেয়ে বেশি কমে যায় ফিনিশড লেদার ও ক্রাস্ট লেদার রপ্তানি।

এই খাত সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী বলেন, ২০১৪ সালেও বাংলাদেশ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রাস্ট অ্যান্ড ফিনিশড লেদার রপ্তানি হয়েছিল। ধীরে ধীরে সেটা কমে সর্বশেষ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৬০ মিলিয়ন ডলারের ক্রাস্ট অ্যান্ড ফিনিসড লেদার।

রপ্তানি ভাটার প্রভাব পড়ে কাঁচা চামড়ার দামেও। ২০১৩ সালে প্রতি বর্গফুট গরু-মহিষের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, পরের বছর দাম ধরা হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।

২০১৫ সালে কাঁচা চামড়ার দাম কমে দাঁড়ায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। পরের বছর দাম ধরা হয় ৫০ টাকা। ২০১৭ সালে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দাম ধরা হলেও পরের দুই বছরে দাম ধরা হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

প্রস্তুত ছিল না সাভার!

চামড়া শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত পরিবেশে উন্নীত করতে ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তোলার কাজে হাত দেয় বিসিক। হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের অনীহা সত্ত্বেও ২০১৭ সালের এপ্রিলে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে সেখানে যেতে বাধ্য হতে হয়।

হাজারীবাগে সব ট্যানারির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হলেও সাভারে জমি ইজারা পাওয়া ১৫৪টি কারখানার মধ্যে কাজ শুরু করতে পেরেছে ১২৪টি।

মালিকরা বলছেন, পরিবেশের কথা বলে সাভারে স্থানান্তর করতে গিয়ে সেখানে নতুন অবকাঠামোর জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে তাদের। বিপরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার সিইটিপি, রাস্তাঘাট অপ্রস্তুতসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, সম্প্রতি সিইটিপির একটি অংশ প্রস্তুত করা হলেও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম ও ডাম্পিং স্পট এখনও অপ্রস্তুত। বিসিক চামড়া শিল্পের জন্য কতটুকু আন্তরিক এটিই তার প্রমাণ।

বিসিকের নতুন চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান এ বিষয়ে বলেন, ছয় মাস ধরে সিইটিপি শতভাগ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি ডাম্পিং ইয়ার্ড প্রস্তুত হয়ে যাবে।

ট্যানারি মালিকদের দাবি, বিসিক চেয়ারম্যানের বক্তব্যের মধ্যেই তাদের ব্যর্থতা স্পষ্ট। যেসব কাজ এখন করা হচ্ছে বা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ২০১৭ সালেই করে ফেলা উচিত ছিল। করা হয়নি বলেই এর খেসারত দিতে হয়েছে চামড়া শিল্পকে।

ডিসেম্বরের মধ্যে ডাম্পিং ইয়ার্ড প্রস্তুত করা অবাস্তব বলেও দাবি করেন মিজানুর।

কমপস্নায়েন্স?

শিল্প মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশে ফিনিশড লেদারের রপ্তানি বাজার ছিল ইতালি, তাইওয়ান, কোরিয়া ও চীন। সাভারে স্থানান্তরের পর অনেক কারখানায় অন্তত ছয় মাস উৎপাদন বন্ধ ছিল। এ সময় অধিকাংশ ক্রেতাই ভারতসহ অন্য দেশে চলে যান। চীনের কিছু ক্রেতা আবার ফিরে এলেও এখন প্রতিযোগিতা কমে যাওয়ায় তারা পণ্যের দাম কমিয়ে দিয়েছে।

মিজানুর বলেন, এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বাজারেও প্রবেশ করতে পারছেন না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে সাভার ট্যানারি পলস্নীর পরিবেশগত সমস্যা অন্যতম বাধা।

'ইউরোপে রপ্তানির জন্য আইএসও সার্টিফিকেট প্রয়োজন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশেনের পক্ষ থেকে এই সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা হলেও সেটি পাওয়া যায়নি। পরিবেশ সমস্যা এই ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া লেদার ওয়ার্কিং গ্রম্নপ নামে ইউরোপের একটি শক্তিশালী পরিবেশ সংস্থার মানেও উন্নীত হতে পারেনি বাংলাদেশের চামড়া খাত।'

বিসিকের চেয়ারম্যান মোশতাক এই প্রসঙ্গে বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার রপ্তানি বাজার ধরতে লেদার ওয়ার্কিং গ্রম্নপের (এলডবিস্নউজি) সনদ পেতে হবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু এই সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে ট্যানারি মালিকদেরই।

তিনি বলেন, "এলডবিস্নউজির সার্টিফিকেট পেতে ১৩৬৫ নম্বরে মান যাচাই প্রক্রিয়া হয়। এর মধ্যে বিসিকের হাতে মাত্র ২০০ নম্বর। বাকি ১১৬৫ নম্বর ট্যানারি মালিকদের অর্জন করতে হবে। ১০০ নম্বর সিইটিপি দিয়ে, বাকি ১০০ নম্বর ডাম্পিং ইয়ার্ড দিয়ে।'

'সিইটিপি পুরোপুরি বিসিকের কাছে নয়; বরং এর কিছুটা আবার ট্যানারি মালিকদের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিটি কারখানায় একটি সেডিমেন্টেশন ট্যাঙ্ক করার কথা। কিছু কিছু ট্যানারি মালিক সেটা করেছেন, অনেকে সেটা সঠিকভাবে করেননি।'

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন মাহিম বলেন, 'ইউরোপ ও আমেরিকার রপ্তানি বাজার ধরতে পারলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের চলমান এই সংকট কেটে যাবে।

'সেই কাজটি করার জন্য সবার আগে কমপস্নায়েন্স ইসু্যতে নজর দিতে হবে। আর্থিক সংকট, লবণ সংকট কিংবা বাকি সমস্যাগুলো খুবই সাময়িক। কারখানা কমপস্নায়েন্স হলে এগুলো এমনিতেই দূর হয়ে যাবে।'

সরকারি সংস্থা বিসিককে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে মন্তব্য করে মাহিম বলেন, 'সিইটিপির সমস্যার সঙ্গে সামগ্রিক কমপস্নায়েন্স জড়িত। এটি ঠিক হলে নিজেদের প্রয়োজনেই কারখানা মালিকরা নিজেদের ত্রম্নটিগুলো সংশোধন করে নেবেন।'

জমি ইজারা ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে দোষারোপ

সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে ট্যানারি মালিকদের যে জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে, তার দলিল এখনও হস্তান্তর করা হয়নি বলে ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ।

বিসিক বলছে, মালিকদেরকে জমির মূল্য ৮০ শতাংশ মওকুফ করা হলেও তাদের অনেকেই বাকি ২০ শতাংশ মূল্য পরিশোধ করছেন না।

প্রতি বর্গফুট ৪৭১ টাকা দরে ট্যানারি মালিকদের জন্য জমির ইজারামূল্য নির্ধারণ করেছে বিসিক।

সমতা লেদার কমপেস্নক্সের নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ২০০৩ সালের পর চামড়া শিল্প নগরীর প্রকল্পের মেয়াদ ৮ বার বাড়ানো হয়েছে।

'প্রথমে প্রতি বর্গফুট জমির দাম ১৯১ টাকা ধরা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী আমাদের অনেকে মোট ১০ কিস্তিও পরিশোধ করেছিলাম। সম্প্রতি ভূমির মূল্য ৪৭১ টাকায় উন্নীত করে ৮০ শতাংশ মওকুফ করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে কোনো লিখিত চিঠি না পাওয়ায় টাকা পরিশোধের সুরাহা করা যাচ্ছে না।'

ভূমির ইজারা দলিল না পাওয়ার কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন অনেক ট্যানারি মালিক।

এদিকে বিসিকের চেয়ারম্যান বলেন, 'অনেকেই হয়তো ঋণ নিতে পারছেন না। তবে চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে বড় বড় ঋণখেলাপি রয়েছেন। তারা যদি ঋণ না পান, তাহলে খেলাপি হলেন কীভাবে?'

ক্রিসেন্ট লেদার নামের একটি প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে ৯১৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগ সম্প্রতি আলোচনায় আসে। গত ২২ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে শীর্ষ ঋণখেলাপিদের যে তালিকা প্রকাশ করেন, তাতে চামড়া শিল্পের বেশ কয়েকজন রয়েছেন।

কাঁচা চামড়ার সংকটেও দোষারোপ

গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়ার দাম কমতে থাকলেও এবারের মতো ঘটনা ঘটেনি। এবার ঈদের পর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মৌসুমি অনেক ব্যবসায়ী লাখ লাখ চামড়া রাস্তায় ফেলে দেন কিংবা পুঁতে ফেলেন।

এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয় আড়তদাররা ট্যানারিতে কাঁচা চামড়া বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিলে।

আড়তদারদের অভিযোগ, ট্যানারিগুলোর কাছে তাদের শত শত কোটি টাকা পাওনা, তা না পেলে তারা চামড়া বিক্রি করবেন না।

ট্যানারি মালিকদের কাছে সারাদেশের আড়তদারদের চারশ' কোটি টাকা পাওনা বলে দাবি করেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশেনের নেতারা।

এই কারণে পুঁজির অভাবে তারা কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি বলে দাবি করেন কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় আড়ত ঢাকার পোস্তার ব্যবসায়ীদের নেতা দেলোয়ার হোসেন।

এই পরিস্থিতিতে দেশের ট্যানারিগুলোর কাছে চামড়া বিক্রির পরিবর্তে বিদেশে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ চান আড়তদাররা, যে সুযোগ দেওয়ার ঘোষণাও দিয়ে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশেনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, বর্তমানে কাঁচা চামড়ার একমাত্র ক্রেতা ট্যানারি মালিকরা। গুটিকয়েক মানুষের কাছে তারা জিম্মি হয়ে আছেন।

'সরকার কাঁচা চামড়া বা ওয়েট বস্নু রপ্তানির সুযোগ উন্মুক্ত করলে এই খাতের সক্ষমতা বাড়বে। যখনই দেশে চামড়ার জোগান বেড়ে যাবে, তখনই বাইরে রপ্তানি করা হবে। এক্ষেত্রে কাঁচা চামড়ার প্রতিযোগিতামূলক বাজার থাকবে।'

অন্যদিকে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উল্টো অভিযোগ করেন, কিছু আড়তদার সংঘবদ্ধ হয়ে কম দামে চামড়া কিনছেন। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামেই তারা বিক্রি করছেন চামড়া।

তারা আরও বলেন, আড়তদাররা কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন, যা দেশের চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।

বাংলাদেশে চামড়াজাত দ্রব্য তৈরি করতে ট্যানারিগুলোতে চামড়ার যে চাহিদা, তার বড় অংশই মেটে ঈদুল আজহায় কোরবানি হওয়া পশু থেকে।

কোরবানির পশুর চামড়া মূলত কেনেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া যায় আড়তগুলোতে। সেখান থেকে চামড়া কেনেন ট্যানারি মালিকরা।

এবার নাজুক পরিস্থিতিতে রোববার সচিবালয়ে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

দীর্ঘ আলোচনার পর ট্যানারির কাছে চামড়া বিক্রি করতে আড়তদাররা রাজি হলেও মাঠ পর্যায়ে চামড়ার দাম বাড়েনি বলেই অভিযোগ রয়েছে।

প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

চামড়া খাতের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ব্যবসায়ী, বিসিক সব পক্ষের অবহেলা এবং সরকারের উদ্যোগহীনতাকে দায়ী করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রহমান।

ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করে তিনি বলেন, 'কিছু ব্যবসায়ী সংকটের সুযোগ নিয়ে এই খাতকে ম্যানিপুলেট করছেন। তারা নানারকম সুযোগ নিচ্ছেন, আবার অনেকে সুযোগ না পেয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। সম্প্রতি কাঁচা চামড়ার দাম কমে যাওয়ার মাধ্যমে আমরা সেটা প্রত্যক্ষ করেছি।'

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এখন সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে সবাইকে সমানভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। আর এই সমন্বয়ের কাজে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে।

তিনি বলেন, সরকার তৈরি পোশাক খাতকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছে, চামড়া শিল্পকেও সেভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তা দৃশ্যমাণ হতে হবে।

'বেশ কয়েক বছর ধরে সংকট দেখছি। ভ্যালু চেইনে কাঁচা চামড়া থেকে শুরু করে লেদার গুডসসহ সব সেক্টরে সমস্যা আছে। নীতি-নির্ধারকরা কতটুকু আন্তরিক সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাস্তব ক্ষেত্রে আন্তরিকতার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। প্রথমেই নীতি নির্ধারকদের আন্তরিকতা দেখাতে হবে।'

বিসিকের চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান বলেন, চামড়া খাতের উন্নয়নে বিসিকের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি ট্যানারি মালিকদের অ্যাসোসিয়েশনকেও তাদের দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকগুলো খুঁজে বের করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63258 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1