রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

ঈদের পর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আবার বেড়েছে

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
ঈদের পর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আবার বেড়েছে
ঈদের পর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আবার বেড়েছে

দেশের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ঈদের দিন কমলেও তার পরদিনই আবার বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের হাসপাতালগুলোতে ১৮৮০ জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১২০০।

এর ভিত্তিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, সাধারণ মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে 'সচেতন হয়ে ওঠায়' নতুন রোগীর সংখ্যা দ্রম্নত কমছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ৭৫৫ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ১১২৫ জন নতুন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৯৯ ও ৬০১ জন।

সব মিলিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৩৫১ জন; যাদের মধ্যে ৭ হাজার ৮৬৯ জন এখনো দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সরকার চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪০ জনের মৃতু্যর তথ্য নিশ্চিত করা হলেও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১২১ জনের তথ্য পেয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার বলেন, ঈদের পরে ক্রিটিকাল ডেঙ্গু রোগীর পাশাপাশি গায়ে অল্প জ্বর নিয়েও অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

আমরা যতই বলছি, যত পরামর্শ দিচ্ছি, যে আপনারা বাসাতেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা নেবেন, লক্ষণ দেখে তবেই হাসপাতালে আসবেন চিকিৎসা নিতে লোকেরা শুনছে না। তারা আতঙ্কিত হয়ে কখন কি হয়- এসব ভেবে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলছে, বুধবার সারা দেশে ১ হাজার ৫৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৫৯ জন, সোমবার ছিল ২ হাজার ৮৪১ জন।

আয়শা আক্তার বলেন, সেপ্টেম্বর মাস ও বৃষ্টির মৌসুম। আগামী সাত থেকে দশ দিন আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখব। ঈদের ছুটিতে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি না হলেও পরে আবার তা বাড়তে পারে। তবে আপাতত আমরা বলছি, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমছে।

তিনি জানান, স্বাস্থ্য বাতায়নের হটলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ জানতে পারবেন রোগীরা।

পাবনায় ডেঙ্গুতে

ছাত্রের মৃতু্য

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মুছাব্বির হোসেন মাহফুজ (১৮) নামের এক ছাত্রের মৃতু্য হয়েছে। ডেঙ্গুতে জেলায় প্রথম মৃতু্যর ঘটনা এটি। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৪৬ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

মাহফুজ সদর উপজেলার চক রামানন্দপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। তিনি এবার এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক রঞ্জন কুমার দত্ত বলেন, মাহফুজ ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজে সম্প্রতি ঢাকায় ছিলেন। সেখান থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পাবনায় ফেরেন। এরপর শরীরে প্রচন্ড খিঁচুনি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে তিনি মারা যান।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে এ পর্যন্ত ২৪৫ জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে ৪৬ জন চিকিৎসাধীন আছেন। মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত ১৭ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক রঞ্জন কুমার দত্ত বলেন, হাসপাতালে পৃথক ইউনিটে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীই ভালো হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

শিবচরে বৃদ্ধের মৃতু্য

মাদারীপুরের শিবচরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আব্দুল মজিদ (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃতু্য হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলে রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান। এ নিয়ে মাদারীপুরে ডেঙ্গু জ্বরে ছয়জনের মৃতু্য হলো।

বৃদ্ধ আব্দুল মজিদের স্বজনরা জানায়, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে আব্দুল মজিদ ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শরীরের রক্তের পস্নাটিলেট কমে ২০ হাজারে নেমেছিল। মঙ্গলবার ঢাকা থেকে শিবচরে সন্ধ্যার দিকে নিয়ে আসা হয়। এরপর রাত একটার দিকে তিনি মারা যান।

জানা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুর জেলায় ছয়জনের মৃতু্য হয়েছে। এদের মধ্যে কালকিনি ও শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজন মারা গেছেন। বাকিরা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যান।

ফরিদপুরে শিশুর মৃতু্য

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তানজিদ মোলস্না (৯) রামে এক শিশু মারা গেছে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি। শিশুটিকে গত রোববার ভর্তি করা হয়েছিল।

তানজিদ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক জাহিদ মোলস্নার ছেলে। তিন ভায়ের মধ্যে তানজিদ সবার বড়।

তানজিদ ফুপু রিনা বেগম জানান, তিন দিন জ্বরে ভোগার পর গত ১১ আগস্ট শিশুটিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় ডেঙ্গুর ধরা পড়ে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, তানজিদ মধুখালীতে নিজ বাড়ি থেকেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। তিনি বলেন, এ নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট তিনজন মারা গেল।

এর আগে গত ৯ আগস্ট ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান গৃহবধূ লিপি আক্তার (২৫)। লিপি আক্তার গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার ডোমরাকন্দি গ্রামের মাহাবুব হোসেনের স্ত্রী। এর আগে গত পহেলা আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেপাখোলা এলাকার শারমীন (২২) এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২০ জুলাই থেকে বুধবার পর্যন্ত মোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৭১ জন। এর মধ্যে তিনজনের মৃতু্য হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন ২৪৬ জন, ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৩১২ জন।

কামদা প্রসাদ সাহা আরও বলেন, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ১৫৬ জন ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে অবস্থানকালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল

সিআইডি সদস্যের

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) কর্মরত জামাল আহমেদের মৃতু্য হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়।

জামাল আহমেদ কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ মনিপুরঘাট এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম আব্দুল মান্নান। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে।

জামাল আহমেদ সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে প্রথমে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃতু্য হয়।

মঙ্গলবার বাদ জোহর কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ মনিপুরঘাট জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে