শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সজ্জিত পর্যটন স্পটগুলো

নতুনধারা
  ১১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড

পাহাড় এবং সমুদ্র বরাবরই আকর্ষণ করে ভ্রমণ পিপাসুদের। প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়া আর বুক উজার করা সৌন্দর্য মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয় জীবনের যাবতীয় হতাশা। এবারের ঈদে পাহাড়ি প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য পেতে আর উচ্ছ্বল ঝর্ণার শীতল স্পর্শ পেতে হলে সীতাকুন্ডই হলো প্রকৃত স্থান। বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে সীতাকুন্ডের পর্যটন স্পটগুলো। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর কয়েকদিন বাড়তি বন্ধই বা থাকে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত থাকায় ব্যাপক পর্যটক সীতাকুন্ডের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে পর্যটকদের বিনোদনে সীতাকুন্ডের পর্যটন এলাকাগুলো প্রস্তুত রয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানো জন্য নতুন সাজে সাজিয়েছে পর্যটন স্পটগুলো।

চন্দ্রনাথ পাহাড় : গিরিসৈকতের লীলাভূমি সীতাকুন্ডের মনোরম প্রাকৃতিক শোভাকে করে তুলেছে অপরূপ। ছোট-বড় পাহাড়ের শ্যামল বনানীর কোলে পাখিদের কিঁচির-মিচির, বিচিত্র সাপের আনাগোনা, বনহরিণের চঞ্চল ছোটাছুটি, বানরের লাফালাফি, ভুলস্নুকের বাদুরদুলা আর ভর সন্ধ্যায় শেয়ালের হুয়াক্কাহুয়া- এর শ্যামল পাহাড়ের প্রাকৃতিক শোভাকে করে তুলেছে নৈসর্গিক কাব্যময়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের শীর্ষে রয়েছে সনাতন সম্প্রদায়ের পুণ্যস্থান চন্দ্রনাথ শিব মন্দির। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ১২শ ফুট উপরে মোট ষোলশত সিঁড়ি বেয়ে শিব মন্দিরে উঠতে হয়। এই চন্দ্রনাথ পাহাড়কে ঘিরে রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক মঠ ও মন্দির। মন্দিরে যাওয়ার পূর্বে আঁকা-বাঁকা পথে চোখ পড়বে পাহাড়ে জন্মানো প্রাকৃতিক হৈমন্তি, লেনটোনা ও সোনালুর বাহারি ফুল অথবা দূরে সাদা কাঁশফুলের সমারোহ।

ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন : সীতাকুন্ড পৌরসদর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে গেলেই ফকিরহাট এলাকায় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। ১৯৯৬ একর ভূমির পার্কটি দুই অংশে বিভক্ত। এক হাজার একর জায়গায় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ৯৯৬ একর জায়গা জুড়ে ইকোপার্ক এলাকা। ৩টি পিকনিক স্পট, ৮টি বিশ্রাম ছাউনি সংবলিত ইকোপার্কে রয়েছে- পাহাড়ের মাঝে সৃজিত ১৪৫ প্রজাতির গাছগাছালি, দুলর্ভ কালো গোলাপসহ ৩৫ প্রকার গোলাপ এবং বিভিন্ন প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন ১০০টি অর্কিট আছে। এই পাহাড়ে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া মেছোবাঘ, ভালুক, মায়াহরিণ, বানর, হনুমান, শূকর, বনরুই, সজারু, বনমোরগ। দাঁড়াশ, গোখরা, লাউডগা, কালন্তি নামক সাপ।

\হবোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে দুইটি সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে দুটি জলপ্রপাত। শত ফুট ওপর থেকে অভিরাম গড়িয়ে পড়া ঝর্ণাতে একটু ভেজা বা উষ্ণতা আহরণের আনন্দ আলাদা। এখানে এসে পানির স্নিগ্ধ পরশ পাওয়ার লোভ সামলাতে পারেননি আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামও। তাইতো তিনি এই ঝর্ণার পরশ নিতে ১৯২৬ সালে ও ১৯২৯ সালে ছুটে এসেছিলেন। রচনা করেছেন তার বিখ্যাত গান 'আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই। ওই পাহাড়ের ঝর্ণা আমি উধাও হয়ে রইগো'। এখানে যেতে হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে বাস, মেক্সি, টেক্সিতে ৩৭ কি.মি. উত্তরে এলে কিংবা সীতাকুন্ড থেকে ২ কি.মি. দক্ষিণে ইকোপার্ক। বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা।

বারৈয়াঢালা সহস্রধারা জলপ্রপাত : চারদিকে সবুজ পাহাড়। মাঝখানে পাহাড় থেকে অবিরাম পড়ছে জলপ্রপাত। পাহাড়ের নিচে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় বারৈয়াঢালা সহস্রধারা জলপ্রপাতের অপরূপ এই দৃশ্য। সীতাকুন্ড সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে বারৈয়াঢালা পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড়ঝরা সহস্রধারা। তিনশ ফুট উঁচু একটি পর্বত শীর্ষ থেকে জলধারা শিলাময় স্থানে পতিত হয়। এত উঁচু পাহাড় থেকে এভাবে যুগ যুগ ধরে জলপ্রপাতের ধারাটি নিচে যাওয়ার ফলে এখানে বিশাল কুন্ড সৃষ্টি হয়েছে। উঁচু-নিচু দুর্গম টিলার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় সহস্রধারায়। জন্মলগ্ন থেকেই পাহাড়ি ঝর্ণাটির চারদিকে আছে বিরাট বিরাট পাথরের স্তূপ। ঝর্ণাধারার স্বচ্ছ পানি দিয়ে নানা জাতের সবজি ফলিয়েছে এলাকার চাষিরা। ঝর্ণাটি থেকে ৫০ গজ দূরে পুরাকীর্তি সজ্জিত লবণাক্ষ মন্দিরে রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ। এখানে আসার জন্য কোনো ফি লাগে না। কৈফিয়ত দিতে হয় না কাউকে। নিরাপত্তার জন্য দলবেঁধে এখানে আসা ভালো। প্রকৃতির ছায়া ছাড়া কোনো বিশ্রামাগার নেই।

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত : পর্যটকদের কাছে অন্যতম আর্কষণীয় স্থান বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রাম থেকে ২৮ কি. মি. উত্তরে বাঁশবাড়িয়া নামক বাজারের পশ্চিম দিকে গ্রামের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত আঁকা-বাঁকা পিচঢালা এক কি. মি. পথ অতিক্রম করলেই ধরা দিবে এই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত। এখানে এসে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ানো যাবে, আহরণ করা যাবে প্রকৃতির শোভা। উত্তরে কেওড়া ও ঝাউগাছের বনাঞ্চল, দক্ষিণে ঝাউবাগান ও নতুন জেগে উঠা বিশাল বালির মাঠ। দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ঝাউগাছ। আর্কিটেকচারার পদ্ধতিতে লাগানো এ ঝাউবাগান দর্শনার্থীদের দারুণ বিমোহিত করে। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে এ মাঠে দাঁড়িয়ে পশ্চিমে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে সমুদ্রের পানির হৃদয় ছোঁয়া ঝিকিমিকি, সন্দ্বীপ থেকে আসা লঞ্চ-স্টিমার কিংবা জেলেদের ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা।

ভাটিয়ারী-হাটহাজারী বাইপাস সড়ক ও কৃত্রিম হ্রদ : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত ভাটিয়ারী-হাটহাজারী সড়ক। বিস্তৃত পাহাড় অতিক্রমকারী সর্পিল এই সড়কের দুপাশেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন কৃত্রিম হ্রদ প্রাকৃতিক পরিবেশকে করে তুলেছে চমৎকার ও মনোমুগ্ধ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62215 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1