বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয়ার বক্তব্য না শুনে ব্যবস্থা নয়: প্রধানমন্ত্রীর বরাতে কাদের

ঢাকাসহ ৭ জেলায় ৮ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন
যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
প্রিয়া সাহা

প্রিয়া সাহা কেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন, সেই ব্যাখ্যা না শুনে তড়িঘড়ি কোনো আইনি ব্যবস্থায় না যেতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের সময়বদ্ধ পরিকল্পনার ব্রান্ডিং-বিষয়ক সেমিনার শেষে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়েছেন। তার নিজের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

তার ওই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় দেশের বিভিন্ন মহলে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি 'ক্ষুণ্নের উদ্দেশ্যেই' প্রিয়া সাহা 'বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগ' করেছেন। প্রিয়া সাহা 'রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ' করেছেন মন্তব্য করে আগের দিন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

কিন্তু রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দেশের বাইরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে এ ধরনের বক্তব্য (তিনি) কেন দিয়েছেন, সেটা দেশে ফিরে এলে আমার মনে হয় তারও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকা উচিত।

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী আমাদের লিডার, গত রাতে আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন, সেটা হচ্ছে- এখানে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রিয়া সাহা যা বলেছেন, সি শুড মেইক এ পাবলিক স্টেটমেন্ট। তিনি আসলে কী বলেছেন, কী বলতে চেয়েছেন তার একটি পাবলিক স্টেটমেন্ট করা উচিত, তারও আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগ থাকা উচিত। তার আগে কোনো প্রকার মামলা বা আইনি প্রক্রিয়া শুরু না করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।'

সরকারপ্রধানের এ নির্দেশনার কথা জানানোর আগেই রোববার সকালে ঢাকার হাকিম আদালতে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দুটি মামলার আবেদন করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলার আদালতেও অভিযোগ করা হচ্ছে।

তবে সরকারের অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা যায় না স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এসব মামলা গ্রহণ করা হবে না। অভিযোগের বিষয়ে প্রিয়া সাহার বক্তব্য জানার আগে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না।

এ বিষয়ে কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে মানা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, "মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর রোববার একটা মামলা করার কথা ছিল, তাকে আমি জানিয়েছি এ ধরনের মামলার প্রসিডিং শুরু না করতে এবং আইনমন্ত্রীর সাথেও এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। এছাড়া প্রিয়া সাহার ব্যক্তিগত বাড়িঘর সম্পদ, সেখানে যাতে প্রটেকটিভ মেজার থাকে, যথার্থ নিরাপত্তা থাকে সে স্টেপ নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মেসেজ জানিয়ে দিয়েছি।'

রোববার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমার বক্তব্য শুনেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমি তাকে বলেছি, হি ইজ ভেরি হ্যাপি আমার মনে হয়, হি ইজ ভেরি স্যাটিসফায়েড। আমাদের ভাবনার সঙ্গে পজিটিভলি রেসপন্স করেছে দেখেছি।'

বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রিয়া সাহার দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সে তার দেশে আসবে না কেন। এখানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রানা দাসগুপ্তের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই বক্তব্য তার ব্যক্তিগত কমেন্ট, এর সঙ্গে পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই।

কাদের বলেন, 'দেশে আসার অধিকার তার আছে, দেশে আসার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছি না বা কোনো লিগ্যাল প্রসিডিউরও শুরু করছি না।'

দেশে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, 'আমার মনে হয় তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশে আসতে পারেন, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া বা বাধা দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।'

ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার অভিযোগ করার পেছনে কোনো মদদ আছে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উসকানিমূলক এবং অসত্য, কাল্পনিক বক্তব্য। তিনি কেন দিলেন, আমরা তার কাছে জানতে চাইব, তিনি দেশে ফিরে আসুক তার কাছে জানতে চাইব, উদ্দেশ্য কী, মোটিভটা কী। এটা তো তার থেকে আমাদের পাবলিক স্টেটমেন্টটা জানা উচিত, আসার পরই কোনো স্টেপ নেয়ার বিষয়ে ভাবা যাবে।'

এর পেছনে কারা রয়েছে এ বিষয়ে সরকারের কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, এ মুহূর্তে আমরা এখনো সবকিছু পরিষ্কার না।

'শারি' নামে বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক প্রিয়া সাহা ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'দলিত কণ্ঠ' নামক একটি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক।

পিরোজপুরের মেয়ে প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় কুমার সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা। তাদের দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উদ্যোগে 'ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি' শীর্ষক দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে যান তিনি।

প্রিয়া সাহার নালিশ

'ছোট্ট ঘটনা': আইনমন্ত্রী

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের যে অভিযোগ প্রিয়া সাহা করেছেন, সেটিকে 'ছোট্ট ঘটনা' হিসেবে দেখছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি এটিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা মনে করেন না।

রোববার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন অবস্থান ব্যক্ত করেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ট্রাম্পকে যে তথ্যগুলো প্রিয়া সাহা দিয়েছেন তা সর্বৈব মিথ্যা, বিএনপি-জামায়াতের সময় ছাড়া বাংলাদেশে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। এটি তিনি ব্যক্তিগত ঈর্ষা চরিতার্থের জন্য করেছেন। এত ছোট্ট ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ হয়ে গেছে, তা মনে করি না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59294 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1