শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতি ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯ জন

পরিস্থিতি ভয়াবহ, তবে নিয়ন্ত্রণে আছে: মেয়র আতিকুল ইসলাম
যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে রোববার রাজধানীর উত্তরায়র্ যালি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন -যাযাদি

রাজধানীতে গত দশ দিনে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে প্রায় নয়জন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে এখনো নগর কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি বলেই অভিযোগ রাজধানীবাসীর। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জোর দিয়েই বলছে, নিয়ন্ত্রণে আছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। এদিকে এডিস ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর প্রতিটি কোণায়। তাই প্রতিনিয়তই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে বেড়ে চলছে ডেঙ্গু রোগী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে ২০ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ছয় হাজার ৪৫ জন। এর মধ্যে এক হাজার ৪৭৪ জন এখন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তবে আতঙ্কের বিষয় হলো, সর্বশেষ দশ দিনে এই হিসাব দুই হাজার ২৬৭ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২২৬ জনের বেশি। আর প্রতি ঘণ্টায় নয়জন।

এ ব্যাপারে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোস্তফা কামাল রউফ বলেন, এই মুহূর্তে এখানে ৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়াও প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪০-৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রামে এ মাসে (জুলাই) আটজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'ওই আটজনের মধ্যে তিন জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। পাঁচজনকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।'

আক্রান্তরা হলেন-আবদুল আজিজ (৫৫), মো. ফরিদ (৪৫), মো. হাসান (৪০), মেহেদি হাসান (২৭), বিবেক ঘোষ (২৫), আশরাফুল হক (২২), নুরুল রহিম (১৯) ও মো. নাজিম (১৮)। এদের মধ্যে আবদুল আজিজ, মেহেদি হাসান ও নাজিম সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।

এর আগে গত ১১ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ডেঙ্গু প্রতিরোধে চসিকের চিকিৎসকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ওই দিন তিনি বলেছিলেন, 'ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এটি চট্টগ্রাম নগরে যে হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই সময় থাকতে আমাদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।'

মেয়রের নির্দেশের পর ১৩ জুলাই ডেঙ্গু মশার বংশ বিস্তার রোধে নগরীতে মশা-মাছির উপদ্রব এবং মশার উৎপত্তি রোধে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ ছিটানোর প্রোগ্রাম শুরু করা হয়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম আকতার বলেন, 'ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরীতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ৪১টি ওয়ার্ডে মশার উৎপত্তি রোধে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।'

উত্তরায় ডিএনসিসিরর্ যালি

অন্যদিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে রাজধানীর উত্তরায়র্ যালির আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর পাশাপশি রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। রোববার সকালে উত্তরা ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে এর্ যালি শুরু হয়।

উত্তরা ক্লাব এবং রোটারি ক্লাবের সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত এর্ যালি উত্তরার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজউক কলেজে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় রাজউক কলেজ এবং আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।

র্

যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংসদ অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।

র্

যালি শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তারা যাই করেন না কেন কিছুই কাজে আসবে না, যদি তারা সচেতন না হন। সে জন্য সচেতনতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তারা এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ। তবে এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। এরপরও যদি কারও জ্বর হয় সেটি ডেঙ্গু কিনা তা দ্রম্নত শনাক্তের জন্য তারা হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে 'ডেঙ্গু কিট' দিচ্ছেন।

এ সময় মশার ওষুধ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আতিক বলেন, মশার ওষুধ একটি খুবই টেকনিক্যাল বিষয়। ইতোমধ্যে তারা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সরকারি বেসরকারি ৮টি সংস্থার প্রতিনিধি আছে সেখানে। তারা দ্রম্নত ওষুধ নির্ধারণ করে দেবেন।

সিটি করপোরেশনের মশক কর্মীরা ঠিকমতো ওষুধ দিচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ে নাগরিকদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, মশক কর্মীরা ঠিকমতো ওষুধ দিচ্ছে না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। এ জন্য কোন এলাকায় কবে কখন কোন মশক কর্মী ওষুধ দিবেন তা তারা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন। নাগরিকরা ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখবেন এবং যদি তারা (কর্মীরা) ঠিকমতো ওষুধ দিচ্ছে না বলে মনে হয় তাহলে ফোন দেবেন। নাগরিকদের মধ্যে থেকে সাত জন প্রতিনিধি থাকবে প্রতি ওয়ার্ডে, ওষুধ দেয়ার পর কর্মীদের অন্তত চারজন প্রতিনিধির স্বাক্ষর নিতে হবে।

এ সময় সাংসদ সাহারা খাতুন বলেন, দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। এটা সরকারের কাজেরই একটি অংশ। তবে শুধু সরকার না বরং মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের সচেতনতার অভাব আছে। সেখানে সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে।

র্

যালিতে উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ইমরুল আনোয়ার লিটনও বক্তব্য রাখেন।

বাসায় গিয়ে এডিস মশা

মারবে ডিএসসিসি

ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে বাসাবাড়িতে গিয়ে এডিস মশা ও তার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

তিনি ডেঙ্গুমুক্ত শহর গড়তে নগরবাসীর সহায়তার পাশাপাশি তাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'পক্ষকালব্যাপী বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করা হলো। আমাদের ৫৭টি ওয়ার্ডে পরিদর্শক, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য টিমের প্রতিনিধিরা যাবেন। যেসব বাসায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে, আমাদের প্রতিনিধিরা তা ধ্বংস করে দিয়ে আসবেন। পাশাপাশি সম্মানিত নাগরিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসবেন, কীভাবে এডিস মশার বংশ ধ্বংস করতে হয়। প্রতিদিন ৩০টি বাসায় কমপক্ষে ১৭১০টি এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করা হবে। সেই হিসাবে এই ১৫ দিনে ২৫ হাজার এডিস মশার বংশ ধ্বংস হবে।

রোববার রাজধানীর কাঁঠাল বাগানে বিশেষ এই কর্মসূচির উদ্বোধনকালে মেয়র এ কথা বলেন। এরপর আশপাশের কয়েকটি বাসায় গিয়ে এডিস মশার বংশ ধ্বংস করেন মেয়র।

সাঈদ খোকন বলেন, 'এডিস মশা রাস্তা কিংবা ডোবার নোংরা পানিতে জন্মে না। এডিস মশা বাসার ভেতরে, ছাদের আঙিনায়, পরিত্যক্ত টায়ার বা পানির ট্যাংকে স্বচ্ছ পানিতে বংশবিস্তার করে। ময়লাযুক্ত পানিতে বংশবিস্তার করে না। তাই এডিস মশা ধ্বংসে জনগণের সচেতনতা ও সতর্ক থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।'

তিনি বলেন, 'আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মশা যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। এডিস মশার প্রাদুর্ভাব যাতে না বাড়ে, সেজন্য নিজে সচেতন হোন এবং অন্যকেও সচেতন করুন। সবার প্রচেষ্টায় বর্তমানে বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে ডেঙ্গুমুক্ত শহর উপহার দিতে পারব।'

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59293 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1