শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সদস্য সংগ্রহ অভিযান

লক্ষ্য পূরণে তৃণমূল আওয়ামী লীগের আগাম তৎপরতা

আগামী অক্টোবরে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই সদস্য সংগ্রহের কাজ শেষ করতে চায় দলের হাইকমান্ড। কেন্দ্রের এমন কঠোর নির্দেশনায় বেশ তৎপর হয়েছেন নেতারা
ফয়সাল খান
  ১৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

আগামী ২১ জুলাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়া কথা। কিন্তু তার আগেই সদস্য সংগ্রহ শুরু করেছেন দলটির তৃণমূলের নেতারা। এর আগে কখনো সদস্য সংগ্রহ সফল করতে পারেনি দল, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই তৃণমূলকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবরে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই সদস্য সংগ্রহের কাজ শেষ করতে চায় দলের হাইকমান্ড। কেন্দ্রের এমন কঠোর নির্দেশনায় বেশ তৎপর হয়েছেন দলটির নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে বেশির ভাগ জেলা, মহনগর ও উপজেলা নেতারা সদস্য ফরমের বই সংগ্রহ করে বিরতণ শুরু করেছেন। সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ার পর আগের মতো হঠাৎ কার্যক্রম যেন গতিহীন না হয়, সে জন্য আগেভাগেই তৃণমূলে কঠোর নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৃণমূল নেতাদের অবহেলা ও কর্তব্যে ফাঁকি প্রমাণ হলে দল থেকে বহিষ্কার করার মতো সিদ্ধান্তও আসতে পারে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে সাফল্য পায়নি ক্ষমতাসীন দলটি। বেশ কয়েকবার এ কার্যক্রম শুরু করলেও কোনোবারই শেষ করতে পারেনি। মহা ধুমধামে উদ্বোধনের পরই নেতাকর্মীদের গা-ছাড়া ভাবের কারণে গতি হারিয়ে ফেলে। ফলে সদস্য সংগ্রহে কেন্দ্রের দেয়া লক্ষ্যমাত্রা একবারও পূরণ করতে পারেনি তৃণমূল।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নামে দলটি। এর পরের বছর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের জোয়ারে তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়। বেশকিছু সাংগঠনিক জেলা কেন্দ্র থেকে বই নিয়ে কাজ শুরু করলেও তা আর জমা দেয়নি।ওই অভিযানের মধ্য দিয়ে নতুন ভোটারসহ দুই কোটি নতুন সদস্য করার টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগের। এর আগে ২০১০ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও ওই বছরও তা বেশি দিন চলেনি। ওই বছর অনেক জেলায় কার্যক্রম ঠিকভাবে চলেনি। কিছু জেলায় দায়িত্বশীল নেতা ছাড়া আর কেউ দলীয় সদস্যপদ নবায়নও করেননি। তারও আগে ২০০২ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালায় আওয়ামী লীগ। তবে এবার সদস্য সংগ্রহ অভিযান সফল করতে আগেভাগেই মাঠে নেমেছেন তৃণমূলের নেতারা। ১৩ জুলাই ফরিদপুর শহরের বদরপুরে নিজ বাড়ি আফসানা মঞ্জিল প্রাঙ্গণে সদস্য ফরম পূরণ করে ফরিদপুরে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর কয়েক হাজার নেতাকর্মী দলের প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করেন। তাছাড়া অন্যান্য এলাকাতেও সদস্য সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ যায়যায়দিনকে বলেন, সদস্য সংগ্রহের ব্যাপারে কেন্দ্রের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। অনেক এলাকায় আগে থেকে ফরম দেয়া আছে। তাছাড়া খুব শিগগির নতুন ফরমও দেয়া হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাবিব হাসান বলেন, সদস্য সংগ্রহের ব্যাপারে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের আলোকে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও গুরুত্বের সঙ্গে এবার সদস্য সংগ্রহ করা হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতাদের মিটিং করতে বলা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু বলেন, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের জন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিটিং করেছেন। অনেক ওয়ার্ডে আগে থেকেই বইও দেয়া আছে। ২১ জুলাইয়ের পর থেকে একযোগে সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করবেন বলে জানন তিনি।

ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোলস্না সজল বলেন, এক-দেড় বছর আগে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছিল। নতুন সদস্য করার ব্যাপারে তখন থেকেই সতর্ক ছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের কাউকে যাতে আওয়ামী লীগের সদস্য ফরম পূরণ করানো না হয়- সে ব্যাপারে কর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে গঠনতন্ত্র মেনে। আওয়ামী লীগের আদর্শ ও নীতিতে বিশ্বাস করে- এমন তরুণ ও মেধাবীদের দলে জায়গা দেয়া হবে। প্রাধান্য দেয়া হবে বিগত নির্বাচনে যারা দলের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন তাদের। সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না। একই সঙ্গে সদস্য নবায়নের সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ও সুবিধা নিতে দলে ভেড়াদের বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীর পরিবার হলে সেখানে আমরা সদস্য সংগ্রহ করি না, তারা সদস্যপদ নিতে পারে না। আমাদের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের নীতিমালায় এমনটাই স্পষ্টভাবে বলা আছে। এখানে আমরা অটল। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক নতুন মুখ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী যারা অতীতে আওয়ামী লীগে আসেনি, তারাও এবার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। তবে মনে রাখবেন, আবেগ কিন্তু বেশি দিন থাকে না। আবেগের সঙ্গে চেতনা থাকতে হবে।'

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, 'তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি' স্স্নোগানের আলোকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শভিত্তিক আগামী প্রজন্ম গঠনে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহের সাংগঠনিক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরানোদের নবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতির তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই দলের নতুন সদস্য সংগ্রহের টার্গেট পূরণ করার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৫নং অনুচ্ছেদে তিন বছর পরপর একেবারে তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত পুরানো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। ৫ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিশ্বাস করে নির্ধারিত ফরমে প্রদত্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে ত্রিবার্ষিক ২০ টাকা চাঁদা প্রদান করে ১৮ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী-পুরুষ সদস্য হতে পারবে। তবে উপধারায় কারা সদস্য হতে পারবেন, তা-ও উলেস্নখ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<58478 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1