শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
নুসরাত হত্যা মামলা

পরোয়ানার ২০ দিন পর ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেপ্তার

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, ওসি মোয়াজ্জেমের দাড়ি-গোঁফ বড় ছিল। তাই প্রথমে তাকে তারা চিনতে পারেননি। কয়েকবারের চেষ্টায় তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৭ জুন ২০১৯, ০০:০০
মোয়াজ্জেম হোসেন

পুলিশ হয়েও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়িয়ে ২০ দিন আত্মগোপনে ছিলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার আসামি ফেনীর সোনাগাজী থানার আলোচিত সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম। উদ্দেশ্য ছিল, যে করেই হোক আদালত থেকে জামিন নেয়া। এ জন্য দাড়ি-গোঁফ বড় করে চেহারাটা পাল্টানোর চেষ্টাও করেন। এরপর রোববার কৌশলে আদালত চত্বরে প্রবেশও করেন তিনি। একজন আইনজীবীর মাধ্যমে মামলায় জামিনের আবেদনও করেন। তবে আগে থেকেই তাকে নজরদারিতে রেখেছিল পুলিশ। আদালত চত্বর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।

রোববার বিকালে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'হাইকোর্টের পাশ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে। ফেনীর পুলিশকে খবর দেয়া হয়েছে। যেহেতু মামলা তারা তদন্ত করছেন, তাই তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।'

সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় থানায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ভিডিও করে সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তুমুল সমালোচিত হন ওসি মোয়াজ্জেম। নুসরাত দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে নিহত হওয়ার পর ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হয়।

হাইকোর্টে ডিউটিরত ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, ওসি মোয়াজ্জেমের দাড়ি-গোঁফ বড় ছিল। তাই প্রথম তাকে তারা চিনতে পারেননি। কয়েকবারের চেষ্টায় তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

হাইকোর্টে সোনাগাজী থানার সাবেক এই ওসির সঙ্গে থাকা তার সাবেক গাড়িচালক মোহাম্মদ জাফর জানান, সকাল ১০টায় তারা অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের চেম্বারে যান। সেখান থেকে আদালতে গিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মামলাটির শুনানির জন্য আবেদন করেন। দুপুর ১টার দিকে আবেদনটিতে নম্বর পড়ে। নম্বর: ৪২৭৭০। এ সময় তাদের জানানো হয় সোমবার সকাল ১০টায় মামলাটির শুনানি হবে।

জাফর জানান, দুপুরের পর তিনি খাবার খেতে রেস্টুরেন্টে যান। ওই সময়ে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে আসে।

গ্রেপ্তারকারী দলে থাকা শাহবাগ থানার এক পুলিশ সদস্যও জানান, 'ওসি মোয়াজ্জেম হাইকোর্টে এক আইনজীবীর চেম্বারে গিয়েছিলেন। সেখানে ডিবির একটি দল তাকে অনুসরণ করে। তা টের পেয়ে সেখান থেকে কৌশলে বের হয়ে আসেন মোয়াজ্জেম। পরে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।'

প্রসঙ্গত, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন তিনি। দুর্বৃত্তদের আগুনে নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর 'নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে' ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইবু্যনালে মামলা দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে ঢাকার সাইবার ট্রাইবু্যনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এরপরও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এতদিন তিনি আত্মসমর্পণও করেননি।

পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, গত ৮ মে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয় ওসি মোয়াজ্জেমকে। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। গত ক'দিন থেকে তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের ঠেলাঠেলি চলছিল। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন তিনি।

এর আগে, গত ৬ এপ্রিল এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা নুসরাত জাহান রাফিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।

মোয়াজ্জেমের শাস্তি

হোক : নুসরাতের মা

এদিকে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তারের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, '(ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তারে আমরা সন্তুষ্ট। আমি চাই, তিনি যতটুকু অপরাধ করেছেন তার সে পরিমাণ শাস্তি হোক। নুসরাতের ভিডিও ধারণ ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারসহ নানা অপ্রচারের সঙ্গে আরও কেউ যদি জড়িত থাকে তাদেরও আইনের আওতায় এনে দ্রম্নত মামলার বিচার করা হোক।'

তিনি বলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনিও স্বজন হারানোর ব্যথা বোঝেন। নুসরাতকে হারিয়ে আমি যে অসহনীয় কষ্ট ও দুঃখের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, আজকে নুসরাত হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পাশাপাশি ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও সেই কষ্ট ভোলার চেষ্টা করতে পারব।'

নুসরাত হত্যা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, 'আমার বোন তার প্রতি করা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সেই দিন থানায় গিয়েছিল মাকে সঙ্গে নিয়ে। সেই দিন একজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়ে সোনাগাজী থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গিয়ে আরেকবার পুলিশের হাতে নির্যাতিত হয় যা দেশবাসী দেখেছে।

ব্যারিস্টার সুমন (মামলার আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন) এই মামলা করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ওসি মোয়াজ্জেমকে তিনি এই মামলায় আসামি করায় তিনি গ্রেপ্তার হলেন। আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি। কিন্তু ওই দিন ওইখানে আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। সেই বক্তব্য নেয়ার সময় তাদের কার, কী ভূমিকা ছিল আশা করি তা এই মামলার তদন্তে উঠে আসবে।'

তিনি বলেন, 'সরকার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করছে। আজকে নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা খুশি হয়েছি তবে শান্তি পাবো তখন, যখন আদালতে ন্যায়বিচার পাবো।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53896 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1