শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রস্তাবিত বাজেট

বেতন আর সুদেই চলে যাবে দেড় লাখ কোটি টাকা

বাজেটের সবচেয়ে বেশি অর্থ ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা চলে যাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। যা মোট রাজস্ব বাজেটের ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

শেখ হাসিনা সরকারের এবারের বাজেটে প্রস্তাবিত ব্যয়ের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকাই চলে যাবে ঋণের সুদ পরিশোধ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। এই অঙ্ক রাজস্ব বাজেটের প্রায় অর্ধেক।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। এরমধ্যে রাজস্ব বাজেটের (পরিচালন বাজেট) পরিমাণ ৩ লাখ ১১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটের এই ব্যয়ের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট রাজস্ব বাজেটের এক লাখ ৪৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন এবং সুদ মেটাতে।

বাজেটের সবচেয়ে বেশি অর্থ ৬০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা চলে যাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। যা মোট রাজস্ব বাজেটের ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

সুদ পরিশোধে খরচ হবে ৫৭ হাজার ৬৮ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। আর অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন বাবদ ব্যয় হবে ২৭ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এই অঙ্ক ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৫৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা অবশ্য কিছুটা কমিয়ে ৫৭ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছেন অর্থমন্ত্রী।

সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৫১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে কমে ৪৮ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা হয়েছে। পেনশনে মূল বাজেটের ২৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকা থেকে কিছুটা বেড়ে ২৬ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা হয়েছে।

নতুন বাজেটে এ খাতে বেশি অর্থ ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতি গবেষক জায়েদ বখত বলেন, সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। সেই ঋণের সুদ পরিশোধের জন্যই অর্থমন্ত্রীকে এ খাতে বেশি বরাদ্দ রাখতে হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, মুনাফার হার বেশি হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হচ্ছে। চলতি বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। বিক্রি বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে সেই লক্ষ্য ৪৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

তবে বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে নতুন বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উৎসে কর বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। এতদিন ৫ শতাংশ হারে মুনাফা কাটা হতো। ১ জুলাই থেকে কাটা হবে ১০ শতাংশ।

মূল বাজেটে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২৯ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেটে বেতন ও ভাতা বাবদ যে বরাদ্দ রেখেছেন তারমধ্যে ৮ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা কর্মকর্তাদের বেতনে খরচ করবেন। ২৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ করবেন কর্মচারীদের বেতনের জন্য।

আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাতার জন্য রেখেছেন ২৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

সুদ পরিশোধের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য রাখা হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।

অন্যান্য ব্যয়: সরবরাহ ও সেবা খাতের খরচের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৩ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ নতুন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ করাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। প্রণোদনায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। গত ২০১৭-১৮ এবং বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রণোদনার জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না।

ঋণের চিত্র: নতুন বাজেটে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন, সেখানে সামগ্রিক ঘাটতি দেখানো হয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকা।

ঘাটতির এই পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

অবশ্য বাজেটে চার হাজার ১৬৮ কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশার কথা বলেছেন মুহিত। ওই অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি থাকবে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ।

এই বিশাল ঘাটতি মেটাতে সরকারকে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে। ঋণের অর্থের এই পরিমাণ বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ঋণের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি।

অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনা করেছেন, এবার বৈদেশিক উৎস থেকে ৭৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। সেখান থেকে ১১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা আগের ঋণের কিস্তি পরিশোধে খরচ হবে। ফলে সরকারের নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা।

ঘাটতির বাকি ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা নেয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ৪৮ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার কোটি টাকা অন্যান্য উৎস থেকে।

বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৪৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ অর্থবছরের মূল বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা নিয়ে ঘাটতি মেটানোর কথা বলা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

বিদায়ী অর্থবছরে মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য ছিল।

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমায় এ লক্ষ্য ১৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা নেয়ার কথা বলা হয় সংশোধিত বাজেটে।

আর বিদায়ী অর্থবছর জুড়ে বেশি হারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাত থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ধার করার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে এক লাখ ২২ হাজার ১৪২ কোটি টাকা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53831 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1