রমজান মাসসহ সারাবছর দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারি উদ্যোগে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করলেও গ্রামের মানুষ এই সুবিধা পাচ্ছেন না। রাজধানী, বিভাগীয় ও জেলা শহর ছাড়া গুটিকয়েক উপজেলায় ডিলারদের মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করছে সংস্থাটি। তবে গ্রামীণ অঞ্চলে ডিলার না থাকায় নিম্ন আয়ের বিশাল জনগোষ্ঠী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্দিষ্ট ডিলারদের মাধ্যমে সারাবছর বাজার দরের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করে থাকে সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। রোজা ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা ট্রাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কিছুটা কম দামে পণ্য ক্রয় করে কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। তবে বিভিন্ন সময় সরকারি চাকরিজীবীসহ মধ্যবিত্তদেরও টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য ক্রয় করতে দেখা গেছে। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সরকারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাস ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারাদেশে ১৮৭টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে ডিলারদের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৫টি ও চট্টগ্রামে ১০টি ট্রাক ছাড়াও প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ৫টি ও জেলা শহরে ২টি করে ট্রাকে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন একটি ট্রাকে ৪০০ থেকে ৫০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি চিনি, ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি মশুর ডাল, ছোলা ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি, ৩০ থেকে ৫০ কেজি খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে।
অন্য সময় খোলা ট্রাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব দ্রব্য বিক্রি করা হয় তাও শহরের গন্ডিতেই আবদ্ধ থাকে। 'দোকান সেল' নামে নিয়মিত পণ্য বিক্রির করার জন্য ডিলার নিয়োগ দেয় সংস্থাটি। তাদের এসব ডিলার বেশির ভাগই শহর কেন্দ্রিক ব্যবসায় করেন বলে জানা গেছে। ফলে গ্রামের কম আয়ের ও দরিদ্র লোকজন বেশি দাম দিয়ে পণ্য ক্রয় করছে। সরকারের ন্যায্য মূলে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম থেকে কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না গ্রামের বাসিন্দারা।
তবে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, টিসিবি সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করে না। ডিলারদের মাধ্যমে এ কাজ করা হয়। কোনো উপজেলায় ডিলার পাওয়া গেলে সেখানেও পণ্য বিক্রি করা হয়। কিন্তু ডিলাররা বেশির ভাগ শহর কেন্দ্রিক হওয়ায় গ্রামে এই কার্যক্রম পৌঁছায়নি।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে ভোক্তাদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন- কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ যায়যায়দিনকে বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামে দরিদ্র মানুষ বেশি। তাদের উপার্জনও কম। মূলত যাদের জন্য সরকার এই কার্যক্রমটি পরিচালনা করছে তারাই এই সুবিধা পাচ্ছে না। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও টিসিবির কার্যক্রম চালু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
টিসিবির ঢাকা অঞ্চলের উপ-ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা মিশকাতুল আলম যায়যায়দিনকে বলেন, টিসিবির পণ্য সব মানুষই পেতে পারেন। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ডিলার থাকতে হবে। প্রত্যন্ত বা সীমান্তবর্তী কোনো এলাকা থেকে সব শর্ত পূরণ করে কেউ ডিলারশিপ নিতে এলে তাকেও দেয়া হবে। দেশের কোনো অঞ্চলে টিসিবির কার্যক্রম চালাতে বাধা নেই। পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতাদের চাহিদাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। গ্রাম বা শহর বলে কোনো বৈষম্য করা হয় না বলে জনান তিনি।
এদিকে, বিশেষ পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করাসহ খোলা ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি নিয়ে ক্রেতাদের নানা অভিযোগও রয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, অনেক জায়গায় খোলা ট্রাক নির্ধারিত স্থানে সময়মতো উপস্থিত থাকছে না। পণ্য শেষ না হওয়ার আগেই সব গুটিয়ে চলে যাচ্ছে কেউ কেউ। গত ১৬ মে সকালে টিসিবির ঢাকা অফিস থেকে ট্রাক ভর্তি পণ্য নিয়ে যান ডিলার আবুল খায়ের। সারাদিন বনশ্রী এলাকায় পণ্য বিক্রি কারার কথা থাকলেও তা করেননি। ক্রেতাদের ধোঁকা দিয়ে পণ্য মুজদ করেন ডিলার আবুল খায়ের। তা ছাড়া দিনব্যাপী বিক্রয় করার কথা থাকলেও ওই ডিলাররা দুপুর দেড়টা থেকে দুটার পরে পণ্য বিক্রি না করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি দুর্নীতি দম কমিশনে (দুদক) ভোক্তাদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি। এ সময় ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ না করলে তার ডিলারশিপ বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তকে সতর্ক করা হয়। তা ছাড়া টিসিবির নিজস্ব নজরদারিতেও ডিলারদের ছোটখাটো অনিয়ম ধরা পরেছে। তাদের প্রথমিকভাবে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।