ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করে যারা দেশ ছেড়েছেন; ঋণের টাকায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসী জীবনযাপন করছেন; আইনি ফাঁকফোকরে বেরিয়ে 'ইচ্ছাকৃত' ঋণখেলাপি হয়েছেন; বছরের পর বছর খেলাপি হয়েও দাপিয়ে বেরিয়েছেন; তাদের রিরুদ্ধে মামলা করেও অর্থ আদায় করা যাচ্ছে না। তাদের আবার নানা সুবিধাসহ নতুন করে ঋণ দেয়ার কথাও বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত বৃহস্পতিবার জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ঋণখেলাপিদের পুনঃতফসিল পরবর্তীতে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নতুন করে ঋণ প্রদান করা যাবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে তাদের প্রচলিত ঋণ নীতিমালা অনুসরণ করবে। নতুনভাবে প্রদত্ত ঋণ যথানিয়মে পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রদত্ত সার্কুলারের আওতায় দেয়া সকল সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণখেলাপিরা ধৈর্যের পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে ঋণখেলাপিদের বিশাল ছাড় দেয়া হয়েছে। কোনো তিরস্কার না, কোনো শাস্তিও না, বরং অনেক বড় পুরস্কার। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ, ২ শতাংশ এককালীন কিস্তি, আর বাকি টাকা ১০ বছরে পরিশোধ। কেবল তা-ই নয়, তাঁরা নতুন ঋণও পাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার কোনোভাবেই ব্যাখ্যাযোগ্য নয়। তবে একভাবে বলা যায়, এ দেশের ঋণখেলাপিরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ফেলেছে। এ ধরনের ঘটনা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। পুরোপুরি ঋণখেলাপিদের বোঝাটা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ঋণখেলাপিদের অপরাধের সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। এখন আবার তারা ঋণ নেবেন আবার খেলাপি হবেন। তারা জেনে গেছেন, বুঝে গেছেন যে, ঋণখেলাপি হলে সুবিধা পাওয়া যায়।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, যারা ঋণখেলাপি হচ্ছেন তাদের অনেকেই মনে করছেন যে সময়মতো ঋণের টাকা ফেরত না দিলেও চলবে। সত্যিকার অর্থে ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে তারা ঋণখেলাপি হচ্ছেন কি না সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।