মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অনুতাপহীন তওবা উপহাসের শামিল

যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ মে ২০১৯, ০০:০০

'তওবা' আরবি শব্দ। যার অর্থ ফিরে আসা। কোরআন এবং হাদিসে শব্দটি আলস্নাহর নিষেধকৃত বিষয়সমূহ ত্যাগ করা ও তার আদেশকৃত বিষয়সমূহর দিকে ফিরে আসা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। ইসলামী ধর্মতত্ত্বে শব্দটি নিজের কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, এবং তা পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্পকে বোঝায়। যেহেতু কোরআন এবং হাদিস কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়টি বারবার উলেস্নখ ও গুরুত্বারোপ করেছে। সুতরাং ইসলামে তওবার গুরুত্ব অনেক। তওবার তাৎপর্য হলো আন্তরিক অনুশোচনা।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। যেকোনো মানুষই ভুল করতে পারে; শুধুমাত্র আলস্নাহই ভুলের ঊর্ধ্বে। তাই মানুষকে ক্ষমা করার এখতিয়ার শুধু আলস্নাহরই রয়েছে। ইসলামে মানুষের অন্যের অনুশোচনা শোনার ও ক্ষমা ঘোষণা দেয়ার বিষয়টি নিষিদ্ধ। অনুরূপ, আলস্নাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট তওবা করা নিষিদ্ধ। কোরআনে আলস্নাহ বলেন, 'আলস্নাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের ডাক, তারা তোমাদের মতোই বান্দা। সুরা আরাফ (০৭), আয়াত ১৯৪।

ইসলামি শরিয়ত মতে, বান্দা তওবা করলে আলস্নাহ তা গ্রহণ করেন। তবে অবশ্য সেটা আন্তরিক হতে হবে। আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে, যদি কোনো ব্যক্তি তার কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত না হয় বা তা

পরিত্যাগের ইচ্ছা না করে, তাহলে তার মৌখিক তওবা উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়। মৌখিক তওবা প্রকৃত তওবা নয়। আন্তরিক তওবার কিছু শর্ত রয়েছে। হজরত আলী (রা.) কে তওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তওবা হলো ছয়টি বিষয়ের সমষ্টি। প্রথমত, নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। দ্বিতীয়ত, অনাদায়ি ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদতসমূহ আদায় করা। তৃতীয়ত, অন্যের সম্পত্তি ও অধিকার নষ্ট করে থাকলে তা ফেরত দেয়া। চতুর্থত, শারীরিক বা মৌখিকভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা চওয়া। পঞ্চমত, ভবিষ্যতে পাপকাজ পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্প করা। ষষ্ঠ, আলস্নাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পণ করা।

ইসলামি শরিয়ত মতে আন্তরিক তওবা আলস্নাহ গ্রহণ করে থাকেন। আলস্নাহ বলেন, 'নিশ্চই তিনি মহাক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু। [সুরা বাকারা (০২), আয়াত ৩৭]

কোরআন শরিফের বিভিন্ন আয়াতে আলস্নাহ নিজেকে দয়ালু, মহানুভব ও ক্ষমাশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সুরা হাসরের ২২ নং আয়াতে তিনি বলেন, 'তিনি আলস্নাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন। তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা।' প্রত্যেক সুরার শুরুতে 'পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আলস্নাহ্‌?র নামে শুরু করছি' -আয়াতটির ব্যবহার এই সত্যকে আরও জোরালো করেছে। কোরআন এবং হাদিসের বর্ণনা মতে, আলস্নাহতালার সর্বব্যাপী রহমতে যেকোনো বড় গুনাহও মাফ হতে পারে, শর্ত থাকে যে গুনাহগার ব্যক্তি আন্তরিক তওবা করেছে। আলস্নাহ বলেন, 'নিশ্চই আলস্নাহ তার সাথে শিরক করার আপরাধ ক্ষমা করবেন না; এটা ছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন। [সুরা নিসা (০৪), আয়াত ৪৮]

সুতরাং, ইসলামে আলস্নাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া নিষিদ্ধ। আলস্নাহ বলেন, 'বলুন: হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আলস্নাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আলস্নাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করেন; তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা যুমার (৩৯), আয়াত ৫৩]

ইসলামি শরিয়তে তওবা একটি পারস্পরিক বিষয়। একজন ব্যক্তির উচিত তার ভুল বুঝতে পারা ও তা পরিত্যাগ করা। যার ওপর আলস্নাহ ক্ষমার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। ইসলাম প্রত্যাশা করে মানুষ যেন তার ভুলসমূহ বুঝতে পারে এবং আলস্নাহর নিকট ক্ষমা চায়।

মহানবী (স.) বলেন, 'একজন ঈমানদার ব্যক্তির নিকট তার পাপ হলো একটি পাহাড়ের মতো, যার নিচে সে বসে রয়েছে এবং সে আশঙ্কা করে যে সেটি তার ওপর পতিত হতে পারে। অন্যদিকে একজন দুষ্ট ব্যক্তি তার পাপকে উড়ন্ত মাছির মতো মনে করে এবং সেটা অবজ্ঞা করে। সহিহ বুখারি ৮:৭৫:৩২০। হাদিসে মহানবী (স.) মানুষকে আলস্নাহর নিকট ক্ষমা চওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।

ইসলামি শরিয়তে তওবা দ্বারা সেসকল গোনাহ মাফ হয় যা ব্যক্তির হক সম্পর্কিত নয়। ব্যক্তির হক সম্পর্কিত গোনাহ যেমন কারও ওপর জুলুম, অর্থ আত্মসাৎ, মিথ্যা অপবাদ দেয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট ক্ষমা চওয়া জরুরি। মৃতু্য-কষ্ট শুরু হওয়া এবং আজাবের ফেরেশতা দর্শনের পর তওবা কবুল হয় না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50445 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1