শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে হতাশা বাড়ছে বিএনপিতে

হাসান মোলস্না
  ২০ মে ২০১৯, ০০:০০

বিএনপির এমপিদের সংসদে শপথ নেয়াকে কেন্দ্র করে খালেদা মুক্তির আলোচনা দলের তৃণমূলে আশা জানিয়েছিল। প্রত্যাখ্যান করা নির্বাচন বৈধতার দেয়ার বিনিময়ে শীর্ষ নেত্রীর মুক্তিকে তারা বড় করে দেখতে দ্বিধাবোধ করেনি। কিন্তু শপথের পরও খালেদা জিয়ার মুক্তির কোন সম্ভাবনা না দেখার পাশাপাশি তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়ার প্রস্তুতি দেখে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। দলের প্রায় প্রতিটি নেতাকর্মী এখন জানতে চান, কী করলে মুক্তি মিলবে খালেদা জিয়ার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি গত ১০ বছরে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর গত বছর ফেব্রম্নয়ারিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দন্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বলতে গেলে কোন সিদ্ধান্তই ঠিক করে নিতে পারেনি দলটি। রাষ্ট্র পরিচালনায় দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা ও নেতা সমৃদ্ধ দল বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে নাম ও ব্যানার সর্বস্ব দলের দারস্থ হতে হয়েছে। তবুও কার্যকর কোনো ফল আসেনি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ১০ বছরের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। একের পর এক এলোমেলো সিদ্ধান্তের কারণে দল বলতে গেলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যও নেই সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত। সকালে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তির সিদ্ধান্ত হলে বিকালে হচ্ছে কৌশলের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে দলের প্রায় অধিকাংশ নেতাকর্মীর মতামত উপক্ষো করে হাইকমান্ডের একক সিদ্ধান্তে সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্তের পরও খালেদার মুক্তির কোনো লক্ষণ না দেখে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে। এর মধ্যে সম্প্রতি খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি দেখে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জানতে চাচ্ছেন কী করছেন তারা? কী হচ্ছে বিএনপিতে?

সূত্রমতে, সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় দলের নীতিনির্ধারকরাও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিষয়ে স্থিরভাবে কিছু বলতে পারছেন না। শুধু সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। এবিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের একটি অংশ ষড়যন্ত্র করছে। তাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জে নেয়া হচ্ছে।

অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আন্দোলন ছাড়া অন্য কিছু করে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবেনা। কারণ জামিনে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে কোনো বাধা নেই, একমাত্র বাধা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরেক স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দলের সবাই বলছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কী করা দরকার। এ নিয়ে বহু আলোচনাও হচ্ছে। কিন্তু আসলে কিছুই করা হচ্ছে না। কী করা দরকার, এ বিষয়ে কারও বুদ্ধির অভাব নেই। তবে সেই বুদ্ধির কাজটা করার মতো কোনো উদ্যোগ নেই!

সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো সিদ্ধান্তে বিএনপির স্থির থাকতে না পারার কারণ যোগ্য নেতৃত্বের সংকট। তারা মনে করেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাস এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো নেতৃত্ব দলে অনুপস্থিত। যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালিত হচ্ছে বলা হলেও এতে কেউ বিচক্ষণতা দেখাতে পারছেন না। এ কারণে গত এক বছরে নীতিনির্ধারণী বিষয়ে দলটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত খুব কমই নিতে পেরেছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত বিএনপিকে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপিতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। কেউ কাউকে মানছে না। কোনো নেতাই সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে দায়িত্ব নিচ্ছে না। শপথ গ্রহণের এক সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকে সব দায়-দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে।

দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, সংসদে যাওয়ার বিনিমিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে এমন তথ্যই তিনি শুনেছেন। শপথ নেয়া হলো কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তির তো কোনো লক্ষণ দেখছেন না। এখন দলের আলোচনা হচ্ছে, মির্জা ফখরুলের শপথ না নেয়া আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিলে মুক্তি মিলতে পারে খালেদা জিয়ার। এজন্য যে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল এখন সেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। দলের সিনিয়র যেসব নেতা শপথের বিরুদ্ধে ছিলেন তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এখন সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী দিতে এবং উপনির্বাচনে অংশ নিতে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এসবের পরও কি খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে কি-না তা নিয়ে কর্মীরা দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে জানতে চান। শপথ এবং পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইঙ্গিতের পরও খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষণ না দেখে দলের অনেকে আবারও প্যারোল নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন।

বিএনপির মধ্য সারির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, যে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা হলো সেই নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার চেয়েও প্যারোলে মুক্তি নেয়া বেশি অসম্মানজনক কি-না তা এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে।

তবে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে দল ও খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে শনিবারও দলের অবস্থান জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, প্যারোলের কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই তাদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50280 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1