বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমার মেয়েকে নিয়ে সিনেমা বানাবেন না: নুসরাতের মা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০
মায়ের সঙ্গে নুসরাত জাহান -ফাইল ছবি

ফেনীর সোনাগাজীতে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আক্তার বলেছেন, 'অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আমার মেয়ে আলস্নাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন। নুসরাত শহীদ হয়ে গোটা বিশ্বের মানুষের মনে দাগ কেটেছে। সে কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছে। সিনেমা নাটক বানিয়ে তাকে দয়া করে দোজখে নিবেন না।'

তিনি বলেন, 'শুনছি কেউ নাকি, আমার মেয়েকে নিয়ে সিনেমা ও নাটক বানানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। দয়া করে আমার মেয়েকে নিয়ে কেউ সিনেমা বা নাটক বানাবেন না। আমার মেয়ে একটি নিষ্পাপ ফুল। এই ফুলকে কষ্ট দিবেন না। আমরা অর্থের দিক দিয়ে গরিব হতে পারি; কিন্তু ধর্মের দিক দিয়ে আমরা গরিব নই। আমার মেয়েকে প্রথমে নূরানী মাদ্রাসায়, পরে মহিলা মাদ্রাসায় এবং সেখান থেকে দাখিল পাস করার পর সোনাগাজী মাদ্রাসায় ভর্তি করাই। নুসরাতের বাপ, দাদা, চাচা ও ভাই সবাই আলেম। দুনিয়াতে কিছু না পেলেও আখেরাতে আমার মেয়ে শহীদি মর্যাদা পাবে।'

নুসরাতের পরিবারটি কেমন আছে জানতে গেলে শুক্রবার বিকালে নুসরাত জাহান রাফির মা এই প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, 'আমরা ভালো আছি। আমরা জীবিত অবস্থায় নুসরাতের খুনিদের বিচার দেখে যেতে চাই। তাহলে আমার মেয়েটির আত্মা শান্তি পাবে।'

উলেস্নখ্য, নিহত নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। এই ব্যপারে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে পাশের একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়।

কয়েক দিন হাসপাতালে মৃতু্যর সঙ্গে লড়াই করে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে গত ৮ এপ্রিল ৮ জনের নাম উলেস্নখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ১০ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই ২২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার জানিয়েছেন ২৭ মের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট প্রদান করা হবে। এ ঘটনায় ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পিবিআই। নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগের পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইকবাল আহম্মদ ও মোহাম্মদ ইউছুপকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও ইংরেজি প্রভাষক আবছার উদ্দিনের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50118 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1