শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে কিশোরের চোখ তুলে নিল চাচাত ভাই

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মে ২০১৯, ০০:০০
ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মিলন হোসেন

কিছু টাকা পাওয়ার আশায় চাচাতো ভাই মামুনের সঙ্গে ডিস লাইনের কাজ করত মিলন হোসেন (১৪) নামে এক কিশোর।

মিলনকে দিয়ে কাজ করানো হতো ঠিকই, কিন্তু তার চাচাতো ভাই মামুন কোনো টাকা দিতেন না। কিশোর মিলন পাওনা টাকা দাবি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে যান মামুন। একপর্যায়ে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে মিলনের দুই চোখ উপড়ে ফেলে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে। চিরতরের দৃষ্টি হারা হয় মিলন।

মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে থাকা মিলনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারাও একই অভিযোগ করেন।

ঢামেক হাসপাতাল তৃতীয় তলায় চক্ষুবিভাগের ৩০২ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে মিলন।

চিরতরে দৃষ্টি হারা মিলনরা দু'বোন এক ভাই। সে সবার ছোট। টাঙ্গাইল মির্জাপুর গড়াই রাজাবাড়ী বানিয়ারচালা গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। মিলন পরিবারের সঙ্গেই থাকে। মিলনের বাবা একটি কারখানায় কাজ করেন।

গিয়াস উদ্দিন ও তার বড় মেয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) বিকেল ৫টার দিকে তার চাচাতো ভাই মামুন ও তাদের এক প্রতিবেশী আল আমিন মিলনকে ডেকে নিয়ে যায় ওই গ্রামেরই পাশে বানিজ মার্কেট ও ক্যাডেট কলেজ এলাকার নিউটেক্স কারখানার পাশে একটি ছাদে। সেখানে মামুন, আল আমিন দু'জন মিলে তার ভাইয়ের (মিলন) স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে প্রথম ডান চোখ তুলে ফেলে। এ সময় মিলন জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পরে তার বাম চোখ তুলে ফেলে।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, তার ভাই ও ভাইপোদের সঙ্গে তাদের তেমন কোনো বিরোধ নেই। পৈতৃক সম্পত্তি তার আগেই ভাগ করে নিয়েছে। যার যার মতো সম্পত্তিতে তারা ঘর উঠিয়ে থাকেন। তবুও মাঝে মধ্যে টুকটাক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে ঝগড়া হতো। ঝগড়ার একপর্যায়ে ভাইয়েরা বলেছিল যে তোর একদিন চোখ তুলে ফেলব। সেই চোখ তুলল, তবে তার না তার সন্তানের।

মিলন নিজেই বলে, 'মামুনের সঙ্গে ডিসের সংযোগ দেয়ার কাজ করতাম। কাজ করার টাকা চাইতাম কিন্তু তিনি দিতেন না। এই টাকার কথা আমি একজনকে বললে সেই লোক মামুনকে বলে দেন। এতেই মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ডান চোখটা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে উঠিয়ে ফেলে। এরপরে কী হয়েছে আমি আর কিছুই বলতে পারি না, আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে হাসপাতালের বিছানায় আমার জ্ঞান ফিরলে দু'চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পারি না। তখন আমার বোন ও বাবা জানায় তুমি হাসপাতালে এসেছ তোমার চোখের চিকিৎসা চলছে।'

সে আরও বলে, 'কী কারণে এতো ক্ষিপ্ত হয়ে মামুন ভাই আমার চোখ উঠিয়ে ফেললেন তা এখনো বুঝতে পারছি না। শুধু টাকার জন্য মামুন ভাই এ কাজ করেছেন তাও বুঝতে পারছি না।'

মিলনের বড় বোন নাসরিন আক্তার বলেন, তার ভাই ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তাদের সংসার খুব টানাটানির। তাই ভাই কাজে লেগে যায় মামুনের সঙ্গে। চাচাদের সঙ্গে সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকত। কারণ তারা সবাই পাশাপাশি থাকেন। জায়গা ভাগ হলো সবার জায়গা পাশাপাশি। কয়েক বছর আগে তার ছোট বোনের বিয়ে হয়। সেই বিয়েতেও তার চাচা ও চাচাতো ভাইয়েরা কেউ আসেনি। বিভিন্ন কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে হয়তোবা তারা তার ভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছে। তার চোখ চিরতরে কেড়ে নিয়েছে। সে কোনো দিন আর দেখতে পারবে না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ঘটনার দিনই চাচাতো ভাই মামুন নিজেই মিলনকে নিয়ে যায় স্থানীয় হাসপাতালে। পরে তারা সংবাদ পেয়ে সবাই মিলে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন।

ঢামেকের চক্ষুবিভাগের অধ্যাপক ডা. ফরিদুল হাসান বলেন, প্রথমে মিলনের পরিবার জানিয়েছিল পড়ে গিয়ে মিলন আঘাত পেয়েছে। কিন্তু পরে তারা বলে তাদের শত্রুপক্ষ তার চোখ উঠিয়ে দিয়েছে। তবে আঘাতের কারণেই মিলনের একটি চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আরেকটি চোখ ভালো থাকলেও সেই চোখ দিয়ে সে দেখতে পারবে কিনা সেটাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি কোনো কিছু দিয়ে মিলনের চোখে আঘাত করে থাকে তাহলে চোখের পাপড়িতে জখমের চিহ্ন থাকবে। তার চোখের পাপড়িতে কোনো জখম নেই। সরাসরি চোখের ভেতরে জখম আছে।

টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম মিজানুল হক বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত তারা পাননি। পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<49500 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1