শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

আইসিইউতে 'ভয়ংকর হয়ে উঠছে' সুপারবাগ

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

বাংলাদেশে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউগুলোতে ৮০ শতাংশ মৃতু্যর কারণ হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠা অনুজীব, যাকে বলা হচ্ছে সুপারবাগ।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমানের বরাত দিয়ে এমন শঙ্কার খবর দিয়েছে ব্রিটেনের দ্য টেলিগ্রাফ।

অধ্যাপক সায়েদুরের ভাষ্য, '২০১৮ সালে তাদের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিল ৯০০ রোগী, যার ৪০০ জনই পরে মারা গেছেন। যারা মারা গেছেন তাদের ৮০ শতাংশেরই ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ ছিল। আর এসব সংক্রমণ ছিল অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী।'

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের চিত্র ভয়াবহ। এসব দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ না করা, গবাদি পশু মোটাতাজা করায় অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং দোকান থেকে সংগ্রহ করার সুযোগ থাকায় মানুষের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স (এএমআর) তৈরি হচ্ছে।

সায়েদুর রহমান বলেন, 'অধিকাংশ রোগীই (যারা মারা যান) বেসরকারি ব্যবস্থায় পরিচালিত আইসিইউর, যেখানে এএমআরের বিষয়টি কড়াকড়িরভাবে দেখা হয় না। আর এটিই ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী করার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে।

'এ ক্ষেত্রে আরও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। যত্রতত্র এসব (অ্যান্টিবায়োটিক) বিক্রি হওয়া উচিত নয় এবং কিছু হাসপাতাল থেকে দেয়া উচিত।'

২০১৫ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সায়েন্টিফিক রিসার্চে প্রকাশিত একটি সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি রোগীকে কোনো ধরনের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়।

বিএসএমএমইউর মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ আবু সালেহ বলছেন, বাংলাদেশের আইসিইউগুলোতে ৭০ ভাগ মৃতু্যর কারণ হতে পারে এ সুপারবাগ।

'মূলত ভবিষ্যতে ব্যবহার উপযোগী নতুন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক এ মুহূর্তে পাইপলাইনে নেই। আর যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এখন বাজারে আছে সেগুলোও কার্যকারিতা হারাচ্ছে, সব মিলিয়ে চিত্রটা ভয়াবহ।'

সুপারবাগের কারণে বিশ্বজুড়ে মৃতু্যহার বাড়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল তিন বছর আগেই। ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সামনের দশকগুলোতে সুপারবাগের হুমকি রকেটের গতিতে বাড়বে আর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে ২০৫০ সালের মধ্যে সুপারবাগে এক কোটি মানুষের মৃতু্য হবে, যা ২০১৮ সালে সারাবিশ্বে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং ডায়রিয়ায় যত মানুষ মারা গেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি।

মাইক্রোঅর্গানিজমের জিনগত পরিবর্তনের কারণে এ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স বা এএমআর সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়। এএমআর যত বাড়বে যে কোনো ধরনের সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা তত কমে আসবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় অযোগ্য চিকিৎসকরা ভুল ব্যবস্থাপত্র অথবা নিম্নমানের ওষুধ দেয়ার রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। অনেক দেশে পশু চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেয়ার ক্ষেত্রেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ নেই।

বেশি মুনাফার আশায় মানবদেহে ব্যবহার উপযোগী অ্যান্টিবায়োটিকই গবাদিপশু দ্রম্নত মোটাতাজা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামের অর্ধেকের বেশি খামারের মুরগি মাল্টি-ড্রাগ রেজিসটেন্ট ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46732 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1