শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের ১০০ দিন উদ্যমহীন

সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
নতুনধারা
  ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মঙ্গলবার সিপিডি আয়োজিত পর্যালোচনা সভায় বক্তৃতা করেন সংগঠনের বিশেষ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য -যাযাদি

যাযাদি রিপোর্ট

সরকারের গত ১০০ দিনের শাসন উদ্যমহীন, উদ্দেশ্যহীন, উৎসাহহীন ও উচ্ছ্বাসহীন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেছেন, ধারাবাহিকতার গতানুগতিক ছিল, অথচ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল অত্যন্ত সুচিন্তিত। যার বাস্তবায়ন ছিল না ১০০ দিনে।

মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিপিডি আয়োজিত 'বর্তমান সরকারের একশ' দিন' শীর্ষক উন্নয়ন পর্যালোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন দেবপ্রিয়।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে, তা অত্যন্ত সুচিন্তিত। তবে কোনো পথিত শক্তি এই ইশতেহার বাস্তবায়নে বাধা তৈরি করেছে। এতে তাদের ক্ষমতায় নতুন উদ্যোগ দেখেননি। বলা যায়, সরকারের গত ১০০ দিন ছিল উদ্যোগহীন উদ্যমহীন, উচ্ছ্বাসহীন এবং উৎসাহহীন।

তিনি বলেন, কোনো উন্নয়নের মাপকাঠি না করেই শুধু প্রবৃদ্ধির কথা আনা হচ্ছে। তবে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ভালো, যদি তা সত্য হয়। প্রবৃদ্ধির ডাটা তৈরি করতে অনেক বিষয় আছে, যেগুলো আনা হয়নি। প্রবৃদ্ধি এমন হতে হবে যেখানে ৮ শতাংশের ভিত্তিটার স্বচ্ছতা থাকতে হবে। আর এটা না করে এই আলেখ্য প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলে, সেটা তাদের উদ্বিগ্ন করে।

সিপিডি কিছু অসংগতি তুলে ধরে জিডিপির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সিপিডি বলেছে, উৎপাদন খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিবিএসের হিসাব, চামড়া খাতে প্রথম প্রান্তিকে সাড়ে ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অথচ রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ শতাংশ। কিন্তু চলতি মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। আবার গত ফেব্রম্নয়ারি মাস পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১২ শতাংশ। কিন্তু গতবার একই সময়ে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ। সিপিডির মতে, বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের মানে হলো, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের ভূমিকা দেখেননি। আবার কর আহরণের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি নেই। ব্যক্তি খাতের ঋণপ্রবাহ বেশি হয়নি। মূলধনি পণ্যের আমদানিও বেশি দেখা যায়নি। ব্যাংক খাতেও চাঞ্চল্য নেই। তিনি বলেন, যেহেতু বিনিয়োগ বেশি হয়নি, তাই উৎপাদনশীলতা বেশি দেখাতে হবে। শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, গত কয়েক বছরে কি এমন প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে, যাতে শ্রমের উৎপাদনশীলতা এত বাড়ল? আবার উৎপাদনশীলতা বাড়লে শ্রমিকের আয় বৃদ্ধি হওয়ার কথা। কিন্তু সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপে এর প্রতিফলন নেই। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কতটা কর্মসংস্থান হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই প্রবৃদ্ধির হিসাবটি উন্নয়নের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হচ্ছে না।

যেসব দেশে বৈষম্য কম, সেসব দেশে তুলনামূলকভাবে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা সহজ হয় বলে মনে করেন সিপিডির আরেক বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বৈষম্য কমানোর দিকে নজর না দিলে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে পারে।

নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শাসক দলের রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বাস্তবায়নের মধ্যে পার্থক্য আছে। শাসক দল বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে তা দেখছেন না। রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি হলো পরিবর্তন, দিন বদল। কিন্তু তা আটকে রাখছে রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে থাকা সুবিধাভোগীরা। আওয়ামী লীগের দেয়া নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে। তা না হলে এই ইশতেহার কাল্পনিক দলিল হিসাবে ইতিহাস বিচার করবে।

সরকারের কিছু কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে হলেও কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ভ্যাট বাস্তবায়ন হবে কি না জানেন না, তবে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এটা ইতিবাচক। এক সময় জেলা বাজেট ছিল, এবার আবার আলোচনায় এসেছে, বৈশ্বিক বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে। টাকা পাচার প্রতিরোধে অবৈধ মানি লন্ডারিং বিধিমালা প্রশংসার। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে, যা ইতিবাচক। যদিও তা পর্যাপ্ত না। অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পগুলোকে নেয়া হচ্ছে।

তার মতে, সার্বিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে সরকারের সুচিন্তিত, সুলিখিত ইশতেহার বাস্তবায়ন সম্ভব না। এতে গত ১০০ দিন ভুলে আগামী ১০০ দিনকে ভালোভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ।

সিনিয়র ফেলো খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়ার কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে বৈষম্য চরমে। ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে যেতে হলে, সার্বিক বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে। শ্রমবাজার বাড়ছে শিক্ষিত কিন্তু বেকারও বাড়ছে, দক্ষ শ্রমশক্তি বাড়াতে হবে। মূল কথা ডেমোগ্রাফি ডিভিডেন্টকে কাজে লাগাতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। এ ছাড়া বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46616 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1