শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা

আ'লীগ নেতা রুহুল আমিন গ্রেপ্তার

আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধানে সিআইডি মাদ্রাসা কমিটি বাতিলের নির্দেশ গ্রেপ্তার মণিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পিবিআই
সোনাগাজী সংবাদদাতা
  ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০৪

মাদ্রাসাছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে আটক করেছে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার বিকালে পৌরসভার তাকিয়া রোড এলাকার নিজ কার্যালয় থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন দলীয় একাধিক সূত্র। রুহুল আমিনের ভাগিনা মো. রানাসহ স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুন। এর আগে ১৪ এপ্রিল নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সেখানে হত্যাকান্ডে জড়িতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেন। তাদের জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যাকান্ডে জড়িত ২০ থেকে ২৫ জনের নাম প্রকাশ করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া শাহদাত হোসেন শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর তিনি দৌড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যান। বাইরে গিয়ে মোবাইল ফোনে বিষয়টি রুহুল আমিনকে জানান। প্রতু্যত্তরে রুহুল আমিন বলেন, 'আমি জানি। তোমরা চলে যাও।' তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিনকে নজরদারিতে রাখে ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এদিকে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর থেকে আলোচনায় ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই মাদ্রাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন। অভিযোগের তীর বরাবরই তার দিকে থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ অভিযোগ করতে পারেননি। তবে এবার উঠে এসেছে তার নামটিও। জানা যায়, ২৭ মার্চ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানির পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ওই মাদ্রাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেন। পরে জনরোষে তিনি অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরদিন সোনাগাজী জিরোপয়েন্টে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে কাউন্সিলর মকসুদ আলমের নেতৃত্বে যে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয় তাতেও ইন্ধন দেন রুহুল আমিন। আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধানে সিআইডি : জাগো নিউজ জানায়, ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় 'মানি লন্ডারিং' এর সংশ্লিষ্টতা অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট। হত্যাকান্ডে কোনো আর্থিক লেনদেন ছিল কি-না কিংবা কে বা কারা টাকা দিয়েছে- এসব জানতে কাজ শুরু করছেন কর্মকর্তারা। শুক্রবার সকালে সিআইডির সিনিয়র সহকারী বিশেষ পুলিশ সুপার শারমিন জাহান এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'নুসরাত হত্যাকান্ডে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা ঘটেছে কি-না তা অনুসন্ধানে কাজ করবে সিআইডি। হত্যাকান্ডে অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিআইডি এ অর্থের উৎস কিংবা অর্থের যোগানদাতা থাকলে তার খোঁজ করবে।' মাদ্রাসা কমিটি বাতিলের নির্দেশ বিডিনিউজ জানায়, ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, কমিটির সদস্যরা নুসরাত হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় এ নির্দেশ এসেছে বলে চিঠিতে উলেস্নখ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে। 'কমিটি গঠন করতে হলে নীতিমালা অনুসারে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি থাকতে হবে। আমরা সে জন্য অপেক্ষা করছি।' গ্রেপ্তার মণিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পিবিআই বাংলা নিউজ জানায়, নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়া সহপাঠী কামরুন্নাহার ওরফে মণিকে নিয়ে ঘটনাস্থল ও বোরকার দোকান পরিদর্শন করেছে পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার দুপুরে পিবিআইয়ের একটি দল রিমান্ডে থাকা মণিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, নুসরাত হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার কামরুন্নাহার ওরফে মণিকে বুধবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার দুপুরে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবালের নেতৃত্বে একটি দল মণিকে নিয়ে সোনাগাজী পৌর শহরের মানিক মিয়া পস্নাজায় একটি বোরকার দোকানে গিয়ে দোকানমালিকের সঙ্গে কথা বলে। পরে পিবিআইয়ের দলটি সোনাগাজী মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সেখানে নুসরাতকে কীভাবে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয়েছে তার বিবরণ দেন মণি। মো. শাহ আলম আরও বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া মণির কাছ থেকে হত্যাকান্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া পুরুষদের গায়ে থাকা বোরকাগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে