শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইন নেই, অধিকারের কথা বলারও কেউ নেই

যাযাদি রিপোর্ট
  ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০৫
প্রতীকী ছবি

সিনিয়র সিটিজেনদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব সুবিধা দেয়ার কথা, সেগুলো নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের কথা থাকলেও তাও গঠিত হয়নি। এমনকি তাদের জন্য যে আইন করার কথা ছিল, সেটিও খসড়াতেই আটকে আছে। ২০১৩ সালে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দেশের প্রবীণদের অধিকার সমুন্নত রাখা এবং তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সার্বিককল্যাণের লক্ষ্যে সরকার 'জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩' অনুমোদন করে। এ নীতিমালার আলোকে সুনির্দিষ্ট আইন করার বিষয়টি উলেস্নখ থাকলেও গত ছয় বছরেও তা করা হয়নি। বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ বলছে, দেশে ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের সংখ্যা এককোটি ৩০ লাখ এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা তিনগুণ ছাড়িয়ে যাবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য- আইন না হলেও তারা প্রবীণদের উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন করে যাচ্ছেন। প্রবীণদের অনেকে বলছেন, বয়স্কদের অসহায়ত্ব কিংবা দুর্বলতাকে বড় করে না দেখে, তাদের যোগ্যতা ও মেধাকে কাজে লাগাতে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত। এছাড়া সরকার বয়স্কভাতা থেকে শুরু করে নাগরিক যে অধিকারগুলোতে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য কিছু বাড়তি সুবিধা দিতে চায়, সেগুলোও থাকতে হবে। কারণ সবার সক্ষমতা সমান নাও হতে পারে। এদিকে ভরণপোষণ আইনানুযায়ী, প্রত্যেক সন্তানকে তার মা-বাবার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে অনূর্ধ্ব একলাখ টাকা অর্থদন্ড বা ওই অর্থদন্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। রেজাউর রহমান একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন- তিনি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজে ঢুকবেন। তিনি বলেন, 'তার ছেলে ব্যাংকের চাকরিতে ঢুকেছে। ভরণপোষণ আইনানুযায়ী সে যদি তাকে দেখেও রাখে, সেটা কি আসলেই তার অধিকার নিশ্চিত করে? তিনি এখনো শারীরিক ও মানসিকভাবে কাজ করতে সক্ষম। অথচ তাকে অন্য সুযোগগুলো তৈরি করে না দেয়ায়, তিনি সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রক্রিয়াটিই বদলানো দরকার। আর বয়স্কদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইন করা দরকার। তাদের জন্য দাবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানোরও কেউ নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে সম্মান দেয়ার পাশাপাশি যানবাহনে যাতায়াতে, স্বাস্থ্যসেবায়, ব্যাংকের লেনদেন কার্যক্রমে বিশেষভাবে সহযোগিতা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে বয়স্কদের কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে আসায় অনেকে আর্থিক অনটনে ভুগছেন। আবার অনেকে ভুগছেন নিঃসঙ্গতায়। সহায়তা করার মতো লোক না থাকায় বা থাকলেও সহায়তা না দেয়ায় কারও কারও ক্ষেত্রে চলাফেরা করাও কঠিন। বাংলাদেশে মা-বাবাদের দেখভালের জন্য ভরণপোষণের আইন করলেও তা দিয়ে অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রবীণদের বিশেষ যে সুবিধা দেয়ার কথা ছিল, তার মধ্যে আছে চিকিৎসা সেবা, ভ্রমণের সময় গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া এবং যানবাহনে কোটায় সিট (আসন) সুবিধা। এর পাশাপাশি শিক্ষিত, দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সিনিয়র সিটিজেনদের কাছ থেকে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারিভাবে পরামর্শ নেয়ার বিনিময়ে বিশেষ ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা অন্যতম। 'প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন-২০১৬' এর খসড়া কোন পর্যায়ে রয়েছে, জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট, কার্যক্রম ও মূল্যায়ন) ড. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, 'এ আইনের খসড়া নিয়ে এখন কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা প্রবীণদের উন্নয়নে যা প্রয়োজন করে যাচ্ছি।' মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, '২০১৩ সালের জাতীয় প্রবীণ নীতিমালার আলোকেই কাজ চলছে। সে কারণে আইনের খুব একটা প্রয়োজন দেখা দেয়নি। মনে হয় সে জন্যই খসড়টি আর চূড়ান্ত হয়নি। ২০১৭ সালে আইনটির খসড়া নিয়ে আলোচনা শোনা গেলেও মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পর্যায়ে রদবদলের পর এ আইন নিয়ে আর কোনো আলোচনা নেই। অধিদপ্তরও এ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত খসড়া দেয়নি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে