শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনে দুর্ভোগ চরমে

গত ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সারা দেশে ৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৭২টি মোটরযান নিবন্ধন হয়েছে। এর বেশির ভাগ মালিকই এখনো ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) পাননি। বিআরটিএ কিছুদিন পর পর আবেদনকারীদের ডিআরসির একনলেজমেন্ট স্স্নিপে সময় বাড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ নির্ধারিত সময়ে ডিআরসি সংগ্রহ না করার অযুহাত তুলে ট্রাফিক সার্জেন্টরা গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ নিয়ে যানবাহন মালিকদের ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে
সাখাওয়াত হোসেন
  ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০৫
শুধু ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ-ই নয়, ইকুরিয়া ও উত্তরা বিআরটিএতেও ডিআরসি পাওয়া নিয়ে যানবাহন মালিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া দেশের অন্য জেলা শহরগুলোতে এ চিত্র অনেকটা একই রকম

ব্যক্তিগত গাড়ির ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) পেতে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে গত বছরের ২২ ফেব্রম্নয়ারি রাজধানীর মিরপুরস্থ বিআরটিএ কার্যালয়ে আবেদন করেছিলেন চক্ষু চিকিৎসক ইমাম হোসেন। এর প্রায় তিন মাস পর তার বায়োমেট্রিকস (চার আঙুলের ছাপ, ডিজিটাল ছবি ও স্বাক্ষর) নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। নির্ধারিত দিনে হাজির হয়ে বায়োমেট্রিক্স দেয়ার পর তাকে ২৮ সেপ্টেম্বর ডিআরসি সংগ্রহের জন্য একটি স্স্নিপ ধরিয়ে দেয় বিআরটিএ। তবে এর পর আরো ছয় মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তিনি ইলেকট্র্রনিক চিপযুক্ত উচ্চনিরাপত্তা ফিচারসমৃদ্ধ ডিআরসি হাতে পাননি। যদিও এর মধ্যে তা প্রাপ্তির সময় দু'দফা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ডিআরসি যোগাড়ে একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানান, ধানমন্ডির বাসিন্দা বিলকিস আফরোজা। তার অভিযোগ, কোনো ধরনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা না দিয়ে বিআরটিএ তাকে ডিআরসি দিতে এক বছর ধরে ঘোরাচ্ছে। যদিও এ সময়ে তাকে তিন দফা সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ নির্ধারিত সময়ে ডিআরসি সংগ্রহ না করার অজুহাত তুলে ট্রাফিক সার্জেন্টরা এরই মধ্যে তার গাড়ির বিরুদ্ধে দুইবার মামলা করেছেন। যানবাহনের মালিক-চালকরা জানান, বছরের পর বছর ঘুরে তারা মেশিন রিডেবল ডিজিটাল বস্নু-বুক না পাওয়ায় তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এতে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে যানবাহন মালিক-চালকের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। তবে এসব অভিযোগের জবাবে বিআরটিএ বলছে, গাড়ি চুরি বন্ধ ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে মালিকানা নির্ধারণে কাগুজে বইয়ের বদলে ছয় বছর ধরে দেয়া হচ্ছে মেশিন রিডেবল ডিজিটাল বস্নু-বুক। আর এসব তৈরি করছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। এর কার্ড আনা হচ্ছে বিদেশ থেকে। গত দুই বছর কার্ড সংকট থাকায় ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দিতে তাদের কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে এ সংকটের সমাধান হওয়ায় এখন থেকে এ সমস্যা আর থাকছে না। নির্ধারিত স্বল্প সময়ের মধ্যে যানবাহন মালিকদের ডিআরসি দেয়া সম্ভব হবে বলে দাবি করেন বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। যদিও ডিআরসি প্রসেসিংয়ে সরাসরি জড়িতদের ধারণা, রাতারাতি এ অবস্থার পুরোপুরি পরিবর্তনের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে আগের চেয়ে ভোগান্তি কিছুটা কমবে। ডিআরসির জন্য আবেদন জমার দেয়ার দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তা গ্রাহকের হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও তা হয়তো ছয় মাসের মধ্যে দেয়া সম্ভব হবে। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের ডিআরসি প্রাপ্তি আরো সহজ হবে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ-ই নয়, ইকুরিয়া ও উত্তরা বিআরটিএতেও ডিআরসি পাওয়া নিয়ে যানবাহন মালিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া দেশের অন্য জেলা শহরগুলোতে এ চিত্র অনেকটা একই রকম। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সারা দেশে ৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৭২টি মোটরযান নিবন্ধন হয়েছে। এর বেশির ভাগ মালিকই এখনো পাননি ডিজিটাল বস্নুবুক। বিআরটিএর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার যানবাহন মালিক ডিআরসি পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। এদের কারো কারো ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন একনলেজমেন্ট স্স্নিপে তিন থেকে চার দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। এমন অনেক গ্রাহক আছেন, যাদের রেজিস্ট্রেশন একনলেজমেন্ট স্স্নিপে সময় বাড়াতে বাড়াতে আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। এ অবস্থায় তাদের অনেকের স্স্নিপের পেছনের অংশে সময় বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে ডিআরসি সরবরাহ একরকম বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার উপপরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে ডিআরসির জন্য আবেদন করে এখনো তা হাতে পাননি এমন গ্রাহকের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। এ নিয়ে অনেক ক্ষুব্ধ গ্রাহক তাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করছেন। এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদি প্রস্তুতি না নিয়ে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়া শুরু করায় এ হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওই বিআরটিএ কর্মকর্তা। খুলনা বিআরটিএর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ কিছু ত্রম্নটির কারণে সরবরাহে ধীরগতি ছিল। গত বছরের নভেম্বর থেকে এ সমস্যার সমাধান হওয়া শুরু হয়েছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসে বিআরটিএ বেশকিছু ডিআরসি গ্রাহকদের সরবরাহ করেছে। আগামীতে এ পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে। ডিআরসি সরবরাহে একই ধরনের দুরবস্থার কথা জানান নওগাঁ বিআরটিএর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এনরোলমেন্ট এক্সিকিউটিভ মো. শাহাজান সরকার। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ডিআরসির জন্য যানবাহন মালিকরা আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে তারা সে তথ্য ডাটাবেজে ইনপুট দিচ্ছেন। তবে ঢাকা থেকে সময়মতো ডিআরসি পাওয়া যাচ্ছে না। কী কারণে ডিআরসি দিতে বিলম্ব হচ্ছে তা তার জানা নেই। তবে কার্ড সংকটের কারণে এ দুরবস্থা হচ্ছে বলে অনুমান করছেন তিনি। প্রসঙ্গত, বিআরটিএর সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) এসব বস্নুবুক তৈরি করছে। এ জন্য ২০১২ সালে বিআরটিএ ও বিএমটিএফের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। গাড়ি চুরি বন্ধে ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজতর করতে ২০১২ সাল থেকে কাজ করছে বিআরটিএ। প্রথম পর্যায়ে মোটরযানে রেট্রো-রিফ্লেক্টিং নম্বর পেস্নট ও আরএফআইডি ট্যাগ সংযোজন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে মেশিন রিডেবল বস্নুবুক তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো দেখতে ডিজিটাল বস্নুবুকে রয়েছে গাড়ির মালিকের ছবি, স্বাক্ষর ও বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ। গাড়ির সংক্ষিপ্ত বিবরণের পাশাপাশি এক্সেল লোডও লেখা থাকছে ডিজিটাল বস্নুবুকে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো সহজে বহনযোগ্য এ স্মার্ট কার্ডই গাড়ির মালিকানার সপক্ষে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট হিসেবে গণ্য। ডিজিটাল এ বস্নু-বুকে বারকোড ও মালিকের সেলফোন নম্বর উলেস্নখ করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে