বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা

হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় কাদেরের শয়নকক্ষের সভায়

হাফেজ আবদুল কাদের আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি গেট পাহারায় ছিলেন
বাংলানিউজ
  ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:১১
হাফেজ আবদুল কাদেরকে ১৪৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য বৃহস্পতিবার ফেনীর বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয় -যাযাদি

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন আবদুল কাদের। এ নিয়ে চার আসামি এই হত্যাকা-ের মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন।

আবদুল কাদের সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক। তিনি এই ঘটনার মূল হোতা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বুধবার রাতে কাদেরকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

কাদের স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে কাদের হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে কাদের বলেছেন, কারাগার থেকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার পরামর্শ ও নির্দেশেই নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গত ২৮ ও ৩০ মার্চ তিনি অন্যদের সঙ্গে মাদ্র্রাসার অধ্যক্ষের সঙ্গে ফেনী কারাগারে দেখা করেন। অধ্যক্ষের পরামর্শমতোই ৪ এপ্রিল সকাল ১০টায় ‘অধ্যক্ষ সাহেব মুক্তি পরিষদের’ সভা করা হয় মাদ্রাসায় তার শয়নকক্ষে। একই দিন রাত ১০টার দিকে আবারও তার (কাদের) কক্ষে সভায় হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। ওই সভায় তিনিসহ (কাদের) ১২ জন উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই হত্যার মূল পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনা মতো ৬ এপ্রিল পরীক্ষার আগে তিনি (কাদের), নুর উদ্দিন, রানা, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, ইমরানসহ কয়েকজন মাদ্রাসার ফটকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনার পর তিনি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যান। কাদের জানান, নুসরাতকে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নেয়া ও ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনায় পাঁচজন অংশ নেন। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও দুজন নারী ছিলেন। শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম, জোবায়ের আহমেদ, জাবেদ হোসেনসহ তিনজন পুরুষ বোরকা পরা ছিলেন। নারীর মধ্যে উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ছদ্মনাম শম্পা ও কামরুন্নাহার ওরফে মণি ছিলেন। কাদেরের জবানবন্দির বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, মাদ্রাসার ফটকের বাইরে মাদ্রাসার শিক্ষক আফছার পাহারায় ছিলেন। সাইক্লোন শেল্টারের নিচে শামীম ও মহিউদ্দিন শাকিল পাহারায় ছিলেন।

আবদুল কাদেরের জবানবন্দি শেষে পিবিআই চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, নুসরাত হত্যাকা-ে আবদুল কাদের সক্রিয় পরিকল্পনাকারী ও তিনি হত্যাকা-ের সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এ সময় পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন।

আবদুল কাদেরের আগে এই হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম ও আবদুর রহিম ওরফে শরিফ। তারা স্বীকারোক্তিতে একই ধরনের কথা বলেছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে গেলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। গুরুতর অবস্থায় ওই দিন রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এ হত্যাকা-ে এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আটজন আসামির সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। ওই মামলা তুলে নেয়ার জন্য নুসরাত ও তার পরিবারের ওপর চাপ দিচ্ছিলেন অধ্যক্ষের লোকজন। এরপর ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়া হয়। অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা কারাগারে আছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে