শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
সড়কে ঝরছে প্রাণ

ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক উন্নয়নে নেই কোনো উদ্যোগ

ভোটের আগে ও পরে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দিলেও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও করিডোর উন্নয়নে কোনো প্রকল্প স্থান পায়নি
জাহাঙ্গীর আলম
  ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের নিরাপত্তা উন্নয়নে উদ্যোগ নেই সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। ভোটের আগে ও পরে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দিলেও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও করিডোর উন্নয়নে কোনো প্রকল্প স্থান পায়নি। এমনকি সম্প্রতি সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নতুন করে অসংখ্য প্রকল্প যুক্ত করা হলেও সড়কের নিরাপত্তা উন্নয়নে কোনো প্রকল্পের ঠাঁই হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক যায়যায়দিনকে বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্প নির্মাণে আগ্রহী বেশি। সংস্কারে মনোযোগ নেই বলেই তারা রোড সাইন ও মার্কিংয়ের নামে সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু তা ত্রম্নটিপূর্ণ হতে পারে না। এ কাজে লোকবল বাড়াতে হবে, দরদ দেখাতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা রয়েছে। তাই প্রকৌশলীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার। কারণ সড়কের নিরাপত্তার জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্প তৈরি করল, কিন্তু ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) করল না, পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিল। এটা হতে পারে না। তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসতে হবে। প্রকল্প দেখভাল করলে টেকসই হবে। তাই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে।

সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের লক্ষ্যই হলো মহাসড়ক মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থা তথা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি নিরাপদ মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। এ প্রতিষ্ঠানের ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। কিন্তু ট্রাফিক সাইন ও রোড মার্কিং স্থাপনের হার সন্তোষজনক নয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জাতীয় মহাসড়কের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৮১৩ কিলোমিটার এবং আঞ্চলিক মহাসড়কের পরিমাণ ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার। জাতীয় মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু স্পটে সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সাইন-সিম্বল স্থাপন করা হলেও অধিকাংশ জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে এখনো সড়ক নিরাপত্তা যথাযথ মানে ও সঠিকভাবে দৃশ্যমান নয়।

অপরদিকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) টার্গেটে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বিশ্বব্যাপী মৃতু্য ও হতাহতদের সংখ্যা অর্ধেক কমানোর কথা উলেস্নখ করা হয়েছে। তাছাড়া ৭ম পঞ্চবার্ষিকী (২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০) পরিকল্পনায় গ্রামীণ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়ন সাধনের কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে জাতিসংঘ ডিকেড অব অ্যাকশন রোড সেফটি ২০১১-২০২০ অনুযায়ী বাংলাদেশ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এজন্য ওই সব মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ করে চালক ও পথচারীদের যথাযথ তথ্য দিতে সঠিক সাইন ও মার্কিং স্থাপন অপরিহার্য। অপরদিকে এক হাজার ৩৭২ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের জরিপের মাধ্যমে সড়ক নেটওয়ার্কের ৩০০ কিলোমিটার অংশকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে একটি প্রকল্প তৈরি করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রয়োজনীয় সাইন ও রোড মার্কিং স্থাপন এবং চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসহ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ করিডোর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। তাতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৬৩২ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্প এলাকা ধরা হয় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, খুলনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল ও বরগুনা জেলা।

সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের প্রধান কাজ প্রাক্কলনে সড়কে ৬৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের উন্নয়ন, ঝুঁকিপূর্ণ ১৫৪ কিলোমিটার করিডোর উন্নয়ন, ৮৪ হাজার ৩৩৩টি ট্রাফিক সাইন, ৭ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৬ বর্গমিটার রোড মার্কিংসহ বিভিন্ন কাজের কথা বলা হয়। প্রকল্পটি সড়ক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যুক্ত করা হয়নি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি)। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় এসব অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তাই সংশোধনের জন্য গত ৩০ আগস্ট সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ফেরত দেয়া হয় প্রকল্পটি। ওই সময়ে রমিজউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে দেশে ব্যাপকভাবে সমালোচনার ঝড় উঠে সড়ক নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে।

সম্প্রতি রাজধানীর নর্দান বাংলাদেশ ইউনিভার্সি অব প্রফেশনালের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী মারা গেলে আবারও শুরু হয়েছে সড়কের নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে। ওই দিন থেকে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য প্রাণ ঝরছে। তারপরও জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের নিরাপত্তা উন্নয়নে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে তো দূরের কথা, আগের ফেরত দেয়া প্রকল্পটি পরিপূর্ণ করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়নি। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এক হাজার ৭৪০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। সম্প্রতি সংশোধন করে এর সংখ্যা বাড়িয়ে এক হাজার ৯১৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। তারপরও সড়ক নিরাপত্তার জন্য কোনো প্রকল্প ঠাঁই পায়নি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এসইসি) সভায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42793 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1