বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবজালের 'জনশ্রম্নতির' সত্যতা পেয়েছে দুদক

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
আবজাল হোসেন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা হোসেন লাপাত্তা। তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আবজাল দম্পতি দেশ ছেড়েছেন-এমন 'জনশ্রম্নতি রয়েছে' বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানতে পেরেছে। আর এ কথাই উলেস্নখ করে তাদের বিদেশ যাওয়া-আসার তথ্য চেয়ে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে দুদক।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কীভাবে এই দম্পতি দেশ ছেড়েছেন, তা নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এ বছরের ৬ জানুয়ারি আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি দেয়ে দুদক। ১০ জানুয়ারি আবজালকে দুদকে ডেকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের অনুসন্ধান দল। ২১ জানুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক, অর্থাৎ হস্তান্তর বা লেনদেন বন্ধ এবং ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন জব্দ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত।

১৩ মার্চ দুদকের উপপরিচালক ও আবজালের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে আবজাল ও তার স্ত্রীর পাসপোর্ট নম্বর, এনআইডি নম্বর দিয়ে তাদের বিদেশ যাওয়া-আসার তথ্য চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে ৬ জানুয়ারি দেয়া চিঠির সূত্র উলেস্নখ করে বলা হয়, ওই চিঠিতে এই দম্পতির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু জনশ্রম্নতি রয়েছে, তারা দেশ ছেড়ে গেছেন। এ বিষয়ে দ্রম্নত দুদককে তথ্য জানানোর অনুরোধ জানানো হয়।

আবজাল দম্পতি থাকতেন উত্তরার তামান্না ভিলায়। তাদের সম্পর্কে জানতে শুক্রবার তাদের মালিকানাধীন তামান্না ভিলায় গিয়ে সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক মামুন শিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে বাসা ছেড়ে যান। এখন কোথায় আছেন, তা তিনি জানেন না।

১৮ মার্চ রাজধানীর উত্তরায় (বাড়ি নম্বর ৪৭, সড়ক ১১ সেক্টর ১৩) আবজালের স্ত্রীর মালিকানাধীন তামান্না ভিলায় ক্রোকাদেশের বিলবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়। ১৬ নম্বর সড়কের আরেকটি বাসায়ও ক্রোকের নোটিশ টাঙানো হয়। পরে দিয়াবাড়ি এলাকায় দুটি পস্নট ও বাড্ডায় একটি ফ্ল্যাটে ক্রোকের নোটিশ লাগানো হয়।

ওই দিন দুদক কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, আবজাল দম্পতি কোথায় আছেন, তারা তা জানেন না।

আবজাল হোসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। এখন তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আবজাল বেতন পান সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। ঢাকার উত্তরায় তার ও তার স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি পস্নট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।

এই দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত ১০ জানুয়ারি আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৭ জানুয়ারি দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেন।

আবজাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুরে। ১৯৯২ সালে তৃতীয় বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি তার। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে অফিস সহকারী পদে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন তিনি। ২০০০ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন।

আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম একই প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিলস্না মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

অফিস সহকারী বা কেরানি হিসেবে চাকরি নিলেও আবজাল হোসেন অল্প সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্যমতে, বিএনপি আমলে নিয়োগ পেলেও সব আমলেই সমানভাবে প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার মতো কাজগুলো করেছেন আবজাল। এর মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42412 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1