শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মৃত্যুর মিছিল বড় হচ্ছে

সড়কে কঠোর হচ্ছে সরকার

শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করার তাগিদ লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা মহাসড়কে ছোট যান চলাচল বন্ধে কঠোর অবস্থান চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালালে রুট পারমিট বাতিল
সাখাওয়াত হোসেন
  ২৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ মার্চ ২০১৯, ১০:৩৩

সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ-সংস্কারসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন খাতে গত দশ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হলে এ সময়ে বেপরোয়া গতির যানবাহনের চাপায় মৃতু্যর মিছিল দ্রম্নত দীর্ঘ হওয়ায় সে সাফল্য অনেকটাই ম্স্নান হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, এ ইসু্যতে দফায় দফায় শিক্ষার্থী ও পোশাক শিল্প শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার উত্তপ্ত আন্দোলনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এ সুযোগে স্বার্থান্বেষী মহল দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এ নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে পানি ঘোলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যা সরকারকে নানা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এ পরিস্থিতিতে সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল ও পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার জন্য এরই মধ্যে সারাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল জোরালো তাগিদ দিয়েছে। অন্যদিকে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্টরা কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে তা-ও দ্রম্নত চিহ্নিত করতেও বলা হয়েছে। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণকারীরা সড়ক-মহাসড়কে সংঘটিত অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া গতি, চালকের অদক্ষতা, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রম্নটি এবং মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলাচলকে প্রধানভাবে দায়ী করেছে। তাই এসব বিষয়ে আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিগত সময় লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মামলা করা হলেও আগামীতে ফৌজদারি আইনে মামলা করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে মহাসড়কে যাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, নসিমন ও করিমনসহ ছোট যানবাহন চলাচল করতে না পারে সেজন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দূরপালস্নার বাস-ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন যাতে বেপরোয়া গতিতে ছুটতে না পারে এজন্য স্পিডগানের (স্পিড ডিটেক্টর ডিজিটাল মেশিন) ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। মহাসড়কে ৮০ কিলোমিটারের অধিক গতিতে যানবাহন চালালে তাৎক্ষণিক তা আটক করা হবে। ভাঙাচোরা কিংবা আঁকাবাঁকা হওয়ার কারণে যেসব মহাসড়ক ঝুঁকিপূর্ণ, ওইসব মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিবেগ আরো কমিয়ে আনা হতে পারে। অন্যদিকে রাজধানীতে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এর আগে দফায় দফায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কেন ব্যর্থ হয়েছে তা দ্রম্নত চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে দ্রম্নত পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিআরটিএ ও ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশকে জোরালো তাগিদ দেয়া হয়েছে। যথাযথভাবে এ দায়িত্ব পালনে কেউ ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে দ্রম্নত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিগত সময় পথচারীদের ট্রাফিক আইন মেনে চলতে শুধু জনসচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও এখন থেকে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেবে পুলিশ। তবে এ কার্যক্রম শুরুর আগে ব্যস্ততম প্রতিটি সড়কে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং তৈরি করা হবে। এছাড়া যেসব মোড় কিংবা সিগন্যালে ফুটওভার ও আন্ডারগ্রাউন্ড পাসওভার রয়েছে, সেখান দিয়ে পথচারীরা যাতে নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হতে পারে তা নিশ্চিত করবে ডিএমপি। হকাররা যাতে কোনোভাবে ফুটওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারগ্রাউন্ড পাসওভারে পসরা সাজিয়ে বসতে না পারে এজন্য ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদিকে সিটি সার্ভিসের পরিবহন মালিকরা যাতে কোনোভাবেই শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিতে বাস-মিনিবাস চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নেবে। এ নির্দেশ অমান্য করে কেউ গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করারও চিন্তাভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে নগর পরিবহনের প্রতিটি বাস যাতে নির্ধারিত স্টপেজে টিকিট কাউন্টার বসিয়ে টিকিট দিয়ে যাত্রী ওঠান তা নিশ্চিত করা হবে। রংচটা, ফিটনেসবিহীন ও মডেল আউট গাড়ি ঢাকার রাস্তায় নামালে তা আটক করে ডাম্পিংয়ে পাঠাবে ডিএমপি। এ ব্যাপারে শিগগিরই সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। এক রুটের গাড়ি যাতে কোনোভাবে অন্য রুটে চলাচল করতে না পারে এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। এ ব্যাপারে কারো গাফিলতি কিংবা কোনো দুর্নীতির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ ও বিআরটিএ সূত্র জানায়, অতীতে বহুবার এসব ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নানা অপতৎপরতায় তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে এবারের অভিযান শুরুর আগে বিগত সময়ের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা হবে। পরে সড়ক নিরাপত্তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে প্রশাসন কাজ শুরু করবে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো যাতে তাদের কর্মকান্ডের বিরোধিতা করতে না পারে এ জন্য অভিযান পরিচালনার সময় তাদের একাধিক প্রতিনিধিকে প্রতিটি অভিযানে সঙ্গে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, 'সড়ক নিরাপত্তায় পুলিশ নতুন করে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পুলিশের অভ্যন্তরীণ বৈঠক ছাড়াও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মহাসড়কে বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ঘটছে বড় যানবাহনগুলোর সঙ্গে ছোট যানবাহনের। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার ২৫ ভাগই হচ্ছে আইন না মানার কারণে। সেজন্য মহাসড়কে যাতে ছোট যানবাহন চলতে না পারে সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর আগে গত ২০ বছরের আগস্ট মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কতটা উদ্যোগী হয়েছে, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে