চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে বৈঠকে করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি। ফ্রন্টের শীর্ষ দুই নেতা ড. কামাল হোসেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অুনষ্ঠিত বৈঠক থেকে তিনদিনের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদ ও নতুন নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ৩০ মার্চ ঢাকায় মানবন্ধন এবং স্বাধীনতা দিবসে উপলক্ষে দুইদিনের কর্মসূচি পালন করবে তারা। এ ছাড়া একাদশ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে এপ্রিল মাস থেকে ‘বিভাগীয় ও জেলাসমূহে’ সভা-সমাবেশ-গণশুনানির মতো কর্মসূচি শুরু করারও ঘোষণা দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।
শুক্রবার বিকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বিকাল ৪টায় ফকিরেরপুলে জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে স্টিয়ারিং কমিটির এই বৈঠক হয়। জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রবের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএনপির আবদুল মঈন খান, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম পথিক, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, শহিদুল্লাহ কায়সার, জাহেদ-উর রহমান. জেএসডির আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান তালুকদার, ইকবাল সিদ্দিকী, বিকল্পধারা শাহ আহমেদ বাদল, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মনসুরের শপথ ও নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণসহ কিছু কারণে জোটের শীর্ষ দল বিএনপি’র সঙ্গে গণফোরামের দূরত্ব বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। এরই মধ্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের বৈঠকে ফ্রন্টের দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতির কারণে রহস্যের কথা ভাবতে পারেন অনেকে। শীর্ষ এই দুই নেতার বৈঠকে যোগ না দেয়ার কারণ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু জানান, অন্য দুটি অনুষ্ঠানের কারণে বৈঠকে তারা যোগ দিতে পারেননি। তবে বৈঠকের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের সম্মতি আছে।
বৈঠক সূত্রমতে, সুলতান মনসুরের বাদ দিতে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে স্পিকারের কাছে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ চিঠির খসড়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেখানো হবে। এর পরই পাঠানো হবে। মূলত জোটে মনোমালিন্য দূর করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, নিরাপদ সড়ক, উপজেলা নির্বাচনে অব্যবস্থা, ডাকসু নির্বাচনে অব্যবস্থা তথা ভোট ছিনতাইসহ সামগ্রিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ছিনতাই করা, দেশের সীমাহীন অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৩০ মার্চ বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাববন্ধন করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া সারাদেশে এপ্রিল মাসে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ অথবা গণশুনানি হবে। এরপর জেলাসমূহে হবে। সারাদেশে এ আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থাকবে। এ ছাড়া মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুইদিনের কর্মসূচির মধ্যে থাকবে ২৬ মার্চ সকাল ৯টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ৩১ মার্চ বিকাল তিনটায় রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা।
মান্না বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া পরে মানুষ ভোটের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যায়নি, উপজেলা নির্বাচনেও ভোট দিতে যায়নি। পুরো দেশের মধ্যে এ কথা ছড়িয়ে আছে। নির্বাচন কমিশন এ কথা স্বীকার করছে। ইসির পাশাপাশি যারা বর্তমান সরকারের সঙ্গে আছে, যুক্তফ্রন্টের নেতা একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেছেন, পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা ভেঙ্গে পড়ছে, দেশের অস্তিত্বের সংকট। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন আদায়ের দাবিতে অটল আছি। সেই দাবির ভিত্তিতে লড়াই করে বিজয় না হওয়া পর্যন্ত চলিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।
আসম আবদুর রব অভিযোগ করে বলেন, যারা ঋণখেলাপি জনগণের আমানতের কোটি কোটি টাকা লুট করে নিয়েছে যেটা কোনোদিন পরিশোধ হবে না। ঋণখেলাপিদের এক পার্সেন্টের বিনিময়ে সমস্ত টাকা মওকুফ করে দেয়ার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করছে ঐক্যফ্রন্ট।
তিনি বলেন, এপ্রিল মাস থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া গণশুনানির রিপোর্ট আাগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ইংরেজি এবং বাংলায় বই আকারে প্রকাশ করে জনগণের মাঝে বিতরণ করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া এই গণশুনানির প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গত ১১ মার্চ স্টিয়ারিং কমিটির সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।