মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাঝরাতে রোকেয়া হলে অনশনকারী ছাত্রীদের হেনস্তা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
গোলাম রাব্বানী

অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ এনে ফের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশনে বসা রোকেয়া হলের পাঁচ ছাত্রীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে।

অনশনকারী ছাত্রীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে তাদের হেনস্তা করেন।

অনশনকারী শ্রবণা শফিক দীপ্তি বলেন, 'চারটি দাবিতে আমরা সুশৃঙ্খলভাবে অনশন করছিলাম। বুধবার রাতে গোলাম রাব্বানী তার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এখানে এসে আমাদের, সমর্থনকারীদের হেনস্তা করেন। ছবি দেখিয়ে একজনকে চরিত্রহীন প্রমাণের চেষ্টা করেন। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, আমরা মদ-গাঁজা খেয়ে আন্দোলন করছি। এ ছাড়া আমাদের চিহ্নিত করে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য প্রক্টরকে বলেন।'

ডাকসু ও হল সংসদে পুনর্র্নিবাচন, হল প্রভোস্টের পদত্যাগ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার রাত নয়টায় আমরণ অনশনে বসেন রোকেয়া হলের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে চারজন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন পদের প্রার্থী ছিলেন। হলের প্রধান ফটকের সামনে তারা অনশন শুরু করেন। অনশন শুরু করার পর তাদের সমর্থনে হলের ফটকের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান নেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা হল প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে স্স্নোগান দেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের ভাষ্য, দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মোটরসাইকেলে করে ছাত্রলীগ শতাধিক নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে রোকেয়া হলের সামনে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী। এসেই তিনি ছাত্রীদের হলের ফটকের বাইরে অনশন করা ও তাদের সমর্থকদের অবস্থান নিয়ে মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলেন।

ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস মুঠোফোনে প্রক্টরকে জানান, হলের কিছু মেয়ে মধ্যরাতে গেট খুলে বাইরে অবস্থান করে অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছেন। তিনি বলেন, 'এরা খুব বাড়াবাড়ি করছে, স্যার। এদের সবগুলোর ফাইল দেখে চিহ্নিত করে, গার্ডিয়ান ডেকে এনে স্থায়ীভাবে একাডেমিক বহিষ্কার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খোদা হাফেজ করে দেন।'

প্রায় পাঁচ মিনিটের কথোপকথনে ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস কয়েকবার প্রক্টরের কাছে একই দাবি জানান।

এ সময় প্রভোস্টের 'পদত্যাগ' দাবি করে 'রোকেয়া হলের আঙিনা, তোমার-আমার ঠিকানা' বলে স্স্নোগান দেন অনশনকারীদের সমর্থকেরা।

এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশরাত কাশফিয়া ইরা, বর্তমান সভাপতি ও ডাকসুর কমনরুম-বিষয়ক সম্পাদক লিপি আক্তার, হল সংসদের সদস্য সুরাইয়া আক্তারসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রী।

ডাকসুর জিএস রাব্বানীর কাছে তারা অভিযোগ করেন, অবস্থানকারীদের কারণে হলের শিক্ষার্থীরা ঘুমাতে পারছেন না, পড়তে পারছেন না।

এরপর রাব্বানী হলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা অনশনকারীদের কয়েকজন সমর্থককে দেখিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীদের প্রশ্ন করেন, 'রাত দুইটার দিকে বোরকা, নেকাব পরা এরা কারা? ছাত্রী সংস্থা? শিবিরের কর্মী? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের অবস্থান নিষিদ্ধ।'

এরপর রাব্বানী গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে বলেন, 'এদের ফোকাস করেন।'

এ সময় ঘটনাস্থলে হলের হাউস টিউটর দিলারা জাহিদ, লোপামুদ্রা, সাদিয়া নূর খান এসে ডাকসুর জিএস রাব্বানীকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

জিএস চলে যেতে উদ্যত হলে তাকে ফিরিয়ে আনেন হল ছাত্রলীগ নেত্রীরা। ফিরে এসে আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করতে হল ছাত্রলীগ নেত্রীদের নির্দেশ দেন রাব্বানী।

এরপর রাব্বানীর সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, 'হলের গেট খোলা রেখে ছাত্রীদের অবস্থানের কথা শুনে হলে অবস্থান করা অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে আসি আমি। এসে দেখি, কয়েকজন মদ-গাঁজা খেয়ে এখানে আন্দোলন করছে। এই ১০-১৫ জনের কারণে অন্যদের ক্ষতি হলে সে দায় নেবে কে?'

এ সময় গণমাধ্যমের সামনে এক শিক্ষার্থীর ছবি দেখিয়ে রাব্বানী অভিযোগ করেন, 'এই মেয়ে মদ-গাঁজা খেয়ে ধরা পড়েছিল। সে এখানে আন্দোলন করছে। এরাই ভোটের দিন ব্যালট ছিনতাই করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে দেয়নি। প্রভোস্ট ম্যামকেও লাঞ্ছিত করেছে। এদের সামনে প্রভোস্ট ম্যাম আসবেন কীভাবে?'

গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে রাব্বানী বলেন, 'সবারই আন্দোলন, অনশন করার রাইট আছে। কিন্তু রাত দুইটার দিকে হলের গেট খোলা রেখে অন্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার রাইট কারও নাই।'

রাব্বানী বলেন, 'বোরকা পরে মুখ ঢাকা মেয়েরা এখানে কেন? এরা শিবিরের ছাত্রী সংস্থার। তারপরও তারা ক্যাম্পাসে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা।'

রাত সোয়া দুইটার দিকে নেতাকর্মীদের নিয়ে হলের সামনে থেকে চলে যান রাব্বানী। কয়েক মিনিট পর মোটরসাইকেলে করে এসে স্স্নোগান দিয়ে শোডাউন দেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী।

ছাত্রীদের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে রাতে হলের সামনে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হাউস টিউটর বলেন, 'ছাত্রীদের ভেতরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা যাচ্ছে না। তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরাও এখানে অবস্থান করব।'

ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সবশেষ সকাল ছয়টা পর্যন্ত হল গেটের সামনে অবস্থান করছিলেন শিক্ষার্থীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<41017 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1