বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ঢামেকে স্বজনদের ভিড়

শিশু সানিনসহ ২০ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ

যারা ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন, তাদের রক্ত ও মুখের ভেতর থেকে কোষ সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃতদেহ থেকে হাড় ও দাঁতের নমুনা নেয়া হয়েছে
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
চকবাজার দুর্ঘটনায় নিখোঁজ বিবি হালিমা বেগম শিলার মরদেহ শনাক্ত করতে শুক্রবার ঢামেক হাসপাতালে তার শিশু কন্যা সানিনের ডিএনএ নমুনা নেন চিকিৎসকরা -যাযাদি

পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। লাশ শনাক্ত করার প্রক্রিয়া হিসেবে নিহত লোকজনের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন টিম নমুনা সংগ্রহ করছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নমুনা দিতে আসেন। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে লাশের সন্ধানে আসা স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১৫টি মৃতদেহের জন্য শিশু সানিনসহ ২০ জন স্বজন গিয়ে তাদের ডিএনএ নমুনা দিয়ে গেছেন। সিআইডির সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, নিয়মিত মৃতদেহের নমুনা দিয়ে শনাক্ত করা হলেও অগ্নিদগ্ধদের ক্ষেত্রে তা সময়সাপেক্ষ। যারা ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন, তাদের রক্ত ও মুখের ভেতর থেকে কোষ সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃতদেহ থেকে হাড় ও দাঁতের নমুনা নেয়া হয়েছে। মৃতদেহ শনাক্ত করতে এক থেকে ছয় মাস সময় লাগবে। শনিবার পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বুথ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এরপর সিআইডিতে যোগাযোগ করতে হবে। মৃতদেহের নমুনা দেয়ার ক্ষেত্রে মা-বাবা বা স্বামী, স্ত্রী বা সন্তানকে আসার অনুরোধ করেছেন সিআইডির সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট। তাদের কাউকে পাওয়া না গেলে ভাই বা বোন আসতে পারেন। মর্গের সামনে ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা গেছে, চারজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। ১৫ জনের লাশ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে, তিনজনের লাশ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মিটফোর্ড হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এসব লাশের নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সেলিম রেজা বলেছেন, তাঁরা ৬৭ জনের লাশ পেয়েছেন। এর আগে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ৭৮ জন উলেস্নখ করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের লাশ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নমুনা দিল শিশু সানিন এদিকে মামার কোলে চড়ে মায়ের খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছে ছোট্ট সানিন। পাঁচ বছরের শিশুটি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না, কী হয়েছে! সবাই বলছে, তার মা আর নেই। কিন্তু সে জানে না, মা তো একটি বাড়ির নিচে গিয়েছিল। তারপর কোথায় গেল? সানিনের পাঁচ মাস বয়সী ছোট্ট বোনটাও সারাক্ষণ কাঁদছে। অবুঝ শিশুটিও হয়তো তার মাকে খুঁজছে। রাজধানীর চকবাজারে গত বুধবার রাতে আগুনের ঘটনায় সানিনের মা বিবি হালিমা বেগম শিলা (২৫) নিখোঁজ রয়েছেন। শুক্রবার সকালে মামার সঙ্গে সানিন যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শিলার লাশ খুঁজে পেতে মেয়ে সানিনের ডিএনএ নমুনা নিয়েছেন চিকিৎসকেরা। চকবাজারে আগুনের ঘটনায় ডিএনএ নমুনা দিতে হাসপাতালে আসা স্বজনদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে টুকরো টুকরো সব কষ্টের গল্প। শিলার গল্প জানা গেল তাঁর স্বজনদের কাছ থেকে। চকবাজারে অগ্নিকান্ডের স্থান থেকে ২০০ গজ দূরেই পরিবার নিয়ে থাকতেন শিলা। শিলার স্বামী মোহাম্মদ সুমন। তিনি চকবাজারেই ব্যাগের ব্যবসা করেন। বুধবার রাতের আগুন তাদের বাসা পর্যন্ত যায়নি। তবে 'ভাগ্য' শিলাকেই আগুনের কাছে নিয়ে গেছে। শিলার বোনের স্বামী মো. বেলাল হোসেন জানান, ঘটনার দিন রাতে সানিন একটু অসুস্থ ছিল। তার বাবা সুমন ছিলেন কর্মস্থলে। তাই শিলা তার এক বোন ও দুই শিশুসন্তানকে বাসায় রেখে নিচে গিয়েছিলেন ওষুধ কিনতে। তিনি সেই যে গেছেন, আর ফেরেননি। পরিবারের সদস্যদের ধারণা, নিচে ওষুধ কিনতে গিয়ে শিলা হয়তো ভয়াবহ আগুনের কবলে পড়েন। হয়তো তিনি আর নেই। শনাক্ত না হওয়া লাশের ভেতরে শিলা থাকতে পারেন-এমনটা ভেবে ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন তারা। বেলাল হোসেন জানান, শিলারা পাঁচ বোন ও তিন ভাই। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে তাদের গ্রামের বাড়ি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে