শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
২০ বছর পর ফ্রান্স ফের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্স

ক্রোয়াট স্বপ্ন ভেঙে ফরাসি উৎসব

রাজু আহাম্মেদ
  ১৬ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৬ জুলাই ২০১৮, ১০:০৭
লুঝনিকিতে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ফরাসিদের বঁাধভাঙা উচ্ছ¡াস Ñওয়েবসাইট

অবশেষে উপনীত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, সব আনুষ্ঠানিকতার পর বিশ্বকাপটা হাতে পেলেন হুগো লরিস। লুঝনিকি স্টেডিয়ামের অস্থায়ী মঞ্চে দঁাড়িয়ে স্বগৌরবে সেটা উঁচিয়ে ধরলেন ফরাসি দলপতি, সোনার পদক গলায় পরে উদযাপনে সঙ্গী হলেন সতীথর্রাও। ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্ন ভেঙে ২০ বছর পর আরও একবার বিশ্বজয়ের উন্মাদনায় ভেসে গেল ফরাসিরা। উন্মাদনার শুরু যখন শেষ বঁাশি বাজিয়েছিলেন নেস্তর পিতানা। ৪-২ গোলের জয়ে তখন রুদ্ধশ্বাসে এদিক-ওদিক ছুটলেন গ্রিজম্যান-এমবাপে-পগবারা। আনন্দ-বেদনায় বরাবর যে দিদিয়ের দেশম ভাবলেশহীন থাকেন, শিষ্যদের সঙ্গে উচ্ছ¡াসে ভেসে গেলেন সেই দেশমও। বিশ্বজয়ের বীরত্বগাথা লেখার পর কি আর নিরাসক্ত থাকা যায়? মঙ্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফরাসিদের এমন উন্মাদনা, আনন্দ-উৎসব চলেছে দীঘর্ সময়। সেই উৎসবে মিশে গেছেন গ্যালারিতে উপচে পড়া দশর্কও। অবশ্য বড় একটা অংশ তখন নীরবে নিভৃতে চোখের জল ফেলছেন, খোপ খোপ লাল-সাদা জাসির্টা তখন ফিকে দেখাচ্ছে। লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিতিচ-ইভান পেরেসিচদের মুখও ফ্যাকাশে, কেউ কেউ তো দশর্কদের মতো ভেঙে পড়লেন কান্নায়। নাগালে পেয়েও অতি আকাক্সক্ষার বিশ্বকাপটা ছঁুয়ে দেখা হলো না, সেই বেদনা কি সহজেই ঠেকে রাখা যায়? সেটা না গেলেও নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের সাফল্যময় উপাখ্যান লিখেই ঘরে ফিরছে ক্রোয়াটরা। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে শিষ্যদের সান্ত¡না দিয়ে গেলেন জালাতকো দালিচ। তবে ক্রোয়েশিয়া কোচের মুখচ্ছবি বলে দিচ্ছিল, কতটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল তার বুকে। সুযোগ ছিল ইতিহাস গড়ার। বাছাইপবের্ হাবুডুবু খেতে থাকা দলকে টেনে তুলেছিলেন, প্লে-অফের বাধা টপকে তুলে এনেছিলেন মূলপবের্, এরপর ইতিহাস গড়ে ফাইনালে নাম লেখানো; কিন্তু স্বপ্নযাত্রার শেষটা আর রাঙাতে পারলেন না। যেটা পেরেছেন দেশম। ফরাসি কোচ ঢুকে গেছেন ইতিহাসের পাতায়। ১৯৯৮ সালে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন, এবার জিতলেন কোচ হয়ে। এই কীতির্ আছে একজনেরই, তিনি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। সেমিফাইনালে জয়ী একাদশ অপরিবতির্ত রেখেই মাঠে নেমেছিল দুই দল। দুই দলের কোচ বেছে নিয়েছিলেন একই ফরমেশন। শুরুটা ছিল সাবধানী। এরপর ধীরে ধীরে প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা। সেই চেষ্টায় কিছুটা এগিয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া। তবে ম্যাচ শুরুর আঘাতটা হেনেছে ফ্রান্সই। বক্সের বাইরে আতোয়ান গ্রিজম্যানকে ফেলে দিয়ে ক্রোয়েশিয়ার বিপদ ডাকেন মাসেের্লা ব্রোজোভিচ। এর থেকেও বড় বিপদ ঘটান সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার নায়ক মারিও মানজুকিচ। ১৮ মিনিটে গ্রিজম্যানের নেয়া ফ্রিকিকে বল তার মাথা ছঁুয়েই জালে জড়ায় (১-০)। বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথম আত্মঘাতী গোলের বিব্রত রেকডের্র মালিক বনে যান এই স্ট্রাইকার। ওই আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স, অবশ্য খুব বেশি সময় এগিয়ে থাকা হয়নি দিদিয়ের দেশমের শিষ্যদের। ১০ মিনিট পরই ইভান পেরেসিচের দুদার্ন্ত এক গোলে সমতায় ফেরে মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালানো ক্রোয়েশিয়া। ২৮ মিনিটে মানজুকিচের ফ্রিকিক থেকে বল পেয়েছিলেন দোমাগই ভিদা। তার থেকে পেরেসিচ, ভুল করেননি এই উইঙ্গার। জোরালো শটে হুগো লরিসকে ফঁাকি দিয়ে বল জড়িয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের জালে (১-১)। এই পেরেসিচই আবার ৩৬ মিনিটে খলনায়ক বনে গেলেন। বেøইস মাতুইদির হেডে বক্সে বল লাগে তার হাতে, ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আজের্ন্টাইন রেফারি নেস্তর পিতানা বাজান পেনাল্টির বঁাশি। স্পট কিক থেকে গ্রিজম্যান গোল করলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ওই স্কোরলাইন নিয়েই বিরতিতে যায় দেশমের শিষ্যরা। তবে আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে যেভাবে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছে ক্রোয়েশিয়া, ভাগ্য পাশে থাকলে সমতায় ফিরেই বিরতিতে যেতে পারত জালাতকো দালিচের শিষ্যরা। বিরতি থেকে ফেরার পর সেই ক্রোয়েশিয়াকে আর দেখাই গেল না। ফরাসিরা রীতিমতো ছেলেখেলা করল তাদের নিয়ে। ৫৯ মিনিটে নিজের স্বপ্ন পূরণ করা গোলটি করলেন পল পগবা (৩-১)। মিনিট ছয়েক পর তো ম্যাচটাকে শেষই করে দিলেন কিলিয়ান এমবাপে। ডিফেন্ডার হেনাের্ন্দসের কাছ থেকে বল পেয়ে চলতি আসরে নিজের চতুথর্ গোলটি করেন ১৯ বছর বয়সী এই সেনসেশন (৪-১)। এরপর আর কিছুই করার ছিল না ক্রোয়েশিয়ার। তবে ম্যাচের শুরুতে যে অমাজর্নীয় ভুলটা করেছিলেন মানজুকিচ, ৬৯ মিনিটে গোল করে কিছুটা হয়েও দায়মুক্ত হয়েছেন এই স্ট্রাইকার। মানজুকিচের ওই গোলটি আবার লরিসের অমাজর্নীয় ভুলে। ফরাসি দলপতির ভুলটা আসলে শিশুসুলভই। বল পেয়ে আপন মনে খেলছিলেন এই গোলরক্ষক, মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে গিয়ে তাকে বোকা বানিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন মানজুকিচ (৪-২)। লরিসের ভাগ্য ভালো, তার ওই ভুল ম্যাচে কোনো প্রভাব ফেলেনি। ফরাসিরা ম্যাচের ভাগ্য লিখে ফেলেছিল আগেই। আজেির্ন্টনা, উরুগুয়ের মতো ফ্রান্সও এখন দুবার বিশ্বকাপ জেতা দল। আগামী চার বছরের জন্য বিশ্ব ফুটবলের রাজমুকুট এখন ফরাসিদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে