বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মাদকবিরোধী অভিযান

বদির ৪ ভাইসহ ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সব কটি তালিকায় ইয়াবার ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে আবদুর রহমান বদি ও তার ৫ ভাই, এক বোনসহ ২৬ জন নিকটাত্মীয়ের নাম আছে
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৩২
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ফুল দিয়ে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী শনিবার টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণ করেন যাযাদি

কক্সবাজারের ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী শনিবার আত্মসমপর্ণ করেছেন। টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বেলা ১১টার দিকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ইয়াবা ও অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমপর্ণ করেন। এদের মধ্যে কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির চার ভাই ও ১২ আত্মীয়সহ ১৬ জন আছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, কক্সবাজারে সরকারের তালিকাভুক্ত বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন ৭৩ জন। তাদের ২৪ জন আত্মসমপর্ণ করেছেন। এই ২৪ জনের মধ্যে আছেন সাবেক সাংসদ বদির চার ভাই আবদুল শুক্কুর, আবদুল আমিন, মো. শফিক ও মো. ফয়সাল, বদির ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল, ভাগনে সাহেদুর রহমান নিপুসহ ১৬ জন। এ ছাড়া আছেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে দিদার মিয়া, হ্নীলার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নুরুল হুদা ও জামাল হোসেন, টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ, নারী কাউন্সিলর কহিনুর বেগমের স্বামী শাহ আলম, টেকনাফ সদর ইউপি সদস্য এনামুল হক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দুই ভাই জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান প্রমুখ। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ২ থেকে ১৬টি মামলা আছে। ৭৩ বড় ব্যবসায়ীর বাকি ৪৯ জনের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ছয়জন। বাদবাকি ৪৩ জনের কেউই আত্মসমপর্ণ করেননি। এর মধ্যে তালিকার এক নম্বরে থাকা সাবেক সাংসদ নিজেও আত্মসমপর্ণ করেননি। তালিকার দুই নম্বরে থাকা সাইফুল করিম বিদেশে অবস্থান করছেন। প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সব কটি তালিকায় ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে আবদুর রহমান বদি ও বদির ৫ ভাই, এক বোনসহ ২৬ জন নিকটাত্মীয়ের নাম আছে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এটি সরকারের অস্ত্র ও মাদকবিরোধী অভিযানের চলমান প্রক্রিয়া। যারা আত্মসমপের্ণর সুযোগ নিয়েছেন, তাদের জন্য সেটি ভালো হয়েছে। যারা এই সুযোগ নেননি, তারা ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হবে। কারণ, সরকার এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কেউ যদি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ইয়াবা ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করতে বডার্র গাডর্ বাংলাদেশকে (বিজিবি) নিদের্শ দেন। অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদশর্ক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারিসহ ঊধ্বর্তন পুলিশ কমর্কতার্রা উপস্থিত ছিলেন। মাদকের বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ মে থেকে চালানো অভিযানের অংশ হিসেবে এখন পযর্ন্ত দেশজুড়ে ‘ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে’ প্রায় তিন শ ইয়াবা ব্যাবসায়ী নিহত হন। এর মধ্যে ইয়াবার জেলা বলে খ্যাত কক্সবাজারেই ৪৪ জন নিহত হন। সরকারের উচ্চপযাের্য়র সূত্র জানায়, মাদক নিমূের্ল ইয়াবা ব্যাবসায়ীদের ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরে আসা এবং পুনবার্সনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে আত্মসমপের্ণর জন্য ইয়াবা ব্যাবসায়ীদের কক্সবাজার পুলিশ লাইনসে জড়ো করা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো বাহিনীর সম্পৃক্ততা নেই। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, আত্মসমপর্ণকারীদের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হবে। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হবে। তাদের সাধারণ ক্ষমার কোনো সুযোগ নেই। যা হবে প্রচলিত আইনেই হবে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি বদি কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু সাবেক এই সংসদ সদস্যকে নিয়ে বিতকর্ আছে, তাই বিতকর্ এড়াতেই উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। দশের্কর সারিতে তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিরাও নিজেরা আত্মসমপর্ণ না করলেও ঠিকই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন বিভাগের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যাবসায়ীরা । অনুষ্ঠানে দশর্ক সারির দ্বিতীয় লাইনে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যাবসায়ী জাফর আহমদকে। তিনি টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেযারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। অনুষ্ঠানে জাফর আহমদের ছেলে টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া রয়েছেন। তিনিও তালিকাভুক্ত। এ ছাডাও অনেক ইয়াবা ব্যাবসায়ীকে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেখা গেছে। ৯ শতের্ আত্মসমপর্ণ দোষ স্বীকার করে ৯ শতের্ আত্মসমপর্ণ করছেন টেকনাফের ১০২ জন ইয়াবা গডফাদার ও ব্যাবসায়ী। তাদের মধ্যে ৩০ জন গডফাদার ও ৭২ জন ইয়াবা ব্যাবসায়ী রয়েছেন। শতর্গুলো হলো ১. নিজের হেফাজতে থাকা সব ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে, ২ আত্মসমপের্ণর আগে দায়ের হওয়া মামলা ও বিচার কাযর্ক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলবে, ৩. ইয়াবা ব্যবসায় নিজের ও পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে অজির্ত সকল সম্পদ দুদক, সিআইডির মানি লন্ডারিং শাখা ও এনবিআরের মাধ্যমে যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে, ৪. আত্মসমপর্ণ প্রক্রিয়ায় দায়ের হওয়া মামলায় সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সহায়তা প্রদান করা হবে, ৫. যে সকল মাদক ব্যবসায়ী এখনো সক্রিয় তাদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে, ৬. আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় মাদকবিরোধী কমর্কাÐ করতে হবে, ৭. ভবিষ্যতে কখনো মাদক ব্যবসাসংক্রান্ত অপরাধে জড়িত হওয়া যাবে না, ৮. আত্মসমপর্ণ প্রক্রিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে যে মামলাটি রুজু হবে, সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের আইনগত সুবিধা প্রদানের বিষযটি বিবেচনা করা হবে, ৯. মাদক ব্যবসার মাধ্যমে নিজের পরিবারের আত্মীয়-স্বজনের নামে ও বেনামে অজির্ত সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি যাচাইয়ের জন্য দুদক, (সিআইডি মানিলন্ডারিং শাখা), এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সব সংস্থার নিকট তাদের তথ্যাদি পাঠাতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে