বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটে নেতা নির্বাচন করতে চায় বিএনপি

যাযাদি রিপোটর্
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:১১

ভোটে নেতা নিবার্চনের মাধ্যমে দল পুনগর্ঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। শীষর্ এবং সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সুসম্পকর্ বা কমিটি বাণিজ্যের মাধ্যমে আর বিএনপির নেতা হওয়া যাবে না। ভোটের মাধ্যমে অঙ্গ ও সহযোগী এবং সমথির্ত সংগঠনগুলোকে পুনগর্ঠনের পরে কেন্দ্রীয় পযাের্য়ও একইভাবে নেতা নিবার্চনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন চরম বিপযের্য়র পর সংগঠন পুনগর্ঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। প্রাথমিক পযাের্য় বিভিন্ন স্তরের কমিটিগুলো ভেঙ্গে নতুনভাবে করার কথা ভাবা হয়। এজন্য নতুন করে কাদের কমিটিগুলোর নেতৃত্ব আনা যায় তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিষয়টি নিয়ে সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। বিগত সময়ে একটি সংগঠনের কাউন্সিলের মাধ্যমে নিবাির্চত হওয়া দলের এক নেতা তাকে সবর্স্তরের কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে করার পরামশর্ দেন। সে অনুযায়ী পরবতীর্ কমিটিগুলো কাউন্সিলের মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএনপি সূত্রমতে, কাউন্সিল করার জন্য এরই মধ্যে কয়েকটি সংগঠনের আগের কমিটি বিলুপ্ত করে আহŸায়ক কমিটি করা হয়েছে। এসব আহŸায়ক কমিটির নেতারা কাউন্সিলে প্রাথীর্ হতে পারবেন না। তারা সুষ্ঠুভাবে কাউন্সিল করার দায়িত্ব পালন করবেন। আর আহŸায়ক কমিটি পূণার্ঙ্গ না করে নেতা থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে না। কারণ আহŸায়ক কমিটিকে কাউন্সিলের জন্য যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে সেই সময়ের মধ্যে কাউন্সিল করতে না পারলে আহŸায়ক কমিটিও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, আহবায়ক কমিটি করার প্রক্রিয়াও এবার বিগত সময়ের মতো হচ্ছে না। আহŸায়ক কমিটি করার আগে বিবদমান নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ক হিসেবে দলের সিনিয়র এক নেতা বিষয় ভিত্তিক সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করছেন। সব নেতারে কাছ থেকেই আহŸায়ক কমিটির তালিকা নেয়া হচ্ছে। এরপর তালিকা ছোট করে কমন একটি কমিটি করে আবারও নেতাদের সঙ্গে বসে ছোট কমিটি করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় যেহেতু আহŸায়ক কমিটির নেতারা পূণার্ঙ্গ কমিটির নেতা হওয়ার জন্য কাউন্সিলে অংশ নিতে পারবে না সেহেতু বিবাদ প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা থাকছে না। আর আহŸায়ক কমিটি গঠনেও তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। কারণ পূণার্ঙ্গ কমিটির নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী অনেকেই আহŸায়ক কমিটিতে থাকতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, শীষর্ নেতার আশীবার্দ এবং কমিটি বাণিজ্যের মাধ্যমে নেতা নিবাির্চত হওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে পদে পদে। এজন্য এখন থেকে ভোট ছাড়া আর কেউ নেতা হোক তা চাচ্ছে না দলের হাইকমান্ড। তাই এরই মধ্যে পুনগর্ঠনের কাযর্ক্রম শুরু হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে ব্যাপক অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে। এবারের প্রক্রিয়া এতটাই গণতান্ত্রিক হবে যে, নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যেই কমিটিগুলো হতে পারে। বিএনপি সূত্রমতে, পুনগর্ঠনের অংশ হিসেবে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও কৃষিবিদদের সংগঠন ‘এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (অ্যাব) এর আংশিক আহŸায়ক কমিটি গঠন করা হয়ছে। এছাড়া অঙ্গ সংগঠন মৎস্যজীবী দলেরও আহŸায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহŸায়ক কমিটিগুলোকে পূণার্ঙ্গ কমিটি করার জন্য সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জানিয়ে দেয়া হয়েছে এই সময়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে না পারলে আহŸায়ক কমিটিও অটোমেটিক বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এছাড়া ছাত্রদলসহ মেয়াদোত্তীণর্ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব কমিটি আর প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ‘সুপার ফাইভ’ বা ‘সুপার সেভেন’ নামে হবে না। কাউন্সিলের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নেতা নিবার্চন হবে। জানা গেছে, ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগেই। যুবদলের পূণার্ঙ্গ কমিটি ঝুলে আছে দীঘির্দন ধরে। স্বেচ্ছাসেবক দলেরও একই অবস্থা। কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দলের অবস্থা আরও বেহাল। নিবাির্চত নেতাদের মাধ্যমেই এসব কমিটি পুনগর্ঠন করা হবে। পুনগর্ঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত দলের এক প্রভাবশালী নেতা জানান, বিএনপির তৃণমূল থেকে নেতা নিবাির্চত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াডর্, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা, পৌর, জেলা-মহানগরে কাউন্সিলের মাধ্যমে নিবাির্চত কমিটি হবে। অঙ্গসংগঠনগুলোতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় নিবার্হী কমিটির জন্যই একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হতে পারে। জানা যায়, কাউন্সিলের মাধ্যেমে এখনই অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনগর্ঠনের বিষয়ে বিএনপিতে আপাতত দ্বিমত না থাকলেও নিবার্হী কমিটি পুনগর্ঠনের বিষয়ে মতানৈক্য আছে। দলের শীষর্ পযাের্য়র একাংশ বলছে, বেগম জিয়ার অনুমতি নিয়ে এখনই বিএনপিকে গোছাতে হবে। দল পুনগর্ঠন করেই তার মুক্তি আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে হবে। নতুন নিবার্চনের দাবিও আদায় করা সহজ হবে। আরেকাংশ বলছে, বেগম জিয়ার মুক্তির পর বিএনপি গোছাতে হবে। নইলে যে কোনো ধরনের বিপযর্য় ঘটে যেতে পারে। দল পুনগর্ঠনের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির বিভিন্ন পযাের্য়র কমিটি পুনগর্ঠনের কাজ চলছে। কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে এখন থেকে নেতা নিবাির্চত হবেন। বিভিন্ন সংগঠনের আহŸায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কমিটি পূণার্ঙ্গ করতে আহŸায়ক কমিটিকে সময় বেঁধে দেয়া হচ্ছে। বেঁধে দেয়া সময়ই আহŸায়ক কমিটির মেয়াদ। এই সময়ের মধ্যে কমিটি পুনগর্ঠন করতে না পারলে আহŸায়ক কমিটিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে