শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এএফপির প্রতিবেদন নিজেদের জন্যই হাসিনাকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র

যাযাদি ডেস্ক
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সাম্প্রতিক নিবার্চন নিয়ে আন্তজাির্তক পরিমÐলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লেও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কমর্কাÐ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। এতে দুই দেশের সাধারণ স্বাথর্ প্রাধান্য পাচ্ছে। নিজেদের স্বাথের্র জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একজন উপকারী সহযোগী হিসেবেই মনে করে ওয়াশিংটন।

এসব মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক উড্রো উলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান। বাংলাদেশের নিবার্চন, নিবার্চন-পরবতীর্ ওয়াশিংটন-ঢাকার সম্পকর্ ও স্বাথর্ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ফরাসি বাতার্সংস্থা এএফপির সঙ্গে।

বিশ্বের অষ্টম জনবহুল ও মডারেট মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের মানুষ পশ্চিমা বিশ্বের সহযোগিতাকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের উষ্ণ সম্পকর্ রয়েছে, তবে সে রকম ঘনিষ্ঠ নয়।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নিবার্চনে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসনে জয়ী হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া দুনীির্তর মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তবে বিরোধীরা তার এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।

পযের্বক্ষকদের বাংলাদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না বলে নিবার্চনের আগে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের জন্য বৃহত্তর প্রচেষ্টা নিশ্চিতের আহŸান জানায় দেশটি। কিন্তু নিবার্চনের পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতা কামনা করে একটি চিঠি লেখেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিঠিতে বাংলাদেশে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুরক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে তার প্রতিশ্রæতি পুনবার্স্তবায়নের আহŸান জানান মাকির্ন প্রেসিডেন্ট।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ইস্যুতে অত্যন্ত কঠোর শেখ হাসিনা। এই দলটির পঁাচ নেতাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফঁাসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কাযর্কর করা হয়েছে।

এছাড়া প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দেশটির সেনাবাহিনীর নিমর্ম অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাংলাদেশের এ প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান বলে মন্তব্য করেছে। এই সঙ্কটকে আঞ্চলিক সঙ্কটে পরিণত না করতে মিয়ানমারের প্রতি আহŸান জানায় সংস্থাটি।

মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে একজন উপকারী অংশীদার হিসেবে দেখছে। সন্ত্রাসের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কঠোর। তার নেতৃত্বে তাৎপযর্পূণর্ অথৈর্নতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।’

‘বাংলাদেশ কাযর্করভাবে একদলীয় কতৃর্ত্ববাদী রাষ্ট্র হয়ে উঠছে। তবে দেশটির পরিস্থিতি মূলত ওয়াশিংটনের সঙ্গে খাপ খায়। তারপরও আমি মনে করি, বাংলাদেশে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সত্তে¡ও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার একজন সমথর্ক ও চচার্কারী হিসেবে ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র।’

বৃহৎ পরিসরে সম্পকর্ চায় যুক্তরাষ্ট্র

নিবার্চনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগকে গুরুতরভাবে নেয়নি বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, নিবার্চনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিবৃতি ছিল হতাশাজনক। এই বিবৃতির জন্য ঢাকায় নিযুক্ত মাকির্ন দূতাবাসে কমর্রত বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় সমথর্কদের দায়ী করেছেন তিনি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পকের্ক স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পকর্ আরো জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করে জয় বলেছেন, ‘বাংলাদেশে মাকির্ন বিনিয়োগ আকষর্ণই অগ্রাধিকার পাবে। আমাদের বিশাল ভোক্তা বাজার রয়েছে। এখানে প্রায় আট কোটি মধ্যবিত্ত মানুষ রয়েছেন।’

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ্বের অল্প যে কয়েকটি সন্ত্রাসমুক্ত মুসলিম দেশ রয়েছে বাংলাদেশকে সেগুলোর একটি হিসেবে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকালীন দুরবস্থার আলোকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে সরকার প্রকৃত সহানুভূতি অনুভব করেছিল। তবে ইউরোপে অভিবাসীরা যে ধরনের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন, এখানে সে ধরনের পরিস্থিতি হয়নি।

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূণর্ সম্পকর্ দেখা যাচ্ছে। মাকির্নবান্ধব ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তৈরির যে লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে এটিও তার একটি গুরুত্বপূণর্ অংশ। প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কায় চীনের ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নকাজ পরিচালনা করছেন চীন। তবে উচ্চ অবকাঠামো নিমাের্ণ চীনের সঙ্গে বড় ধরনের কোনো চুক্তি করেনি বাংলাদেশ।

তবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পকের্র ক্ষেত্রে বেশি স্পশর্কাতর ফ্যাক্টর হচ্ছে প্রতিবেশী, আঞ্চলিক শক্তি ও ওয়াশিংটনের অন্যতম মিত্র ভারত। এই দেশটি শেখ হাসিনাকে দৃঢ়ভাবে সমথর্ন দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের সমালোচনা করার ক্ষেত্রেও ওয়াশিংটনের সুযোগ সীমিত। তবে বিরোধীরা আশাবাদী যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার মুখেও পড়তে পারে বাংলাদেশ।

বিএনপির আন্তজাির্তকবিষয়ক সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এটা পরিষ্কার করা উচিত যে, যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখা না যায়, তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পকর্ সীমিত করবে ওয়াশিংটন। সূত্র : এএফপি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36378 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1