শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
উপজেলা ভোট

নিবার্চনী আমেজ ফেরাতে আ’লীগের নানা কৌশল

বিএনপির অবহেলিত নেতাদের স্বতন্ত্র প্রাথীর্ করার চেষ্টা প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক পরিবেশ তৈরিতে জাপাই শেষ ভরসা বেশকিছু উপজেলায় ডামি প্রাথীর্ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান পদ
সাখাওয়াত হোসেন
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আসন্ন উপজেলা নিবার্চনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াতসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে ভোটারদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এতে শুরু থেকেই ভোটের মাঠে শীতল হাওয়া বইছে। এছাড়া প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীন এ নিবার্চনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে। বেগতিক এ পরিস্থিতিতে ভোটারদের মধ্যে নিবার্চনী আমেজ ফেরাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শাসক দলটি ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তবে এতেও নিবার্চনী মাঠে উৎসব আমেজ ফেরার সংশয় থাকায় ভিন্ন কোনো কৌশলে বিএনপি-জামায়াত কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের কাউকে স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে ভোটের মাঠে টেনে নেয়া যায় কিনা ক্ষমতাসীনরা এখন সে পথ খুঁুজে দেখছে। পাশাপাশি জাতীয় পাটিের্ক ভোটের মাঠে সরব রাখার নানা প্রচেষ্টা চলছে। বেশকিছু উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রাথীর্র বিপক্ষে কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী প্রাথীর্ না থাকায় সেখানে একাধিক ডামি প্রাথীর্ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে বলেও তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির স্থানীয় পযাের্য়র একাধিক নেতা জানান, দীঘির্দন ধরে দলে অবহেলিত বা নানাভাবে কোণঠাসা হয়ে থাকা নেতাদের উপজেলা নিবার্চনে অংশগ্রহণের জন্য ভিন্ন এঙ্গেল থেকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এতে দলছুট কিছু নেতা সেদিকে ঝুঁকেছেন। বিশেষ করে যেসব এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত তরুণ প্রাথীর্র চেয়ে বিএনপির অবস্থান শক্তিশালী ওইসব উপজেলাতে বেশকিছু স্থানীয় নেতা নিবার্চনে অংশ নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। তবে দলীয় নিদের্শ উপেক্ষা করে তাদের কেউ নিবার্চনে অংশ নিলে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানায় বিএনপি হাইকমান্ড।

এদিকে নিবার্চনী মাঠে শীতল হাওয়া বয়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকার মেনে না নিলেও খোদ ক্ষমতাসীন দলের শীষর্ নেতারা তা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে স্বীকার করেছেন। শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কাযার্লয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নিবার্চনে ভাইস চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ফলে আগ্রহী সব প্রাথীর্ই এ পদে অংশ নিতে পারবেন। বিএনপি যেহেতু নিবার্চনে আসছে না, সে কারণে নিবার্চনটা একটু জমজমাট হোক। প্রতিযোগিতা করে প্রাথীর্রা নিবাির্চত হয়ে আসুক।’ বিএনপির অনেকেই স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে নিবার্চনে অংশ নেবেন বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে খবর পাওয়ারও দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।

তবে নিবার্চনী আমেজ সৃষ্টির টাগের্ট নিয়ে ক্ষমতাসীনরা নানা তৎপরতা চালালেও দলীয়ভাবে বিএনপিকে ভোটের মাঠে টানার বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেবে না সরকার। বরং সরকারের শরিক এবং বাইরে থাকা ছোটখাটো দলগুলো নিয়েই নিবার্চনী পবর্ সেরে ফেলা হবে। যদিও এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপি জোটের কোনো কোনো দলকেও কাছে আনার চেষ্টা করা হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

রাজনৈতিক অঙ্গনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভোটের মাঠে প্রতিদ্ব›িদ্বতার আমেজ আনতে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পাটিের্ক গুরুত্ব দেয়া হলেও এতে উৎসাহ বা আগ্রহ কোনোটাই নেই দলের স্থানীয় পযাের্য়র নেতাদের। বিশেষ করে দুটি কারণে এই নিবার্চনে অংশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তারা। এর মধ্যে প্রধান কারণ হিসেবে সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছেন তারা । এছাড়া তৃণমূলের দুবর্ল সাংগঠনিক অবস্থা এবং কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার বিষয়টিও তাদের নিবার্চনে অনাগ্রহী করে তুলেছে।

অন্যদিকে তৃণমূলের প্রাথীের্দর আশঙ্কা, উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের যে প্রাথীর্ই নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকবেন তারাই জয় ছিনিয়ে নেবে। এক্ষেত্রে সেখানে নিবার্চনে অংশ নিলে জাতীয় পাটির্র প্রাথীর্র অযথা অথের্র অপচয় হবে। এছাড়া প্রতিপক্ষের হামলায় দলীয় নেতাকমীের্দর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই তারা অনেকটা স্বেচ্ছায় নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। যদিও নিবার্চনে অংশ নেয়ার জন্য তৃণমূলের বেশকিছু নেতাকে কেন্দ্র থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। সরকারকে খুশি রাখতেই জাপা হাইকমান্ড এ ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করেন তারা।

বিষয়টি দলের শীষর্ নেতারা স্বীকার না করলেও তৃণমূল নেতাদের আলাপচারিতায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শতের্ রংপুরের একটি উপজেলার জাপার একজন দায়িত্বশীল নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দল লাগবে, তাই খুব বুঝে-শুনে জাতীয় পাটির্র কয়েকজন নেতাকে এবারের সংসদ নিবার্চনে জেতার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে ভোট কতটা প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হয়েছে তা সবারই জানা। তাই এ নিবার্চনে অংশ নেওয়ার কোনো মানে হয় না।’

যদিও দলের প্রথম সারির নেতাদের ভাষ্য, প্রথম পযাের্য় জাতীয় পাটির্ স্বতঃস্ফূতর্ভাবে অংশ নেবে। তবে এই ভোট সুষ্ঠু না হলে পরবতীর্ ধাপে তারা আর অংশ নেবে না। দলীয়ভাবে ওই ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তারা।

জাতীয় পাটির্র কেন্দ্রীয় যুগ্ম দফতর সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক খান জানান, গতবার উপজেলা পরিষদ নিবার্চনে প্রাথীের্দর মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। এবার তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

এদিকে তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, নিবার্চনের মাঠে প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার আমেজ সৃষ্টি করতে বেশকিছু উপজেলাতে কৌশলে ডামি প্রাথীর্ দঁাড় করানোর চেষ্টা চলছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকমীর্রা তাদের নানাভাবে সহায়তা করছে। এমনকি তাদের প্রচার-প্রচারণাতেও ভিন্ন কৌশলে লোকবল সরবরাহ করারও আশ্বাস দেয়া হচ্ছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, এসব ডামি প্রাথীর্রা ভোটের মাঠে নানাভাবে শো-ডাউন দিলেও ভোটারদের কাছে জোরালোভাবে ভোট প্রাথর্না করছে না। বরং নিবার্চনে তার জয়লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ- কেউ কেউ এমন কথাও বলে বেড়াচ্ছেন।

নিবার্চন পযের্বক্ষকরা জানান, এমনিতেই একশ্রেণির স্বাথাের্ন্বষী মানুষ ভোট এলেই কোনো না কোনো পদে নিজেকে প্রাথীর্ হিসেবে ঘোষণা করেন। সামান্য জনসমথর্ন না থাকলেও তারা নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালান এবং শেষ সময়ে প্রভাবশালি প্রাথীর্র পক্ষে সমথর্ন জানিয়ে প্রাথীর্তা প্রত্যাহার করেন। বিগত সময় এ ধরণের প্রাথীের্দর কেউ পাত্তা না দিলেও এবার তাদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কেননা বেশকিছু উপজেলাতে আওয়ামী লীগ ছাড়া ছোট-বড় কোনো দলেরই কোনো প্রাথীর্ নেই। এতে নিবার্চন ছাড়াই বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এসব প্রাথীের্ক বিজয়ী ঘোষণা করতে হবে। যা এ মুহ‚তের্ আওয়ামী লীগের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে। তাই ডামি প্রাথীের্দর চাঙ্গা রেখে ক্ষমতাসীনরা সে দুনার্ম ঘোচাতে চাচ্ছে বলে মনে করেন নিবার্চন পযের্বক্ষকরা।

তাদের ধারণা, প্রথম ধাপের উপজেলা নিবার্চনে ভোটাররা আগ্রহ হারালে পরবতীর্ ধাপগুলো পার হওয়া আরো কঠিন হবে। জাতীয় পাটির্সহ অন্য যেসব দল এবার কোনোভাবে নিবার্চনে অংশ নিচ্ছে, তারাও আগামীতে পুরোপুরি সরে দঁাড়াবে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীনরা ফঁাকা মাঠে গোল দিয়ে জয়ের পাল্লা ভারী করলেও দেশে-বিদেশে তারা তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু রায়হান যায়যায়দিনকে বলেন, ‘নিবার্চনী ব্যবস্থার উপর থেকে এমনিতেই দেশের মানুষের আস্থা পুরোপুরি উঠে গেছে। এর উপর প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীনভাবে উপজেলা নিবার্চন সম্পন্ন হলে এ সংকট আরো বাড়বে। এ অবস্থায় হতাশাগ্রস্থ জনগণ অরাজনৈতিক আন্দেলনের দিকে ঝুঁকবে।’

তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা এ ধরনের দুটি বড় আন্দোলন দেখেছি। কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো বিক্ষিপ্ত আন্দোলন বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অথচ এ ধরনের নেতৃত্বহীন আন্দোলনের সমস্যা হলো সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এর সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। যেমন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাবি উপাচাযের্র বাসা তছনছ করা হয়েছে।

এ অবস্থায় সরকার যদি জনগণের মধ্যকার হতাশাটা বুঝতে সক্ষম হয় সেটা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। অন্যথায় বিরোধী নেতৃত্বহীনতার সুযোগটি দেশের আদশর্ বজির্ত গোষ্ঠীর হাতে চলে যাওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<36377 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1