শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় সমাবেশে শেখ হাসিনার ঘোষণা

সবার জন্য আ’লীগ সরকার

যাযাদি রিপোটর্
  ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৩২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা আমাদের ভোট দিয়েছেন এবং যারা দেননি প্রত্যেককেই আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা সবার জন্য কাজ করব। দল-মত নিবিের্শষে সবার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাবে।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করায় শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘বিজয় সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নিবার্চনে জনগণ স্বতঃস্ফূতর্ভাবে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ও মহাজোটকে বিজয়ী করেছে। এই বিজয় কেবল আওয়ামী লীগের নয়, এ বিজয় স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির, এ বিজয় সকল জনগণের। বিজয় উৎসবে আসার জন্য তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ সকল সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নিবার্চন কমিশনকে সুষ্ঠু নিবার্চন অনুষ্ঠানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি ভোটার ও তৃণমূলের নেতা-কমীের্দরও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতা-কমীর্রা এবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিবার্চনে অংশগ্রহণ করেছে। নিশ্চয়ই একটি কথা উপলব্ধি করেছে, ঐক্যবদ্ধ শক্তি সব সময় বিজয় অজর্ন করে এটা প্রমাণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সকল রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণ করে নিবার্চনকে অথর্বহ করায় তাদেরও ধন্যবাদ জানান। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জয়-পরাজয় স্বাভাবিক ব্যাপার। যখন দায়িত্ব পেয়েছেন জনগণের সেবা করার, দল-মত নিবিের্শষে সবার জন্য তাদের সরকার কাজ করে যাবে। প্রত্যেকের আথর্সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে। রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি নাগরিক তাদের কাছে গুরুত্বপূণর্। সকলের তরে, সকলের জন্য তারা কাজ করবেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নিবার্চনী ইশতেহারের পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে, সে ভোটের সম্মান যাতে থাকে অবশ্যই তারা মাথায় রেখে সাবির্কভাবে সুষম উন্নয়ন করে যাবেন। এ রায় সন্ত্রাসের, জঙ্গিবাদের, মাদকের বিরুদ্ধে, দুনীির্তর বিরুদ্ধে রায়। নিবাির্চত প্রতিনিধি যারা তাদের এটা মনে রাখতে হবে। দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ করা তাদের কতর্ব্য। বিজয় পাওয়া যত কঠিন, তা বিজয় রক্ষা করে জনগণের জন্য কাজ করা আরও কঠিন। সে কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন, তা পালন করতে হবে, সেটাই তিনি স্মরণ করিয়ে দিতে চান। শেখ হাসিনা বলেন, একাদশ সংসদ নিবার্চনে জনগণ জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাস ও দুনীির্তর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। শান্তি ও উন্নয়নের স্বপক্ষে রায় দিয়েছে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার জন্য রায় দিয়েছে। তরুণদের জন্য সুন্দর বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে রায় দিয়েছে জনগণ। মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশ গড়ে তোলার রায় দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশকে সম্পূণর্ দারিদ্র্যমুক্ত করতে সবার সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এটাই মূল লক্ষ্য যে মুক্তিযুদ্ধের আদশের্র চেতনা নিয়ে দেশ শাসন করে যাবেন। একটি উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন। যেখানে দেশের মানুষের সকলের সহযোগিতা চান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন যেমন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দঁাড়িয়ে আছে এবং যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেভাবে তারা দেশকে গড়ে তুলতে চান। সে জন্য যা যা করা দরকার করবেন। প্রতিটি গ্রাম-শহরের সকল নাগরিক সুবিধা পাবে। তৃণমূলে মানুষের জীবন উন্নত করবেন। শিক্ষার আলো প্রতিটি ঘরে ঘরে পেঁৗছে যাবে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে, প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। অথৈর্নতিক অঞ্চলে কমর্সংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবাষির্কীতে ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবণর্জয়ন্তীতে ক্ষুধামুক্ত- দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে বাংলাদেশ এগুলো উদযাপন করবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সেটাই তাদের প্রতিজ্ঞা। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশ থেকে যেমন দুনীির্ত দূর করতে হবে, তেমনি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সঙ্গে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ করতে হবে, যেখানে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, তারা যে অঙ্গীকার করেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ৪থর্ বারের মতো মানুষ তাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, খুনিরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর কোনো রক্ত বেঁচে থাকবে না, যাতে করে বাংলাদেশ আবার উঠে দঁাড়াতে না পারে। তিনি আর তার ছোট বোন ছয় বছর বিদেশে ছিলেন। সে সময় দেখেছেন বাংলাদেশের সেই চিত্র। ছিন্নবস্ত্র, দেখেছেন মাথা গেঁাজার ঠঁাই নেই, পেটে ক্ষুধার জ্বালা। তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে স্বপ্ন নিয়ে, আদশর্ নিয়ে বাবা স্বাধীন করেছেন, সেটা পূরণ করে যেতে পারেননি, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে যখন উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেন তখনই সেই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার জীবন উৎসগর্ করেছি। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েও প্রতিজ্ঞা করেছি, এ দেশকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছি যে বাংলাদেশে একটি মানুষও ক্ষুধাতর্ থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, সবাই চিকিৎসা পাবে, তরুণেরা কমর্সংস্থান পাবে। বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, লক্ষ্য।’ বেলা আড়াইটায় বিজয় সমাবেশ শুরু হয়। এতে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টামÐলীর সদস্য আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমÐলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে