শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ অবরোধ থেমে নেই

যাযাদি রিপোটর্
  ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:১৭
গত কয়েক দিনের মতো শনিবারও ঢাকার কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন কারখানার পোশাকশ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভ করে। ছবিটি মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে তোলা Ñযাযাদি

মজুরি কাঠামোর অসঙ্গতি দূর করার আশ্বাস সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হলেও পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ থেমে নেই। গত কয়েক দিনের মতো শনিবারও ঢাকার কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সড়কে বিক্ষোভে নামে। তবে পুলিশের তৎপরতায় দুপুর নাগাদ সড়ক ছেড়ে উঠে যায় শ্রমিকরা। ভাষানটেকের তামান্না গামের্ন্টসের শ্রমিকরা সকালে সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। ভাষানটেক থানার ওসি মুন্সি সাব্বির আহমেদ বলেন, “শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা করছিল। তাদের বুঝিয়ে ওঠানো হয়েছে।” একই সময় শেওড়াপাড়ার কয়েকটি কারখানার শ্রমিরাও সড়কে নেমে পড়ে। তাদের অবস্থানের কারণে রোকেয়া সরণিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির তখন বলেন, শ্রমিকদের শান্ত করতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুপুর নাগাদ এই শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে চলে যায়। দুপুর ১২টার দিকে গাবতলীর কাছে টেকনিক্যালে শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিলে সাভারমুখে গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি বাংলা কলেজের কাছে সেখানে সড়ক বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশের সঙ্গে তৎপর হয় ছাত্রলীগের স্থানীয় একদল নেতা-কমীর্। তারা শ্রমিকদের সড়ক থেকে তুলে দিলে বেলা পৌনে ১টার দিকে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় শনিবার দুপুরে কিছু সময়ের জন্য আবার সড়ক অবরোধ করে পোশাকশিল্প কারখানার শ্রমিকেরা। ১৫ মিনিট পর পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা অবরোধ তুলে নেয়। জানা গেছে, আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম গ্রæপের শ্রমিকেরা দুপুরের খাওয়ার বিরতির সময় কারখানা থেকে বেরিয়েছিলেন। নিধাির্রত সময় শেষে বেলা সোয়া দুইটার দিকে বেশির ভাগ শ্রমিক কারখানার ভেতরে ঢোকে। এ সময় কয়েক শ শ্রমিক কারখানার ভেতরে না ঢুকে কারখানার পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। ১৫ মিনিটের ওই অবরোধে সড়কের দুই পাশে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে আশুলিয়ায় শনিবার সকাল নয়টা থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছে। তারা দফায় দফায় আবদুল্লাহপুর-বাইপাস সড়ক অবরোধ করে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘষর্ হয়। ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। সকালে ৩০টি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভে অংশ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পাশাপাশি বডার্র গাডর্ বাংলাদেশ (বিজিবি) কাজ শুরু করে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এই বিক্ষোভ চলছে। ন্যূনতম মজুরির দাবিতে গত বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ করেছে তারা। এর আগে আশুলিয়ার কাঠগড়া, কুটুরিয়া, জামগড়াসহ কয়েকটি এলাকায় রাস্তায় নামে পোশাকশ্রমিকেরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘষের্ দুই পক্ষের ৩০ জনের মতো আহত হয়। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়া এলাকায় অধর্শত কারখানা বন্ধ ছিল। গত বুধবার শ্রমিক-পুলিশ সংঘষের্ প্রায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সাভার। শ্রমিকের মজুরি নিয়ে পুরোনো পথে হেঁটেছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। তারা বাড়িভাড়া, যাতায়াত, খাদ্য ও চিকিৎসা ভাতা বাড়িয়ে দিলেও মূল মজুরি বা বেসিক বাড়াতে কৃপণতা করেছেন। গত পঁাচ বছরে শ্রমিকের মূল মজুরি ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির বিষয়টিও আমলে নেয়া হয়নি। এ কারণে নতুন শ্রমিকের মোট মজুরি বা সবির্নম্ন গ্রেডে ২ হাজার ৭০০ টাকা বৃদ্ধি পেলেও দক্ষ বা পুরোনো ব্যক্তিদের তার অধের্কও বাড়েনি। মজুরিকাঠামোর এই কৌশলের জন্যই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শ্রমিকেরা। গত ২৫ নভেম্বর পোশাকশিল্পের জন্য নতুন মজুরিকাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। তাতে নিম্নতম মজুরি আট হাজার টাকা ধরা হয়। ডিসেম্বরে নতুন মজুরিকাঠামো কাযর্কর হয়। চলতি মাস থেকে নতুন কাঠামো মেনে বাড়তি মজুরি পেতে শুরু করে শ্রমিকেরা। তার আগে নিম্নতম মজুরি ছিল ৫ হাজার ৩০০ টাকা। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নতুন মজুরিকাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকেরা। বিজিএমইএ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের চেষ্টায় নিবার্চনের আগে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়। তবে গত রোববার ঢাকার উত্তরার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামে। পরের দিনগুলোতে তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে