শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
হামলা-গ্রেপ্তার বন্ধের দাবি

ঐক্যফ্রন্টের বিজয় শোভাযাত্রায় সংসদ নিবার্চনের আবহ

শোভাযাত্রা বিজয় দিবসের হলেও নেতাকমীর্রা বিভিন্ন প্রাথীর্র ছবি, পোস্টার, আর বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে অংশ নেয়ায় সেটি অনেকটা নিবার্চনী প্রচারে রূপ নেয়
যাযাদি রিপোটর্
  ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:১৯

পুলিশের সময় ও বেঁধে দেয়া ক্ষুদ্র সীমানার মধ্যে বিজয় শোভাযাত্রা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি ১২টা চার মিনিটে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা বিজয় দিবসের হলেও নেতাকমীর্রা বিভিন্ন প্রাথীর্র ছবি, পোস্টার, আর বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে অংশ নেয়ায় সেটি অনেকটা নিবার্চনী প্রচারে রূপ নেয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতি ছাড়াও নেতাকমীের্দর হাতে ছিল কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সংবলিত প্ল্যাকাডর্। নয়াপল্টনের কাযার্লয়ের সামনে ট্রাকে নিমির্ত অস্থায়ী মঞ্চ থেকে শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরামের নিবার্হী সভাপতি ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রাথীর্ সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-১৪ আসনের প্রাথীর্ আবদুস সালাম, ঢাকা-১ আসনের প্রাথীর্ আবু আশরাফ খন্দকার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা-৬ আসনের প্রাথীর্ সুব্রত চৌধুরী কমীর্-সমথর্কদের মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসেন। তাদের ব্যানারে ফ্রন্টের শীষর্ নেতা কামাল হোসেনের ছবি ছিল। ঢাকা-৯ আসনের প্রাথীর্ আফরোজা আব্বাস ধানের ছড়া দিয়ে সাজানো একটি ট্রাকে চড়ে বিশাল মিছিল নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তার ট্রাকেও জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় প্রতিকৃতি ছিল। বিজয় শোভাযাত্রায় ব্যান্ড দলও ছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশন করে। ঐক্যফ্রন্টের শোভাযাত্রা যখন শান্তিনগরের কাছে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে পৌঁছায়, তখন সেখানে মাইকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রচার চলছিল। সেখানে মোতায়েন ছিল বিপুল পুলিশ। কলেজের সামনের রাস্তা বিএনপি নেতাকমীর্রা ধানের শীষ প্রতীকে ¯েøাগান দিতে দিতেই পেরিয়ে যান। পরে শান্তিনগর মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে শোভাযাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। সেখান থেকে ¯েøাগান দিতে দিতে নেতাকমীর্রা আবার নয়াপল্টন ফিরে যান। এর আগে শোভাযাত্রার উদ্বোধনী বক্তব্যে মিজার্ ফখরুল মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসজর্নকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আজকের এই বিজয় দিবস হওয়া উচিত ছিল আমাদের আনন্দের উৎসবের। কিন্তু আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত, আমরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত এই দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে কি টিকে থাকবে না।’ নিবার্চন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নিবার্চন পরিচালনা করতে সম্পূণর্ ব্যথর্ হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘নিবার্চনে সব রকমের পক্ষপাতিত্ব শুরু করেছে সরকার এবং আমরা কখনো এই ধরনের নিবার্চন দেখিনি। নজিরবিহীনভাবে তারা বিরোধীদলের নেতাকমীর্ এবং প্রাথীের্দরকেও গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং প্রাথীের্দরকে নিবার্চন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে।’ নিবার্চনের প্রচারের সময় ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষ প্রাথীর্ মিজার্ আব্বাসের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একজন প্রাথীর্র ওপর এই ধরনের হামলা হওয়ার পরও নিবার্চন কমিশন নিবার্ক হয়ে তাকিয়ে থাকে, সরকার কিছুই করে না। ‘নোয়াখালী-১ আসনে ধানের শীষের প্রাথীর্ মাহবুবউদ্দিন খোকনকে গুলি করা হয়েছে। তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। ঢাকা-৬ আসনের প্রাথীর্ সুব্রত চৌধুরীর ওপরে গতকাল হামলা হয়েছে, তাকে প্রচার করতে দেয়নি। ঢাকা-৪ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিবার্চনী এলাকায় একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ বিজয় শোভাযাত্রাও বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের এই র‌্যালিও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। গতকাল বহু নেতাকমীের্ক গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের র‌্যালি ছিল ২টায়। সেটাকে তারা (পুলিশ) পরিবতর্ন করে সকাল ১০টায় নিয়ে এসেছে। এজন্য এটা করা আমাদের জন্য অসম্ভব ছিল। তারপরও নানা বাধার মধ্যে যারা এই র‌্যালিতে যোগ দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ জিয়াউর রহমানের ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ সম্বোধন করে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আপনারা সকলে অবগত আছেন, এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমরা নিবার্চনে যেতে রাজি হয়েছি। যারা ক্ষমতাসীন আছেন তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আবার ক্ষমতায় থাকার জন্য নীলনকশার ষড়যন্ত্র, নিযার্তন অব্যাহত রেখেছে। ‘আমাদের পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় কাজে ব্যবহার করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যাতে আমরা নিবার্চনের মাঠ ছেড়ে দিই। ১৬ কোটি মানুষ ও ১০ কোটি ভোটারের ওপর নিভর্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি এই নিবার্চনে অংশগ্রহণ করছে। ৩০ ডিসেম্বর জনগণ ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে রায় দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে এই হলে আজকের বিজয় দিবসের আহŸান।’ মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এটা বিজয়ের দিন আর আমরা একটা লড়াইয়ের মধ্যে আছি। এই লড়াই ভোটের লড়াই। নতুন যখন নিবার্চন আসলো তারা মনে করেছিল যে এই নিবার্চনটাতেও বোধহয় তারা ওয়াকওভার নিতে পারবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার ওয়াকওভার দেব না, আমরা নিবার্চনে অংশগ্রহণ করেছি, প্রাথীর্ দিয়েছি এবং সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’ শোভাযাত্রায় বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হারুনুর রশীদ, অপর্না রায়, আনোয়ার হোসেইন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, শাহ নেসারুল হক, হেলাল খান, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, দেবাশীষ রায় মধু, প্রদীপ কুমার সরকার, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ প্রমুখ অংশ নেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে