বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
জরুরি সংবাদ সম্মেলন

নিবার্চন নিয়ে আশঙ্কা কামাল হোসেনের

ড. কামাল হোসেন বলেন, ক্ষমতায় থাকার সব ধরনের চেষ্টাই তারা করছে। নিবার্চন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয় সে চেষ্টাই করছে ক্ষমতাসীনরা। ভোটারদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রাথীের্দর ওপর হামলা হচ্ছে।
যাযাদি রিপোটর্
  ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
ড. কামাল হোসেন

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আসন্ন নিবার্চন যাতে না হয় সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ ক্ষমতাসীনরা জনমত বুঝে গেছে। যে কারণে জোর করে ক্ষমতায় থাকার সব ধরনের চেষ্টাই তারা করছে। নিবার্চন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয় ক্ষমতাসীনরা সে চেষ্টাই করছে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই নিবার্চন হবে কি হবে না তা নিয়ে আশঙ্কা আছে।

শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কাযার্লয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ড. কামাল বলেন, ‘আমাদের স্বাধীন দেশের একটি সংবিধান রয়েছে। সেখানে কিভাবে নিবার্চন হবে সে বিধান রয়েছে। দেশের মালিক জনগণ। জনগণই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিবার্চন করে থাকে। সেজন্য নিবার্চন খুবই গুরুত্বপূণর্। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চনের জন্য খুব চেষ্টা করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে মিডিয়ারও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।’ ভোটাররা যেন স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য বাধা সৃষ্টিকারীদের শনাক্তের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহŸান জানান তিনি।

তিনি বলেন, খুবই দুঃখজনক যে, ভোটারদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। মিছিল মিটিংকারীদের আক্রমণ করা হচ্ছে, প্রাথীের্দর গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গুলি করা হচ্ছে। আরও দুঃখজনক যে, এসব ঘটনায় কোনো তদন্ত হয় না, কোনো আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। এসব তো খেয়াল খুশির ব্যাপার না।

তিনি আরও বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে নিবার্চন নিশ্চিত করার কথা সংবিধানে বলা হয়েছে। যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নিবার্চন অনিশ্চিত করার চেষ্টা করছে, বাধা সৃষ্টি করে, আক্রমণ করে এদের ব্যাপারে সংবিধান অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও তা নেয়া হচ্ছে না। সে কতর্ব্য পালনে আমরা ঘাটতি দেখছি।’

ড. কামাল বলেন, ‘শুধু বিরোধী দলের প্রাথীের্দর গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, এটা অবাক কাÐ। তাদেরই আক্রমণ করে বন্দিও করা হচ্ছে! অথচ যারা আক্রমণকারী তারা আক্রমণ করেই যাচ্ছে। এগুলো উদ্বেগের। স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা হচ্ছে, আসলে ভোটের দিন কী হবে।’

নেতাকমীর্ ও মিডিয়ার প্রতি আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের হয়ে পাহারা দিতে হবে। ভোটের দিন যেন সে রকম কিছু না ঘটে। যাতে ভোটাররা বঞ্চিত না হয়, অন্যের ভোট দেয়া ও জাল ভোট দেয়ার ঘটনা না ঘটে।’

প্রাথীর্-সমথর্কদের উপর আক্রমণ ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ আপনাদের। এমতাবস্থায় নিবার্চন হবে কি-না বা নিবার্চন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে কিনা? জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘আমরা তো তথ্য দিচ্ছি। আশঙ্কা তো আছেই। নিবার্চনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে দেয়া হবে না। এটা তো আপনারা দেখছেন আমরা দেখতেছি। জনমত কাদের পক্ষে তারা তো তা বুঝে গেছে। সরকার না-কি আমাদের পক্ষে। রাষ্ট্রপতির ডাক আমরা এখনো পাইনি। আশা করছি অনুমতি পাব। অনুমতি পেলে আপনাদের জানানো হবে।’

তিনি বলেন, নিবার্চনের আর ১৪ দিন। আপনারা সেভাবে মাঠে নামতেই পারেননি বলছেন। এমতাবস্থায় বাকি সময়টুকুতে আপনারা টিকে থাকতে পারবেন বলে মনে করেন?

সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই টিকে থাকতে পারব। জনমত থাকলে মাঠে টিকে না থাকার কোনো প্রশ্নই নেই।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সোমবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়েছিল। এ বিষয়ে জোটের শীষর্ নেতা কামাল হোসেন আশা করেন, দেখা করার অনুমতি তারা পাবেন। এ ছাড়া সোমবার সকালে হোটেল পূবার্ণীতে ১১টায় ইশতেহার ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

প্রাথীের্দর মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না, অভিযোগ করে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘পাকিস্তান আমলের নিবার্চনেও হামলা হয়নি। এখন শুধু হামলা না, গুলিও চালানো হচ্ছে।’

সরকারের উদ্দেশে জেএসডির সভাপতি আবদুর রব বলেন, ‘জনগণ যদি হামলা মোকাবিলা করতে যায়, তখন কী হবে। জনগণ জয়লাভ করতে যাচ্ছে। এখনো সময় আছে সংযত হোন, হামলা-মামলা বন্ধ করে আমাদের নিবার্চন করতে দেন।’ জয় বাংলা ¯েøাগান দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে, অভিযোগ করে রব বলেন, ‘জয় বাংলা ¯েøাগান আমরা দিয়েছি। হামলার জন্য জয় বাংলা ¯েøাগান হয়নি।’

হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার সব সরকারের মদদে হচ্ছে জানিয়ে ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সবকিছুর জন্য সরকার দায়ী। নিবার্চনকে যুদ্ধক্ষেত্র করার টেষ্টা চলছে। এর জবাব ব্যালট পেপারে দেয়া হবে।

বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ঐক্যফ্রন্ট মাঠে টিকে থাকবে। মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করার জন্য যা যা করা দরকার সরকার তা-ই করছে। সেটাকে প্রতিহত করেই তারা ৩০ তারিখ নিবার্চনে অংশ নেবেন।

নিবার্চন কমিশনের বাইরের অবস্থাকে ‘নিযার্তন কমিশন’ বলে আখ্যায়িত করেন বিএনপির আরেক নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিন বলেন, ‘ইসি সাধু পুরুষের মতো কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে তা পালন করে না।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঐক্যফ্রন্টের ৩০০ আসনের প্রাথীর্রাই প্রচারণায় বাধা পাচ্ছেন। ক্ষমতাসীনরা নিবার্চনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বন্ধ করার পথ খুঁজছে বলে অভিযোগ করা হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুর স্মৃতিসৌধে কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসন নিশ্চুপ এবং কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে জানায় ঐক্যফ্রন্ট। ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সেনাবাহিনীকে নামানোর দাবি জানায় এ জোট।

ঐক্যবদ্ধ জনগণের বিজয় অনিবাযর্

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহŸায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, যারা রুগ্ণ রাজনীতি করে, যারা লাঠিয়াল ব্যবহার করে, যারা কালোটাকা ব্যবহার করে, যারা জনগণকে মযার্দা দেয় না, তাদের ব্যাপারে সতকর্ থাকতে হবে। তারা স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ঐক্যবদ্ধভাবে রক্ষা করবেন। তারা বিশ্বাস করেন, ঐক্যবদ্ধ জনগণের বিজয় অনিবাযর্।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রদ্ধা জানান তিনি।

শ্রদ্ধা জানানোর সময় ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম খান, ঐক্যফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরাম নেতা মোস্তাফা মহসীন মন্টু প্রমুখ।

ড. কামাল হোসেন বলেন, বিজয় উদ্?যাপন করার জন্য আজকে তারা এখানে (জাতীয় স্মৃতিসৌধে) সমবেত হয়েছেন। এত লোকজন উপস্থিত হয়েছে দেখে খুব উৎসাহিত হচ্ছেন। দেখে বোঝা যাচ্ছে, লোকের উপস্থিতি বাড়ছে, কমছে না। মানুষ সচেতন হচ্ছে। স্বাধীনতাকে যে মূল্য দিয়ে অজর্ন করতে হয়েছে, তা এখানে এসে স্মরণ করা দরকার।

ড. কামাল হোসেন বলেন, লাখ লাখ লোক জীবন দিয়েছে। তাদের জীবনদানকে আমরা যেন সঠিকভাবে মূল্যায়ন করি, সে বিষয়ে আমাদের শপথ নেয়া দরকার। যারা জীবন দিয়েছিল, তারা যে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল, যেখানে সব মানুষ নিরাপদে থাকবে, তাদের কাজকমর্ পাবে, দেশে আইনের শাসন থাকবে।

ঐক্যফ্রন্টের আহŸায়ক বলেন, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধমির্নরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদÑ এই চার মূলনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিল। সেই বিষয়টি স্মরণ করতে করতে আমরা বলি, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। সঙ্গে সঙ্গে বলতে হবে, এখানে কোনো রকমের সন্ত্রাস, জোর জবরদস্তি, লাঠিয়ালদের ভূমিকা মেনে নেয়া যায় না।

ড. কামাল হোসেন বলেন, আসুন আমরা ঐক্যকে সুসংহত করি। যে ঐক্যকে সামনে রেখে বিজয় অজর্ন করেছিলাম, সেই শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোনো দিক থেকে এই ঐক্যের বিরুদ্ধে যারা লাগে, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<27488 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1