মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দাপুটে জয়ে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০৮
টাইগার শিবিরে এই উচ্ছ¡াস প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরও একটি উইকেটের পতন ঘটানোর পর। সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামে শুক্রবার তাদের ওই উচ্ছ¡াসে আর ভাটা পড়েনি। জয় এসেছে ৮ উইকেটে, যে জয়ে সিরিজটাও নিজেদের করে নিয়েছে মাশরাফির দল Ñবিসিবি

ব্যাট হাতে পছন্দের জায়গায় ফিরতেই চেনা ছন্দে সৌম্য সরকার। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটল সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামের অভিষেক ওয়ানডেতে। আরেক প্রান্তে ক্লাসিক ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল আরও একবার দেখিয়ে দিলেন, কেন তাকে এই সময়ে বিশ্বসেরা ওপেনারদের একজন মানা হয়। বিশ্বক্রিকেট আরও একবার দেখল, ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ঠিক কতটা শক্তিধর। একসময়ের পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শুক্রবার খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা। ৮ উইকেটের দাপুটে জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজটাও ২-১ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে মাশরাফি বিন মতুর্জার দল। বছরের শেষ সিরিজটি নিজেদের করে নেয়ার কাজটা মিরপুরেই সারতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের সেই চাওয়ায় বাধা হয়ে দঁাড়িয়ে গিয়েছিলেন একজন, শাই হোপ। তার অতিমানবীয় ব্যাটিংয়েই রুদ্ধশ্বাস দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটের হার দেখতে হয়েছিল টাইগারদের। এদিনও ক্যারিবীয়দের ইনিংসটাকে একা কঁাধে বয়ে নিয়ে গেছেন শাই হোপ। তবে সিরিজে তার টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ভর করেও ১৯৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তামিম-সৌম্যর ব্যাটে ওই রান বাংলাদেশ টপকে গেছে ৬৯ বল, অথার্ৎ ১১.৩ ওভার হাতে রেখে। মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের (৪/২৯) সঙ্গে মাশরাফি-সাকিব-সাইফউদ্দিনদের নৈপুণ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুথর্ সিরিজ জয়ের মঞ্চ গড়ে দিয়েছিল। সেই মঞ্চে দঁাড়িয়ে আনুষ্ঠানিকতাই সেরেছেন তামিম আর সৌম্য, সেটাও রাজসিক ঢঙে। ব্যক্তিগত ২৩ এবং দলীয় ৪৫ রানের মাথায় লিটন দাস বিদায় নেয়ার পর ব্যাট হাতে নেমে ক্যারিবীয় বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন সৌম্য। যেভাবে খেলে যাচ্ছিলেন এই বঁাহাতি, সেঞ্চুরিটাকে মনে হচ্ছিল সময়ের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষা অবশ্য ঘোচেনি, ৮০ রান করে থেমেছেন সৌম্য। ৮১ বলের ইনিংসে হঁাকিয়েছেন সমান ৫টি করে চার এবং ছক্কা। সাজঘরে ফেরার আগে তামিমের সঙ্গে ১৩১ রানের জুটিতেই দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিয়েছেন সৌম্য। মুশফিককে (১৪*) নিয়ে বাকি কাজটুকু সেরেছেন তামিম। আগের ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি তুলেই আউট হয়ে যাওয়া এই ওপেনার এদিন ব্যাট হাতে ছিলেন আরও বেশি সাবলীল। দুদার্ন্ত খেলে ক্যারিয়ারের ৪৪তম হাফসেঞ্চুরি তুলে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৮১ রানে। তামিমের ১০৪ বলের ইনিংসে ছিল ৯টি চারের মার। এমন দুদার্ন্ত ব্যাটিং প্রদশর্নীর আগে এদিন টাইগারদের বোলিংয়ের শুরুটাও ছিল দারুণ। বোলাররা লাইন-লেংথ হারিয়েছেন খুব কমই। আঁটসাঁট বোলিং করে যাওয়া স্বাগতিকরা করেছে ১৭৯টি ডট বল। সেঞ্চুরিয়ান শাই হোপের ৯ চার আর এক ছক্কার বাইরে এসেছে মোটে পাঁচটি চার আর একটি ছক্কা। সফরকারীদের ইনিংসের একটি জুটিও ৫০ রান ছুঁতে পারেনি। ব্যাটসম্যানরাও থিতু হতে পারেননি। ১০৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন শাই হোপ, সেখানে দ্বিতীয় সবোর্চ্চ মারলন স্যামুয়েলসের ১৯! হাবিবুল বাশারকে ছাড়িয়ে দেশকে সবচেয়ে বেশি ৭০ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেয়ার রেকডর্ গড়া মাশরাফি শুক্রবার টস জিতে নেন ফিল্ডিং। শুরুতেই চন্দরপল হেমরাজকে ফিরিয়ে অধিনায়কের মুখে হাসি ফোটান মিরাজ। আরেক প্রান্তে শাই হোপ খেলে গেছেন দারুণভাবে। কিন্তু তাকে ঠিকভাবে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। দুই অঙ্ক ছেঁায়ার পর মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ড্যারেন ব্রাভো। এরপর হোপ-স্যামুয়েলসের ব্যাটে ২ উইকেটে ৯৬ রানে পেঁৗছে মোটামুটি স্বস্তিতেই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরক্ষণেই স্বস্তিটা উধাও। মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ। স্যামুয়েলসকে বোল্ড করে ক্যারিবীয় শিবিরে ধাক্কা দেন একাদশে রুবেল হোসেনের জায়গা নেয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মিরাজ দুই ওভারের শেষ স্পেলে ফেরান শিমরন হেটমায়ার আর ক্যারিবীয় দলপতি রোভম্যান পাওয়েলকে। এরপর দুই অলরাউন্ডার রোস্টন চেস আর ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে দুই অঙ্ক ছেঁায়ার আগেই বিদায় করেন সাকিব। ১৪৩ রানে ৭ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইশ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান হোপ। তাকে খানিকটা সঙ্গ দেয়া কেমো পলকে বিদায় করেন মাশরাফি। বাংলাদেশ অধিনায়ক পরে তুলে নেন কেমার রোচের উইকেট। একপ্রান্ত আগলে রাখা হোপ সাকিবকে ছক্কা হঁাকিয়ে পূণর্ করেন ক্যারিয়ারের চতুথর্ সেঞ্চুরি। তার সেই সেঞ্চুরি শেষতক বৃথা গেছে। অফস্পিনার মিরাজ ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন ২৯ রান খরচায়। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে ২০০ ওয়ানডের মাইলফলক স্পশর্ করা মাশরাফি ২ উইকেট নিয়েছেন ৩৪ রানে। ২ উইকেট নিয়ে সাকিব খরচ করেছেন ৪০ রান। সংক্ষিপ্ত স্কোর ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ১৯৮/৯ (হেমরাজ ৯, হোপ ১০৮*, ব্রাভো ১০, স্যামুয়েলস ১৯, হেটমায়ার ০, পাওয়েল ১, চেস ৮, অ্যালেন ৬, পল ১২, রোচ ৩, বিশু ৬*; মিরাজ ৪/২৯, সাকিব ২/৪০, মাশরাফি ২/৩৪, সাইফ ১/৩৮) বাংলাদেশ: ৩৮.৩ ওভারে ২০২/২ (লিটন ২৩, তামিম ৮১*, সৌম্য ৮০, মুশফিক ১৪*; পল ২/৩৮) ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা: মেহেদী হাসান মিরাজ সিরিজ: ২-১ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ সিরিজসেরা: শাই হোপ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে