শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের শীষের প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন কামাল

ঐক্যফ্রন্ট নেতারা আজ সিলেট যাচ্ছেন
যাযাদি রিপোটর্
  ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
ড. কামাল হোসেন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এবার ধানের শীষ প্রতীকের নিবার্চনী প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীষের্নতা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে বরাবরের মতো এবারও ভোটের প্রচার শুরু করবেন ধানের শীষ মাকার্র প্রাথীর্রা। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের শীষর্ নেতারা আজ সিলেটে যাচ্ছেন। সেখানে হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরাণ (রহ.) ও মুক্তিযুদ্ধের সবাির্ধনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর মাজার জিয়ারত শেষে আনুষ্ঠানিক প্রচারে অংশ নেবেন তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, ড. কামাল হোসেন আজ দুপুরের ফ্লাইটে সিলেট যাবেন। সেখানে বেলা তিনটার পরে মাজার জিয়ারত করে পথসভায় অংশ নেবেন। কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ও ড জাফরুল্লাহ চৌধুরী বেলা দেড়টার ফ্লাইটে সিলেট যাবেন। আজ সারাদিন প্রচার প্রচারণা শেষে বৃহস্পতিবার তারা ঢাকায় ফিরে আসবেন।

আগের নিবার্চনগুলোতে বিএনপির নিবার্চনী প্রচারণা শুরু হতো দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সিলেট মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে। কিন্তু এবার তিনি দুনীির্তর মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা কামাল হোসেন এবার মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে প্রচার শুরু করবেন।

দুনীির্তর দুই মামলায় ১৭ বছরের দÐ নিয়ে কারাবন্দি বিএনপির শীষর্ নেতা খালেদা জিয়া। দলের শীষর্ নেতা তারেক রহমানও একাধিক মামলায় দÐিত হয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

তাদের অনুপস্থিতিতেই প্রতিক‚ল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবার ভোট করতে হচ্ছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিকে। সঙ্গী দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক মোচার্ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট। দুই জোটের সব দল এবার ধানের শীষ প্রতীকে নিবার্চন করছে।

ধানের শীষের নিবার্চনী প্রচারে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি বরাবরই আলাদা একটি মাত্রা যোগ করে। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার কথাই শেষ কথা। সংকটময় মুহূতের্ যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর বিএনপির রাজনীতি যখন মুখ থুবড়ে পড়েছিল, নেতারা যখন ছন্নছড়া, এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছিলেন, তখন দলের প্রয়োজনে রাজনীতিতে আসেন আপাদমস্তক গৃহবধূ খালেদা জিয়া।

দলের প্রাথমিক সদস্যপদ দেয়ার পর তাকে করা হয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান। ধীরে ধীরে রাজনীতিতে পরিণত হন খালেদা জিয়া। দলের চেয়ারপারসনের পদ দেয়া হয় তাকে।

এর পরের সময় শুধুই সফলতার। নব্বই দশকে গণতন্ত্রের জন্য টানা কয়েক বছর রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন তিনি। কারাবরণও করতে হয় তাকে। ওই আন্দোলনে তার আপসহীন ভূমিকা সবাইকে চমকে দেয়।

গৃহবধূর তকমা পেছনে পেলে আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পান খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে আলাদা ভাবমূতির্ গড়ে তোলেন তিনি। স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে রাজনীতির কণ্টকাকীণর্ পথে দৃঢ়তার সঙ্গে হঁাটতে থাকেন।

১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এই সময়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় তার নেতৃত্বেই। এর পর থেকে দেশের জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির প্রতিটি সংসদ নিবার্চনের কলাকৌশল নিধার্রণ ও প্রচারে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত দুটি নিবার্চনে তাকে সহায়তা করেছেন তার বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনিও একাধিক মামলায় দÐিত হয়ে বিদেশে নিবাির্সত জীবনযাপন করছেন।

এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে ছাড়াই দলীয় মনোনয়ন ঠিক করেছে বিএনপি। দুই মামলায় ১৭ বছর দÐিত হওয়ায় খালেদা জিয়ার নিবার্চন করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নিবার্চন কমিশন তার মনোনয়নের বৈধতা দেয়নি। আপিলেও প্রাথির্তা ফেরত পাননি। এখন হাইকোটের্ আপিল করেছেন তার আইনজীবীরা। কোটর্ই তার ভাগ্য নিধার্রণ করবেন।

এমতাবস্থায় খালেদা জিয়ার নিবার্চনে অংশ নেয়া ও তার মুক্তি নিয়ে ঘোর অমানিশায় দলের নেতাকমীর্রা। তার ভোটে অংশ নেয়া ও নিবার্চনী প্রচারে থাকা অনিশ্চিত ধরেই এগোচ্ছে বিএনপি।

খালেদা জিয়ার অবতর্মানে এবার ধানের শীষের প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন কে-এটি নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে রাজনীতির অলিগলিতে ও চায়ের কাপে ঝড় তুলছে। এ নিয়ে বিএনপি নেতাদেরও কপালে ভঁাজ। কারণ ভোটের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার একটি ‘ফেস ভ্যালু’ আছে। নিবার্চনী প্রচারে তার উপস্থিতি একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করে বিএনপির নেতাকমীের্দর মধ্যে। তিনি যে এলাকায় নিবার্চনী প্রচারে যান, সেখানে জোয়ার সৃষ্টি হয়। নেতাকমীর্রা প্রাণ ফিরে পান। তৃণমূল সব ভেদাভেদ ভুলে ধানের শীষের মোহনায় এক হয় খালেদা জিয়ার মুখপানে চেয়ে। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে যারা বিদ্রোহী প্রাথীর্ হন, তারাও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন খালেদা জিয়ার আশ্বাসে। তারা জানেন নেত্রী কথা দিলে কথা রাখেন। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিএনপিকে একটি ভীরু রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে এগোতে হচ্ছে। দলের মনোনয়ন নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ-অভিমানের। দুই বৃহৎ রাজনৈতিক জোট এবার বিএনপির নিবার্চনী সঙ্গী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে রয়েছে ৪টি দল। আর ২০-দলীয় জোটে ২৩ দল। তাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়েও অনেক মন কষাকষি হয়েছে।

সব মিলিয়ে বিএনপি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এই প্রতিক‚ল পরিবেশেও বিএনপি জোট ভোটের মাঠে থাকার বিষয়ে প্রত্যয়ী। তারা যে কোনো মূল্যে ভোট করতে চায়।

আর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তার বিকল্প হিসেবে ড. কামাল হোসেনের মতো একজন জাতীয় নেতাকে নিবার্চনী প্রচারের সামনে রাখতে চাইছে দুই জোট। প্রতি নিবার্চনের আগে সিলেট থেকেই ভোটের প্রচার শুরু করার রেওয়াজ বিএনপির। এবারও তার ব্যত্যয় হচ্ছে না। এবার ড. কামালের নেতৃত্বে সিলেট থেকে ধানের শীষের নিবার্চনী প্রচার শুরু হচ্ছে।

পযার্য়ক্রমে সড়কপথে সারা দেশে প্রচার চালাবেন দুই জোটের শীষর্ নেতারা। এ সময় পথসভায় অংশ নেবেন নেতারা।

এ বিষয়ে নিবার্চন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকা দুই জোটের প্রধান শরিক বিএনপির এক নেতা বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ফ্রন্টের শীষর্ নেতা ড. কামাল হোসেন হয়তো সিলেটের পর ঢাকার বাইরে যেতে পারবেন না। তবে তিনি ঢাকা মহানগরীর নিবার্চনী এলাকায় প্রচারে অংশ নেবেন।

সারা দেশে প্রচারে মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আবদুর রব, কনের্ল (অব.) অলি আহমদ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিএনপি, ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতারা থাকবেন।

সূত্র জানায়, সিলেটসহ সারা দেশে প্রচারের জন্য ইতোমধ্যে সম্ভাব্য তারিখসহ একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ নিয়ে নিবার্চন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে দুই জোটের শীষর্ নেতাদের প্রচারে অংশ নেয়ার বিষয়ে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক নিবার্চন পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুটি করে আসনে নিবার্চন করছেন। তাই তারা সারা দেশের অনেক জায়গায়ই প্রচারে যেতে পারবেন না। কারণ তারা তাদের নিবার্চনী এলাকায়ও সময় দিতে চান।

এ ছাড়া আ স ম আবদুর রব, কনের্ল (অব.) অলি আহমদ, মাহমুদুর রহমান মান্নাও নিবার্চন করছেন। তারাও হয়তো অনেক জায়গায় প্রচারে যেতে পারবেন না। তবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নিবার্চন না করার কারণে তাকে সব সময় পাওয়া যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<26688 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1