শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
২০০ আসনে মহাজোটের বিকল্প প্রার্থী

বিনা ভোটরে ঝুঁকি এড়াতে উন্মুক্ত আসনরে কৌশল!

শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এসব আসনে প্রাথির্তা দেয়া হয়েছে। কোনো আসনে মহাজোটের শক্তিশালী প্রাথীর্ থাকলে শেষ মুহ‚তের্ তাকে সমথর্ন দেয়া হবে
ফয়সাল খান
  ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:০৩

বিএনপি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সব দাবি উপেক্ষা করেও একটি অংশগ্রহণমূলক নিবার্চনের পথে এগুচ্ছে সরকার। নিবার্চন অথর্বহ ও সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে তারা। সরকারের প্রত্যাশা শেষ পযর্ন্ত সব দলই নিবার্চনী মাঠে থাকবে। তবে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট যদি কোনো কারণে নিবার্চন বজর্নও করে তাও আন্তজাির্তক মহলে একটি গ্রহণযোগ্য নিবার্চন দেখাতে চায় সরকার। এমন কৌশল হিসেবে বেশির ভাগ আসনেই ডাবল প্রাথীর্ রেখেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ভোটের লড়াইয়ে নামতে এরই মধ্যে প্রাথীর্ চূড়ান্ত করেছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট। এবার দেশের নেতৃস্থানীয় সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়ায় একটি অংশগ্রহণমূলক নিবার্চনের প্রত্যাশা করছে সবাই। তবে বিরোধী জোটের প্রায় সব দাবিদাওয়া উপেক্ষা করে দলীয় সরকারের অধীনে নিবার্চন অনুষ্ঠান করায় আন্তজাির্তক ও দেশীয় মহলের বিভিন্ন ধরনের চাপ রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ওপর। নিদর্লীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চন দেয়াসহ বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে নিবার্চন বজের্নর হুমকিও দিয়েছে বিএনপি ও তাদের জোট মিত্ররা। এমন অবস্থায় সব আসনে জোটগত একক প্রাথীর্ দিলে আবারও অনেক আসনে ‘ বিনা ভোটে’ এমপি নিবাির্চত হওয়ার একটি ঝুঁকি থেকে যায়। তাই জোট শরিকদের জন্য ছাড় দেয়া আসনের বাইরেও বেশির ভাগ আসন উন্মুক্ত রাখছে আওয়ামী লীগ। যাতে বিএনপি জোট নিবার্চন বজর্ন করলেও আন্তজাির্তক মহলে একটি অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন দেখানো যায়। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ ও আন্তজাির্তক বিভিন্ন সংস্থা এরই মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছে। এরই মধ্যে নিজেদের জন্য ২৫৮টি আসন রেখে জোট-মহাজোট শরিকদের জন্য ৪২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে এর বাইরে প্রায় দুশ আসনে মহাজোটের অন্য শরিক দলগুলোর প্রাথীর্ রয়েছে। শরিকদলগুলোর নেতারা বলছে, মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এসব আসনে প্রাথির্তা দেয়া হয়েছে। কোনো আসনে মহাজোটের শক্তিশালী প্রাথীর্ থাকলে শেষ মুহ‚তের্ তাকে সমথর্ন দেয়া হবে। তবে কোনো কারণে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট নিবার্চনে না এলে উন্মুক্ত নিবার্চন করবে এসব প্রাথীর্। আওয়ামী লীগের নীতিনিধার্রণী পযাের্য়র একটি সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নিবার্চনে সরকার গঠন করলেও বিভিন্ন সময় নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশেষ করে ১৫৪ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নিবাির্চত হওয়ায় ওই নিবার্চন নিয়ে আন্তজাির্তক মহলে প্রশ্ন ওঠে। তাই এবার যাতে কেউ বিনা ভোটে নিবাির্চত না হয় সে লক্ষ্যে আগেভাগেই সতকর্ ছিল আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে জাতীয় পাটির্ ৩০০ আসনে নিবার্চন করার ঘোষণাও দেয়। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পাটির্র মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, প্রতিটি আসনে জাতীয় পাটির্ ও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রাথীর্ রয়েছে। এটা নিয়ে একটু অসুবিধা হচ্ছিল। পরে মহাজোট থেকে সিদ্ধান্ত আসে, কিছু আসন উন্মুক্ত করে দেয়ার। এ আসনগুলোতে দু’দলের প্রাথীের্দর নিবার্চন করতে কোনো বাধা নেই। জোটগতভাবে ২৯টি এবং উন্মুক্তসহ ১৭৪টি আসনে জাতীয় পাটির্ নিবার্চন করবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, উন্মুক্ত নিবার্চনে মহাজোটের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ, শেষ মুহ‚তের্ মহাজোটভুক্ত যে প্রাথীর্ শক্তিশালী, তাকেই সমথর্ন দেয়া হবে। সূত্রমতে, মহাজোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক জাতীয় পাটিের্ক (জাপা) লাঙল প্রতীকে ২৬টি আসন ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে জাপার দবি, তাদেরকে ২৯টি আসন দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটি আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন জাপার প্রাথীর্রা। বরিশাল-৩ আসনে জাতীয় পাটির্র গোলাম কিবরিয়া টিপু, কুড়িগ্রাম-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান ও টাঙ্গাইল-৫ আসনে শফিউল্লাহ আল মনির নৌকা প্রতীকে লড়বেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া আরও ১৪৫টি উন্মুক্ত আসনে লাঙল প্রতীক নিয়ে নিবার্চন করবে জাতীয় পাটির্র প্রাথীর্রা। এর বাইরে জাপার জন্য ছেড়ে দেয়া বরিশাল-৩ আসনে ওয়াকার্সর্ পাটির্র সঙ্গে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এ আসনটিসহ ওয়াকার্সর্ পাটির্র জন্য ৫টি আসন ছাড়া হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের অন্য চার শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-(জাসদ-ইনু) ৩, তরিকত ফেডারেশন ২, জাতীয় পাটির্ (জেপি) ২ এবং বাংলাদেশ জাসদকে (আম্বিয়া) ১টি আসন দেয়া হয়েছে। এছাড়া মহাজোটের নতুন শরিক বিকল্পধারা বাংলাদেশকে ৩টি আসনে ছাড় দিয়েছে ক্ষতাসীন আওয়ামী লীগ। বিকল্পধারার তিন নেতা মহাজোট প্রাথীর্ হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন। এর বাইরে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের কুলা প্রতীক নিয়ে আরও ২০টি আসনে তাদের প্রাথীর্ রয়েছে। যেখানে মহাজোট মনোনীত প্রাথীর্ও থাকবে। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ল²ীপুর-৪, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যুক্তফ্রন্টের মুখপাত্র মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১, প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এম শাহীন মৌলভীবাজার-২ আসনে মহাজোটের প্রাথীর্ হিসেবে নৌকা প্রতীকে নিবার্চন করবেন। বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের নেতারা আরও ২০ আসনে লড়বেন কুলা প্রতীক নিয়ে। সিলেট-৬ আসনে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যুক্তফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক গোলাম সারোয়ার মিলন মানিকগঞ্জ-২, বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা সাতক্ষীরা-৪ ও ঢাকা-১৫, বিএলডিপির চেয়ারম্যান এম নাজিমউদ্দিন আল আজাদ যশোর-৪ এবং মেজর (অব.) শাহেদ সরওয়ার কক্সবাজার-২ আসনে কুলা প্রতীক নিয়ে নিবার্চন করবেন। তাছাড়া দিনাজপুর-২, মো. আশরাফুল ইসলাম, রংপুর-২, ইঞ্জিনিয়ার হারুন-অর-রশিদ তালুকদার, কুড়িগ্রাম-২, আবুল বাশার, রাজশাহী-৩, মো. মনিরুজ্জামান, নাটোর-৩ এইচ এম গোলাম রেজা, যশোর-৩ মারুফ হোসেন কাজল, বরিশাল-৩, মো. এনায়েত কবির, টাঙ্গাইল-২, গোলাম সারোয়ার মিলন, ঢাকা-৪, কবির হোসেন, ঢাকা-১৩, মো. মাহবুবুর রহমান, এইচ এম গোলাম রেজা, ঢাকা-১৭, এ কে এম সাইফুর রশিদ, ঢাকা-১৯, আইনুল হক, কুমিল্লা ১১, মাওলানা শামছুল হক জেহাদী, নোয়াখালী-১, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক কুলা প্রতীক নিয়ে লড়বেন। তাছাড়া জাসদ ৪টিসহ ছোট দলগুলোকে নিজেদের মতো প্রাথীর্ রাখতে বলা হয়েছে। তবে শেষ মুহ‚তের্ জোটের প্রয়োজনে মূল প্রাথীের্ক সমথর্ন দেয়ার মৌখিক নিদের্শনা দেয়া আছে বলে জানিয়েছে শরিকদলগুলোর নেতারা। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর অন্যতম সদস্য কনের্ল (অব.) ফারুক খান যায়যায়দিনকে বলেন, উন্মুক্ত আসনের ব্যাপারে শুধু জাতীয় পাটির্র সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। অন্য কারো সঙ্গে এমন চুক্তি হয়নি। এসব আসনে আর প্রাথির্তা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। রোববার দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেগুলোতে প্রাথির্তা প্রত্যাহার করা হয়নি, সেগুলো উন্মুক্ত থাকবে। সব দলেরই কিছু নিজস্ব চিন্তাধারা থাকে। সবাই নিজের অবস্থান দেখতে চায়। নিবার্চন করে যেই জয়ী হয়ে আসুক, তাতে আপত্তি নেই। তাই উন্মুক্ত আসন থেকে কাউকে প্রত্যাহার করার কোনো চিন্তা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে নৌকা বা মহাজোটের ভোটে কোনো সমস্যা হবে না। বিএনপি তো মানুষ পুড়িয়েছে। জ্বালাও পোড়াও করে ভোট পাওয়া যায় না। ‘আমার তো মনে হয় বিএনপি একটি ভোটও পাবে না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে