টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজের শুরুতেও মাঠে দুধর্ষর্ এক বাংলাদেশকে দেখল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোববার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়দের রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা। জয় তুলে নিয়েছে ৫ উইকেটে। অমন দাপুটে জয়ের মঞ্চটা গড়ে দিয়েছিলেন বোলাররা, সেই মঞ্চে দাড়িয়ে ব্যাটসম্যানরা সেড়েছেন আনুষ্ঠানিকতা।
টস জিতে মিরপুরের রহস্যময় উইকেটে আগে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন ক্যারিবীয় দলপতি রোভম্যান পাওয়েল। কিন্তু তার সিদ্ধান্তকে যথাথর্ প্রমাণ করতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। আসলে সেটা করতে দেননি টাইগার বোলাররা। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়া ক্যারিবীয়রা ধুকতে ধুকতে শেষতক ১৯৫ রানে থামে। জবাব দিতে নেমে ৮৯ বল (১৪.৫ ওভার) হাতে রেখেই ওই রান টপকে যায় বাংলাদেশ। তাতে সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিকরা।
ইনজুরি কাটিয়ে দীঘর্ দিন পর দলে ফেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ব্যাট হাতে সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারলেও লিটন দাসের সঙ্গে ৩৭ রানের জুটি গড়ে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন। কিন্তু ৫ রানের ব্যবধানে তামিম (১২) এবং ইমরুল কায়েস (৪) বিদায় নিলে বড়সড় ধাক্কাই খায় বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা সেই ধাক্কা সামলে উঠে লিটন আর মুশফিকুর রহিমের ৪৭ রানের জুটিতে। একপ্রান্ত আগলে দারুণ খেলছিলেন লিটন। কিন্তু কেমো পলের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন দল শতরানের গÐি পেরোনোর আগেই। ৫টি চারের মারে ৫৭ বলে ৪১ রান করেন লিটন।
এরপর দায়িত্ব নিয়ে খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পেঁৗছে দেন মুশফিক। ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পথে এই কিপার-ব্যাটসম্যান চতুথর্ উইকেটে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। মূলত ওই জুটিতেই জয়টা বাংলাদেশের নাগালে চলে আসে। দীঘির্দন পর ওয়ানডে খেলতে নামা সাকিব ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। ৩০ রান করেছেন ২৬ বল খেলে, ৪টি চারের মারে। এরপর মারকাটারি ব্যাটিং শুরু করেন সৌম্য সরকারও। তবে ১৩ বল খেলে ২টি চার আর একটি ছক্কায় ১৯ রানের বেশি করতে পারেননি এই বঁাহাতি।
চেসকে ম্যাচে দ্বিতীয় উইকেট প্রাপ্তির স্বাদ দিয়ে সৌম্য যখন সাজঘরমুখী, জয় থেকে বাংলাদেশ তখন মাত্র ২১ রান দূরে। মাহমুদউল্লাহকে (১৪*) সঙ্গী করে ওই দূরত্বটা অনায়াসেই ঘুচিয়েছেন মুশফিক। ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে দুই রান নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের দশম জয়টা নিশ্চিত করেছেন তিনিই। ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। তার ৭০ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চারের মার।
এর আগে একাদশে তিন পেসার নিয়ে বাংলাদেশ মাঠে নামলেও দলপতি মাশরাফি বোলিং শুরু করেন দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ আর সাকিব আল হাসানকে দিয়ে। টেস্ট সিরিজে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছিলেন টাইগার স্পিনাররা, মাশরাফি এদিন সেই সুযোগটাই নিতে চেয়েছিলেন। টাইগার দলপতি ভুল করেছেন, এমনটা বলা যাবে না। শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন মিরাজ আর সাকিব।
দিনের প্রথম সাফল্যও আসে স্পিনারদের হাত ধরেই। নিজের চতুথর্ এবং ইনিংসের অষ্টম ওভারের শেষ বলে কায়রন পাওয়েলকে রুবেল হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান সাকিব। তবে সাই হোপ আর ড্যারেন ব্রাভোর প্রতিরোধে ওই উৎসব মিলিয়ে যেতেই বসেছিল। তখনই দৃশ্যপটে মাশরাফি। তিনি পরপর তুলে নেন দুই উইকেট। ফিরিয়ে দেন ব্রাভো আর সাই হোপকে। খানিক পরই শিমরন হেটমায়ারকে বোল্ড করেন মিরাজ। তাতে ১ উইকেটে ৬৫ থেকে অল্প সময়ের মধ্যে ৪ উইকেটে ৯৩ বনে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরবোডের্র চেহারা।
এরপর লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করে যাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়েছেন টাইগার বোলাররা। পরে পতন ঘটা ক্যারিবীয়দের ৫টি উইকেটই অবশ্য পেসারদের ঝুলিতে গেছে। শুরুতে উইকেটশূন্য থাকা মুস্তাফিজুর রহমান শেষবেলায় আলো ছড়িয়েছেন। ৩৫ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে এই বাহাতিই শেষদিকে লাগামছাড়া হতে দেননি অতিথি ব্যাটসম্যানদের। তবে দিনের সেরা বোলার তিনি নন, ৩০ রান খরচায় ৩ উইকেট নেয়া মাশরাফি। এছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন রুবেল, সাকিব আর মিরাজ।
ক্যারিবীয়দের পক্ষে সবোর্চ্চ ৪৩ রানের ইনিংসটি খেলেছেন ওপেনার সাই হোপ। এছাড়া কেমো পল ৩৬, রোস্টন চেস ৩২ রানের ইনিংস খেলেন। শেষদিকে কেমো পল আর রস্টন চেসের ব্যাটে চেপেই দুশো রানের কাছাকাছি যেতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে ওই পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি ক্যারিবীয় বোলাররা। তাই পরাজয় স্বীকার করে নিতে হয়েছে অতিথিদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৫০ ওভারে ১৯৫/৯ (কায়রন পাওয়েল ১০, হোপ ৪৩, ব্রাভো ১৯, স্যামুয়েলস ২৫, হেটমায়ার ৬, রোভম্যান পাওয়েল ১৪, চেস ৩২, পল ৩৬, রোচ ৫*; মিরাজ ১/৩০, সাকিব ১/৩৬, মুস্তাফিজ ৩/৩৫, মাশরাফি ৩/৩০, রুবেল ১/৬১)
বাংলাদেশ : ৩৫.১ ওভারে ১৯৬/৫ (তামিম ১২, লিটন ৪১, ইমরুল ৪, সাকিব ৩০, সৌম্য ১৯, মুশফিক ৫৫*, মাহমুদউল্লাহ ১৪*; চেস ২/৪৭, থমাস ১/৩৪, কেমো পল ১/৩৭, রোভম্যান পাওয়েল ১/৭)
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : মাশরাফি বিন মুতর্জা