বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত মুক্তিসেনা

যাযাদি রিপোটর্
  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা এগোচ্ছে দুবার্র গতিতে। স্বাধীনতা চাই, বিজয় চাই। হায়েনার থাবা থেকে প্রিয় মাতৃভ‚মিকে মুক্ত করতেই হবেÑ এ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত বীর সেনানীরা। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে চলছে সম্মুখ লড়াই। আজ ৭ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে শত্রæমুক্ত হয় গোপালগঞ্জ, শেরপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লার বরুড়া, সাতক্ষীরা ও সিলেটের বালাগঞ্জ।

এইদিন সূযর্ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মুক্তিযোদ্ধারা গোপালগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে। হাতে তাদের উদ্যত রাইফেল ও বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত রক্তলাল সূযর্সংবলিত সবুজ জমিনের পতাকা। মুখে বিজয়ের হাসি। চারদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের খবর পেয়ে এদিন পাক হানাদার সেনারা সদর থানা পরিষদের মিনি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়। ভোর রাতেই মেজর সেলিমের অধীনে হানাদার সেনার একটি দল এলাকা ছেড়ে চলে যায় ঢাকায়। অপর দলটি যায় কাশিয়ানী থানার ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশন ক্যাম্পে।

এদিকে অকুতোভয় মুক্তিবাহিনী মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ববর্র পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে শেরপুরকে মুক্ত করে। ৬ ডিসেম্বর ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসারসহ ছয়জন জোয়ান শেরপুরের মাটিতে শহীদ হন। অপরদিকে বিজয়ীর বেশে মুক্তিযোদ্ধার দল ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তপথে যথাক্রমে ক্যাপ্টেন আজিজ, জাফর ইকবাল ও রুহুল

আমিন তোতার নেতৃত্বে ওই দিন শেরপুর শহরে প্রবেশ করে। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর পূবার্ঞ্চলীয় সবাির্ধনায়ক জগজিৎ সিং অরোরা হেলিকপ্টারে স্থানীয় শহীদ দারগ আলী পৌর মাঠে অবতরণ করেন। সেদিন ওই স্থানে মিত্রবাহিনীর উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে হানাদার বাহিনী পিছু হটে। ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ জেলা শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মিছিল করেন। ৬ ডিসেম্বর রাত থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বালাগঞ্জ থানার চারদিকে অবস্থান নিতে থাকে। সকাল সোয়া ৮টায় তারা থানা ঘেরাও করে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ধরাশায়ী হয় থানা পুলিশ। মুক্তিযোদ্ধারা থানা চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায়।

৩ ডিসেম্বর লালমাই ও মুদাফফরগঞ্জ এবং ৬ ডিসেম্বর লাকসাম শত্রæমুক্ত হলে বরুড়া থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যেতে থাকে। পাকিস্তানি সৈন্যরা এখানে আত্মসমপর্ণ করে ৭ ডিসেম্বর।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা সাতক্ষীরাকে মুক্ত করতে জেলার সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। বিষয়টি অঁাচ করতে পেরে পাকিস্তানি হানাদাররা ৭ ডিসেম্বর ভোরে সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়।

৭ ডিসেম্বর ইসলামপুরের মাটি পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। ওই দিন মুক্তিযোদ্ধারা হাজারও মুক্তিকামী ছাত্রজনতাকে সাথে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করে ইসলামপুর থানা চত্বরে স্বাধীনতার প্রথম বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ইসলামপুর উপজেলার উত্তর দরিয়াবাদ ফকিরপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন মুজাহিদ বাহিনীর ১০০ সদস্যকে সংঘটিত করে ইসলামপুর জেজেকেএম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মাঠে সমবেত হন। পরবতীের্ত তাদের সাথে নিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেন। ’৭১-এর ১২ আগস্ট কনের্ল আবু তাহের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডারের নিদেের্শ বিভিন্ন পেশার লোকজনদের নিয়ে তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের একটি কোম্পানি গঠন করা হয়। সেক্টর কমান্ডারের নিদের্শ মোতাবেক ওই কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ইসলামপুর থানাধীন সিরাজাবাদ এলাকার বহ্মপুত্র নদীর পাড়ে আখক্ষেতে একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সেখান থেকেই গেরিলাযুদ্ধ চালানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই কোম্পানিটি জালাল বাহিনী নামেই পরিচিতি ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ পযাের্য় জালাল বাহিনীর সকল সদস্য ইসলামপুরে পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্প দখলের উদ্দেশে ৬ ডিসেম্বর দুপুরে ইসলামপুরের পলবান্ধা ইউনিয়নের পশ্চিম বাহাদুরপুর প্রাইমারি স্কুল মাঠসংলগ্ন সিরাজাবাদ রোডে অবস্থান নিয়ে চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে হানাদার ক্যাম্পে চারদিক থেকে আক্রমণ চালায়। ওই দিন দুপুর থেকে পরদিন ভোর পযর্ন্ত একটানা যুদ্ধ হয়। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে হানাদার বাহিনী অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য জিনিস পত্র ফেলে স্পেশাল ট্রেনযোগে জামালপুরের দিকে পালিয়ে যায়। হানাদার বাহিনী ইসলামপুর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ঝিনাই ব্রিজসহ তিনটি রেল ব্রিজ ধ্বংস করে জামালপুর পযর্ন্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন করে দেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<25879 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1