শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
একাদশ সংসদ নিবার্চন

মামলার বিবরণ লিখতে হিমশিম বিএনপি প্রার্থীরা

বিএনপি দপ্তর জানায়, মামলার সঠিক পরিসংখ্যান বের করা এক রকম অসম্ভব কারণ একটি মামলা অনেক ক্ষেত্রে একাধিক মামলায় রূপ নিয়েছে
হাসান মোল্লা
  ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১০:২৪

নিবার্চন কমিশনের হলফনামায় চাওয়া তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করছেন একাদশ সংসদ নিবার্চনে অংশগ্রহণে আগ্রহী বিএনপির প্রাথীর্রা। এর মধ্যে হলফনামার দ্বিতীয় চাহিদা মামলার বিবরণ তৈরি করতে সবচেয়ে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। অসংখ্য মামলার কারণে সুনিদির্ষ্ট পরিংখ্যান বের করতে অনেককেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ জন্য দৌড়াতে হচ্ছে থানা, আদালতে ও আইনজীবীদের কাছে। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, নিবার্চন কশিনের হলফনামায় নিবার্চনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রাথীের্দর শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলার বিবরণ, আয়ের উৎস, আয়কর রিটানর্, ঋণের পরিমাণের তথ্য জমা দিতে হবে। হলফনামার ২. খ ধারায় ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত কি-না এবং এর বিবরণ চাওয়া হয়েছে। কোন ধারায়, কোন আদালতে, মামলা নম্বর এবং মামলার বতর্মান অবস্থার কথা উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। আর ৩ এর খ‘তে দায়েরকৃত ফৌজধারি মামলা ও এর ফলাফলের বিবরণ চাওয়া হয়েছে। তাতেও কোন ধারায়, কোন আদালতে, মামলা নম্বর এবং মামলার ফলাফল উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, হলফনামার তথ্য সংগ্রহে বিএনপির আগ্রহী প্রাথীর্রা এখন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে মামলার বিবরণ প্রস্তুতেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পযাের্য়র নেতাদের অনেকেরই মামলার সুনিদির্ষ্ট পরিসংখ্যান জানা নেই। কেন্দ্রীয়ভাবেও বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েক দফা মামলার সঠিক সংখ্যা বের করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু একেবারে সুনিদির্ষ্ট সংখ্যা বের করা সম্ভব হয়নি। এমন অনেক নেতা আছেন যারা মামলার ডবল সেঞ্চুরি পার করেছেন। হলফনামা মামলার বিবরণের তথ্য দিতে সমস্যার বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যায়যায়দিনকে বলেন, ‘এই অপশনটি ব্যাপক ভোগাচ্ছে। এখন পযর্ন্ত ১৯২টি মামলা আমার বিরুদ্ধে আছে বলে জানি। কিন্তু সুনিদির্ষ্টভাবে কত মামলা তা জানি না। একই ঘটনায় অনেক মামলা হয়েছে যার তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই হলফনামার মামলার বিবরণ সুনিদির্ষ্টভাবে দেয়া খুবই কঠিন হবে। আর নিবার্চন কমিশন যদি এ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করে সে ক্ষেত্রে অনেকে নিবার্চন থেকেও ছিটকে পড়তে পারে।’ একই বিষয়ে বিএনপির বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুনিদর্ষ্টভাবে বলা সম্ভব না হলেও এখন পযর্ন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ৯২টি মামলা আছে। কিন্তু যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় গণহারে মামলা হয়েছে সেই সব পরিসংখ্যন বের করা খুবই কঠিন। তবে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র না হলে মামলাগুলোর পরিসংখ্যান বের করা যাবে বলে মনে করেন তিনি। বিএনপির দপ্তর সূত্রের আনুমানিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর পযর্ন্ত বিএনপির নেতা-কমীের্দর বিরুদ্ধে দায়ের করা ৯০ হাজার ৩৪০টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জনকে। আর ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত ২৯ দিনে সারাদেশে ৪ হাজার ৯৪টি গায়েবি মামলা হয়েছে। এ সব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭৩০ জনকে। বিএনপি দপ্তর সূত্রমতে, মামলার সঠিক পরিসংখ্যান বের করার এক রকম অসম্ভব। কারণ একটি মামলা অনেক ক্ষেত্রে একদিক মামলায় রূপ নিয়েছে। তাই অধিকাংশ নেতাই বলতে পারবেন না তাদের বিরুদ্ধে কতটি মামলা আছে। বিএনপি, আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যারা নিবার্চনে অংশ নিবেন এমন নেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৮৫, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ১১, স্থায়ী কমিটির সদস্য মিজার্ আব্বাসের বিরুদ্ধে ৯৬, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৪০, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নামে ১৯ ও সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে ৪৭, ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৭, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নামে ৩৭, এজেডএম জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে ১৫, বরকতউল্লা বুলুর বিরুদ্ধে ৮৮, আবদুল আউয়াল মিন্টুর নামে ১২, শামসুজ্জামান দুদু ২২, শওকত মাহমুদ ৪৫, আবদুল্লাহ আল নোমান ১৩, সেলিমা রহমান ১১, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৮, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের নামে ৬, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের নামে ১২৬, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে ৫০, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নামে ১৯২, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে ১১০টি, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুদুর বিরুদ্ধে ৫০, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ ৯২, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের বিরুদ্ধে ১০০, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিনের বিরুদ্ধে ৭৭, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের নামে ২১৫ ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ২১২ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সফিউল বারী বাবুর নামে ৩১টি মামলা মামলা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে