বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন

দীঘাির্য়ত হবে দবিরুল যুগ নাকি শেষ, একটাই প্রশ্ন

ঠাকুরগঁাও-২ (বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈলের ২ ইউনিয়ন)
জাকির মোস্তাফিজ মিলু, ঠাকুরগঁাও
  ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ঠাকুরগঁাওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর উপজেলা ও রানীশংকৈল উপজেলার ২টি ইউনিয়ন নিয়ে ঠাকুরগঁাও-২ আসন গঠিত। দীঘর্ ৩০ বছর থেকে আসনটি ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের এমপি আলহাজ দবিরুল ইসলাম। ৫ জানুয়ারির নিবার্চন বাদে বিগত কয়েকটি নিবার্চনে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছে জামায়াত। তবে তারা কখনো নিবাির্চত হতে পারেনি। এবার এ আসন থেকে বতর্মান এমপি ছাড়াও আরও অনেকে মনোনয়নের জন্য জোরালোভাবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্যে তেমন কোনো কমর্কাÐ না থাকলেও গোপনে তারা সক্রিয় রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।

এ আসনে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ছয় বারের এমপি গৃহায়ণ ও গণপূতর্ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ দবিরুল ইসলাম। তিনিই কি সপ্তমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন, নাকি তাকে ঘিরে যে বিতকর্ জাতীয়ভাবে ডালপালা ছড়িয়েছে সে কারণে তাকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের মনোনয়ন না দিয়ে দলের অন্য কাউকে মনোনয়ন দেবে তা নিয়ে আলোচনা সবর্ত্র। শীতপ্রধান অঞ্চলে ভোট নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা-বিতকের্র উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এমন একটা সময় ছিল যখন দবিরুল ইসলামকে নিয়ে, তার মনোনয়ন নিয়ে কোনো সংশয়ই থাকত না। তার সঙ্গে মনোনয়ন যুদ্ধে অবতীণর্ হতেও কাউকে পাওয়া যেত না দলের মধ্যে। কিন্তু নানা কারণেই সে অবস্থাটার পরিবতর্ন ঘটেছে। সবচাইতে বেশি বিতকর্ হয়েছে, তার ‘সংখ্যালঘুদের জমি দখল’ ইস্যুটিতে যখন জাতীয়ভাবে মানবাধিকার কমীর্রা ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে মনোনয়ন না দিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, এ প্রশ্নে। তাকে মনোনয়ন না দেয়ার প্রশ্নে অনেক যুক্তি দিচ্ছেন তার বিরোধীরা, সংখ্যালঘু প্রশ্ন, পরিবারতন্ত্র প্রশ্ন, তার বয়স ও শারীরিক অক্ষমতার প্রশ্ন। কিন্তু একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাংককে চিন্তিত করবে এসব কিছু ছাপিয়ে তা হলো দবিরুলকে মনোনয়ন না দিলে দীঘির্দনের এ আসনটি আওয়ামী লীগ হারিয়ে ফেলবে না তো? বিশেষ করে এ আসনে যখন দবিরুলের কাছে অল্প ব্যবধানে পরাজিত জামায়াত প্রাথীর্র পরিবতের্ স্বয়ং বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো হেভিওয়েট প্রাথীর্র নিবার্চন করার সম্ভাবনার বিষয়টি স্বীকার করছেন জেলা বিএনপি নেতৃত্ব। দবিরুলের সমথর্করা মনে করেন, অন্য একশ’টি প্রশ্নের চেয়ে এই প্রশ্নটিই গুরুত্বপূণর্ হয়ে দেখা দেবে এবং তিনি সপ্তমবারের মতো এমপি হওয়ার প্রতিদ্ব›িদ্বতায় দলীয় মনোনয়ন পাবেন। দবিরুল যুগ থাকবে নাকি সে অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে এখানে সেটাই এ আসনের নিবার্চন মনোনয়নে সবচাইতে বড় প্রশ্ন, আর সেটারই সমাধান করবেন অল্প কিছুদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোডর্। মনোনয়ন পেতে বতর্মান সংসদ সদস্য আলহাজ দবিরুল ইসলাম ছাড়াও জোরালো জনসংযোগ চালাচ্ছেন ঠাকুরগঁাও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমেদ টুলু, দবিরুলের বড় ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ নেতা মাজহারুল ইসলাম সুজন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার রায়, বতর্মান উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি দবিরুলের ছোট ভাই সফিকুল ইসলাম ও দবিরুল ইসলামের আরেক ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহম্মাদ আলী।

এ আসনে দবিরুলকে আওয়ামী লীগের যে অংশগুলো আর চান না তাদের মতে, দবিরুল ইসলাম দীঘির্দন ধরে এ এলাকার এমপি। একই সঙ্গে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বালিয়াডাঙ্গী ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের বড় পদগুলো তার পরিবারের সদস্যদের দখলে। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তার ভাই-ভাতিজা। ছেলে সুজন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। কাজেই দলে তার অবস্থান শক্ত। কিন্তু সাম্প্রতিককালের কিছু কমর্কাÐ তাকে বিতকির্ত করেছে ভোটারদের কাছে। সংখ্যালঘুদের জমি দখলের বিষয়টি এ আসনের গÐি পেরিয়ে বিস্তার লাভ করেছে জাতীয় পযাের্য়। ওই ঘটনায় কিছু মানবাধিকার সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সরব রয়েছেন। তাছাড়া ছয় বারের এমপি তিনি। এলাকায় তার প্রভাব প্রতিপত্তি অবিসংবাদিত। তার কথায় চলে বালিয়াডাঙ্গী। কারো মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। এমন বিষয়গুলোকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না ভোটার ও কিছু দলীয় কমীর্। কয়েকজন নেতা এগুলো নিয়ে মাঠে রয়েছেন তৎপর। এ জন্য বিকল্প প্রাথীর্ হিসেবে তার ছেলেসহ ভাই ও আত্মীয়-স্বজনরা মাঠে নেমেছেন। পক্ষান্তরে দবিরুলেরই লোকজন তারা।

তবে এ প্রশ্নের উত্তরে দবিরুলের বড় ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ নেতা মাজহারুল ইসলাম সুজন বলেন, গত কয়েকটি নিবার্চনেই এসব ধুয়ো তোলা হয়েছিল, দবিরুল ইসলাম অসুস্থ, বয়সের ভারে ন্যুব্জ। কিন্তু তবুও তো তিনি ছয় বারের সফল এমপি। তারা মনে করেন না, এসব দবিরুল ইসলামকে মনোনয়ন না দেয়ার কোনো কারণ হতে পারে। তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই উপজেলা, ইউপি নিবার্চনসহ সব ক্ষেত্রে এই আসনে আওয়ামী লীগ একচ্ছত্র সফলতা পেয়েছে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার দল ও সাধারণ মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তিনি মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। তিনি বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পেছনে কাজ করবেন। নেত্রী ঘোষিত মানদÐের ভিত্তিতে এলাকার প্রকৃত চিত্র তিনি জানেন, সেই মানদÐে তিনি বিশ^াস করেন তাকে নেত্রী মনোনয়ন দেবেন । তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী একটা আদশর্, তিনি তারই অনুসারী। যতদিন তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এলাকায় জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন, সেটিতে একনিষ্ঠতা , সততা, একাগ্রতা ও পরিশ্রমের সাথে কাজ করেছেন সেভাবেই তিনি আজীবন জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে চান।

অপর সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাড. মোস্তাক আলম টুলু। ডাকসুর সাবেক এই নেতা এই আসনের পরিচিত মুখ। তিনি যথেষ্ট তৎপড় রয়েছেন তৃণমূলে। ‘নৌকার জন্য তারুণ্য’, ‘নৌকার জন্য নারী’ এমন শিরোনামে তৃণমূল পযাের্য় নারী ও তরুণদের আওয়ামী লীগের দশর্ন ও উন্নয়ন বোঝানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন মানুষ নতুন মুখ চায় আওয়ামী লীগে। তবে আওয়ামী লীগকে বাঁচাবে তরুণ নেতৃত্ব , এটাই তার বিশ^াস বলে তিনি জানান।

বতর্মান এমপি দবিরুল ইসলাম বলেন, দীঘির্দন যাবত জনপ্রিয়তার কারণে জনগণই তাকে ছয় বার এমপি বানিয়েছেন। এলাকায় যেমন উন্নয়ন করেছেন তা দেশের কোন নিবার্চনী এলাকায় হয়নি। তিনি মনে করেন, বড় দলে নানা বিতকর্ মতান্তর থাকতেই পারে, আওয়ামী লীগ একটা গণতান্ত্রিক দল, সবচেয়ে বড় দল, তাই এটাই এ দলের গভীরতা প্রমাণ করে। মনোনয়ন এবারো পেলে জনগণই তাকে নিবাির্চত করবেন। তবে দেশরতœ শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা-ই মেনে নেব।

দবিরুল ইসলামের ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলী এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান, তিনি মনে করেন এবার তিনিই সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রাথীর্। তার মতে, দবিরুলের পরিবারের কেউই বিনা যোগ্যতায় বিভিন্ন পদ দখল করেননি, তাদের যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েই বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বে আসতে হয়েছে। আর এ নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ তথা নৌকা মাকার্র জয়ই সকল ক্ষেত্রে নিশ্চিত করেছে। অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে কান না দেয়ার জন্য তিনি নেতাকমীর্-জনসাধারণকে আহŸান জানান।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাথে দীঘর্ প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে আসছেন ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম, বতর্মানে নাশকতার মামলায় কারারুদ্ধ। তার নিবার্চনের প্রাথির্তা নিয়ে কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।

তবে সব উত্তেজনা ছাপিয়ে এ আসনে প্রাথীর্ হওয়ার জন্য বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রাথীর্ করতে চান এই এলাকায় দলের তৃণমূল নেতাকমীর্রা। একথা জানিয়ে বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মিজার্ ফয়সাল আমীন জানান, এটা দল ও জোটের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের ব্যাপার, তবে এ চমক আসলে ইতিহাসের এক পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে তিনি মনে করেন। কারণ এ আসনে দবিরুল ইসলাম একবার মিজার্ ফখরুলের পিতা তদানিন্তন ভ‚মিমন্ত্রী মিজার্ রুহুল আমীনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

অন্যদিকে জাতীয় পাটির্ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী এমপি দবিরুল ইসলামের ভাগিনী জাতীয় পাটির্র কেন্দ্রীয় মহিলা পাটির্র সহ-সভাপতি নুরুন নাহার বেগম। তিনি এলাকায় নিবার্চনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলকে গোছাতে চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন সাংগঠনিক কমর্কাÐ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22817 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1