বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

# মি টু: এবার মুখ খোলার আহŸান

যাযাদি রিপোটর্
  ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে শুক্রবার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন

লজ্জায়, ভয়ে মুখ লুকিয়ে থাকলে যৌন নিপীড়করা আরও অন্যায় করার সুযোগ পাবে; তাই নিপীড়িতদের সামনে আসার, মুখ খোলার আহŸান এসেছে #মি টু আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে।

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মি টু মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ আয়োজিত এই মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক বলেন, শুধু নারীরা নয়, ছোট ছোট ছেলেরাও নিকটাত্মীয়দের মাধ্যমে নিযাির্তত হয়। অনেক সময় ঘরেও তারা নিরাপদ নয়। এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

‘আপনি পুরুষ, কিন্তু আপনার মা একজন নারী, আপনার মেয়ে সন্তান থাকতে পারে। আপনার মেয়ে সন্তান না থাকলেও আপনার ভাইয়ের মেয়ে আছে, আপনার বোন আছে। নারীদের জন্য ঘরে-বাইরে, কমের্ক্ষত্রে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে ?তুলুন। নারীর কমের্ক্ষত্র যেন সংকুচিত না হয়, নারীরা আরও সাহসী হয়ে তারা তাদের কাজের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে।’

ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, প্রশাসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার প্রসঙ্গ তুলে ধরে নাসিমুন আরা বলেন, ‘কেউ আছেন অনেক ধনী, বড় সাহিত্যিক, অনেক মেধা,

সমাজে তার অনেক অবদান। কিন্তু তার যতই অবদান থাক, যতই গুণী হোক, তিনি তো নারীর ওপর নিযার্তন করতে পারেন না।

‘এই ধরনের অনাচার, অপরাধীর বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। আমরা যদি লজ্জায় মুখ লুকিয়ে থাকি, তাহলে আপরাধীরা অন্যায় করে যাওয়ার সুযোগ পাবে। সেজন্য আমাদের মুখ খুলতে হবে। যারা মুখ খুলেছে তাদের পাশে দঁাড়াতে হবে।’

আগামী ১৮ নভেম্বর রোববার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়ে নাসিমুন আরা বলেন, ‘আগামীতেও এ আন্দোলন চলবে।’

তিনি বলেন, অভিযোগ আসার পর কয়েকটি সংগঠন দ্রæত পদক্ষেপ নিয়েছে, এই ধরনের সচেতনতা যেন সব প্রতিষ্ঠানেই থাকে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েদের হয়রানির শিকার হওয়ার চিত্র তুলে ধরে নাসিমুন আরা বলেন, ‘যেখানেই ঘটনা ঘটবে, সেখানেই যেন আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে দঁাড়াতে পারি, অ্যাকশন নিতে পারি।’

সব সংবাদমাধ্যম, সব করপোরেট প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর হয়রানি বন্ধে হাইকোটের্র রায় কাযর্করের দাবি জানিয়ে তিনি বলে, ‘সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কমিটি করতে হবে। সরকারের কাছে আমাদের আহŸান, হাইকোটের্র রায়কে আইনে পরিণত করুন।’

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি বলেন, হাজার বছর ধরে যে পশ্চাৎপদ মন, সেই অন্ধকার একদিনে দূর হবে না।

‘কিন্তু সবাই মিলে চেষ্টা করলে সেই অন্ধকার দূর হবে। সেই কাজটা আমাদের শুরু করতে হবে। নারীকে শ্রদ্ধা করতে হবে, কারণ নারীরাও এদেশের নাগরিক।’

বাংলাদেশ উইমেন জানাির্লস্টস ফোরামের সভাপতি মমতাজ বিলকিস মানববন্ধনে বলেন, ছোটরা কেঁদেকেঁদে বলে দিলেও যারা একটু বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছে তারা যখন আকার-ইঙ্গিতে বলতে চেয়েছে তখন মায়েরা বাধা দিয়েছে। আর এভাবে নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে।

‘অসভ্য লোকগুলো এমন পযাের্য় গেছে, মেয়েরা ঘরে-বাইরে, কমর্স্থলে, হাটে-বাজারে নিরাপদে চলতে পারে না। প্রতিবাদ নেই বলে এদের এত সাহস বেড়ে গেছে যে ধষের্ণর সেঞ্চুরিও তারা প্রকাশ্যে করতে পারে। এজন্য সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।’

বিলকিস বলেন, ‘#মি টু’ কী- সে বিষয়ে অনেকের এখনো স্পষ্ট ধারণা নেই। এ বিষয়ে সবাইকে বোঝাতে হবে।

‘সব সম্পাদকের কাছে অনুরোধ করব, তারা যেন একটা কলাম এই মিটুর জন্য রাখেন যেন মেয়েরা তাদের মনের কথাগুলো ইচ্ছেমতো বলতে পারে, সমাজকে সচেতন করার পদক্ষেপ তারা নিতে পারে। লজ্জা ঢেকে রাখার প্রথা পরিবতর্ন করতে হবে। এজন্য সংবাদপত্রকে বিষয়টি অনেক গুরুত্ব দিতে হবে।’

উইমেন জানাির্লস্টস ফোরামের সভাপতি বলেন, ‘#মি টু’ পুরুষবিরোধী কোনো আন্দোলন নয়। এটা সমাজকে ‘কীটমুক্ত’ করার আন্দোলন।

বাংলাভিশনের বাতার্ সম্পাদক শারমিন রিনভী বলেন, ‘লজ্জার বলে সবকিছু চাপিয়ে রাখলে নিপীড়ন বাড়বে এবং বাড়ছে। তারা বলেছে বলে আমাদের না বলা কথাগুলো বলা হচ্ছে। এটা মেয়েদের নয়, মানুষের আন্দোলন। যারা নিপীড়ন করছে, তাদের পরিচয় উন্মোচন হোক।’

একজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার কথা তুলে ধরে রিনভী বলেন, ‘তিনি নিবার্চনে দঁাড়াবেন বলে শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ, তাদের প্রাথীর্ করবেন না। নিপীড়ক যেখানেই থাকবে তাদের বয়কট করতে হবে।’

যারা সাহস করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন নিয়ে কথা বলছেন, তাদের অভিনন্দন জানান নিউজ টোয়েন্টিফোরের যুগ্ম-বাতার্ সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মন্টি।

তিনি বলেন, ‘শুধু মেয়ে না, ছেলেদের ওপরও যৌন নিযার্তন হয়। তাই আমার প্রত্যাশা, দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ এই আন্দোলনে থাকবেন।

সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক নাদিরা দিলরুবা সংহতি মানববন্ধনে অংশ নিয়ে জানান, ১০ বছর বয়সে মায়ের চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের হাতে যৌন নিযার্তনের ঘটনা তিনি মিটু হ্যাশ ট্যাগে লিখেছেন।

বিবেকের তাড়নায় মি টুতে লিখেছেন জানিয়ে নাদিরা বলেন, ‘আমরা পরিবার থেকেই প্রথম যৌন নিপীড়নের শিকার হই।’

ফেসবুকে মি টু হ্যাশট্যাগে নিজের যৌন হয়রানির ঘটনা জানানো মুশফিকা লাইজু বলেন, ‘একজন নারী তার সারা জীবনের যৌন হয়রানির কথা সাদা কাগজে লিখলে সেই কাগজে পৃথিবী ঢেকে রাখা যাবে।’

নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাসিমা সোমা বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে সফল হব। এখন ১১ বছরের পুরানো ঘটনাও নতুন করে প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তাই অনেক বিষয় প্রকাশিত হচ্ছে।’

সমাপনী বক্তব্যে বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইসলাম বলেন, ‘যারা ‘মি টু’ বলেছেন, তাদের প্রতি আমরা যেমন সংহতি জানাচ্ছি, যারা ‘মি টু’তে অভিযুক্ত হচ্ছেন, অভিযোগ নিয়ে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরস করছেন, তাদের প্রতি আমরা কিছু বাতার্ দিতে চাই।

‘আপনাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতা থেকে যদি এই আন্দোলন গ্রহণ নাও করতে পারেন, এই আন্দোলন নিয়ে কোনো হাস্যরস করার চেষ্টা করবেন না। এই প্ল্যাটফমর্ থেকে যারা আজ এখানে দঁাড়িয়েছে, তারা আপনাদের সেই চেষ্টা প্রতিহত করবে।’

উদিসা বলেন, ‘মি টু আন্দোলনে অভিযুক্তের বিষয়ে ডেইলি স্টার প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা চাই আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিষ্ঠান যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এটি নিয়ে যেন আমাদের বলতে না হয়, এটি তাদের নিজেদের দায়িত্ব। ’

এ আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চলবে এবং মি টুতে যারা কথা বলেছেন, আগামীতেও তারা রাজপথে সরব হবেন বলে জানান উদিসা।

অন্যদের মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক এফ এম শাহীন, বাংলাদেশ অনলাইন জানাির্লস্ট ফোরামের সহ-সভাপতি রোজি ফেরদৌস সমাবেশে বক্তব্য দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22813 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1