তাদের জনক, গোটা বাঙালি জাতিরও পিতা। দীঘর্ আন্দোলন-সংগ্রামের পর বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন। পৃথিবীর মানচিত্রে সেই দেশ পরিচিতি পায় ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে।
কিন্তু স্বাধীনতালাভের তিন বছরের মাথায় এই দেশেরই গুটিকয় বিপথগামী প্রাণ কেড়ে নেয় সেই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টার। কেড়ে নেয় তাদের জনককে, তাদের আদর-স্নেহ-ভালোবাসার আশ্রয়স্থলকে।
তারপর কেটে গেছে কত বছর! তারা দুই বোন প্রতি কদমে অনুভব করেছেন বাবাকে। বাবার প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছেন, বাবার স্মৃতি হাতড়ে চোখ মুছেছেন বারংবার।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিজয় সরণিতে নবনিমির্ত ‘তোশাখানা জাদুঘরে’ বাবার প্রতিকৃতি যেন সেই আদর-স্নেহ-ভালোবাসার দিনগুলো স্মৃতিপটে এনে দিল। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিকে তাই মাঝে রেখে দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ফিরে গেলেন যেন বাবার পাশে বসে কাটানো সেই মধুর দিনগুলোতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একপযাের্য় ছোট বোন শেখ রেহানার গালে আদুরে চুমুও এঁকে দেন।
‘পিতা’র সঙ্গে দুই বোনের কয়েকটি ছবি ফ্রেমবন্দি করেছেন ফটোসাংবাদিক সাইফুল ইসলাম কল্লোল। এরইমধ্যে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
তোশাখানা জাদুঘর উদ্বোধন
নবনিমির্ত রাষ্ট্রীয় তোশাখানা জাদুঘর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় নিমির্ত এ জাদুঘর উদ্বোধন করেন তিনি।
৫০ হাজার স্কয়ার ফিট এলাকাজুড়ে পঁাচতলা অত্যাধুনিক এ রাষ্ট্রীয় তোশাখানা জাদুঘরটি নিমার্ণ করতে খরচ হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে এটি নিমার্ণ করা হয়। এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং সরকারের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া সব রাষ্ট্রীয় উপহারসামগ্রী, গুরুত্বপূণর্ দেশি-বিদেশি সম্মাননাও এখানে সংরক্ষণ করা হবে।
দেশে-বিদেশে পাওয়া সব উপহার রাষ্ট্রীয় মযার্দায় যথাযথভাবে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের উপহার রাষ্ট্রের সম্পত্তি। এগুলো দেশের সম্মান ও মযার্দা বহন করে। সুতরাং, এগুলো খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করা উচিত।
বিগত বিএনপি-জামায়াত আমলে বিভিন্ন উপহার ও দুলর্ভ ছবি নষ্ট হওয়ার কথা উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রীয় উপহারগুলো সংরক্ষণে তোশাখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার নিদের্শনায় ১৯৭৪ সালে তোশাখানা আইন প্রণীত হয় এবং বঙ্গভবনে এটি নিমার্ণ করা হয়।
পরবতীের্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় তোশাখানার জন্য আলাদা ভবন নিমাের্ণর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং তার নিদের্শনায় বিজয় সরণির এই তোশাখানা জাদুঘরটি নিমির্ত হয়। যেখানে সবর্সাধারণের দেখার সুযোগ থাকবে রাষ্ট্রীয় উপহারগুলো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং রাষ্ট্রের সম্মান ধরে রাখতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহŸান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে যাননি, সম্মানও দিয়ে গেছেন। আমাদের সে সম্মান ধরে রাখতে হবে।’
গত ১০ বছরের সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১০ বছরে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। আমরা জনগণের জীবনযাত্রার মান আরো উন্নত করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার মধ্য স্বাধীনতার সুবণর্জয়ন্তী উদযাপন করতে চাই। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, কূটনীতিক কোরের সদস্য, বিভিন্ন বাহিনী প্রধানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।