বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিতে সবোর্চ্চ সতকর্তা

যাযাদি রিপোটর্
  ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আগামী নিবার্চনকে কেন্দ্র করে সবোর্চ্চ সতকর্তার সঙ্গে পথ চলতে চায় বিএনপি। জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে দলের সম্পৃক্ততার তকমা আর নিতে চায় না দলটি। সঙ্গত কারণে কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দিতে দেশব্যাপী নেতাকমীের্দর সতকর্ করেছে তারা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেও অপ্রাসঙ্গিক শো-ডাউনেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রমতে, বুধবারের নয়াপল্টনে অপ্রীতিকর ঘটনায় চরম মনঃক্ষুণœ দলের হাইকমান্ড। এর কারণ ও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা নিয়ে বুধবার রাতেই দলের উচ্চপযাের্য়র নেতারা বৈঠক করেছেন। এই ঘটনায় যাদের নাম সামনে এসেছে তাদের কাছেও প্রকৃত ঘটনা জানতে চেয়েছেন হাইকমান্ডসহ সিনিয়র নেতারা। বৈঠকের আলোচনায় পুলিশের উসকানি এবং বিশেষ সংস্থা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সামনে এসেছে। এর প্রেক্ষিতে নিবার্চনের আগে এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সবাইকে সবোর্চ্চ সতকর্তার সঙ্গে প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়ার নিদের্শ দিয়েছে হাইকমান্ড। বিষয়টি মাঠপযাের্য়র নেতাকমীের্দরও জানিয়ে কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দেয়ার নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। নিবার্চনে শোডাউন একটি গুরুত্বপূণর্ বিষয় হলেও প্রয়োজন ছাড়া শোডাউন না করতে বলা হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, বুধবারের ঘটনা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিএনপিকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্রের অংশ। এ বিষয়ে বিএনপির আগে থেকেই সতকর্ হওয়া উচিত ছিল। যা হোক যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন থেকে আর যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতকর্ থাকতে হবে।

বিএনপির এই নেতার মতে, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি বিএনপি যদি করত তাহলে গত তিন বছরে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যেত। কিন্তু বিএনপি গত তিন বছরে শুধু আগামী নিবার্চনের ভালো ফল পাওয়ার জন্য সবোর্চ্চ সতকর্তার সঙ্গে পথ চলেছে। পারতপক্ষে একটি ভুল সিদ্ধান্তও নেয়নি। ভোটের মাঠে মূল্যহীন দলগুলোকে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করে সরকারবিরোধী ঐক্যকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে। বিএনপির গত তিন বছরের কমর্কাÐ দেশের সুশীল সমাজের পাশাপাশি আন্তজাির্তক মহলেও প্রশংসিত হয়েছে। সঙ্গত কারণে গত বুধবারের অপ্রীতিকর ঘটনা যে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সব মহলই অনুমান করছে। এরপরও নিবার্চনকে কেন্দ্র করে এই ধরনের ঘটনায় যাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে সম্পৃক্ত করতে না পারে সেজন্য সতকর্ থাকতে হবে।

সূত্রমতে, বিএনপি নিবার্চনে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। এজন্য নিবার্চনের দিনে যাতে সব নেতাকমীর্ ভোটের মাঠে থাকতে পারে সে বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। মামলা-হামলা এড়িয়ে সতকর্তার সঙ্গে চলতে নেতাকমীের্দর নিদের্শ দেয়া হয়েছে। নিবার্চনী প্রচারণার মাঠেও সব ধরনের সংঘষর্ এড়িয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। মোট কথা নিবার্চনের আগে নয়, নিবার্চনের দিন সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতেই সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে চায় বিএনপি।

বুধবারের ঘটনার পর এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একাদশ নিবার্চন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপি কাযার্লয়ের সামনে শান্তিপূণর্ নেতাকমীের্দর ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র করেই নিবার্চন বানচাল করতে দেয়া হবে না।

এই ঘটনার পর বিএনপির সতকর্ অবস্থানের বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ড. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, নিবার্চনের আগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নানা ষড়যন্ত্র করবে। এজন্য সবোর্চ্চ সতকর্তার সঙ্গে পথ চলবে বিএনপি। এ বিষয়ে দলের নেতাকমীের্দর সতকর্ থাকার পাশাপাশি কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দিতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নিবার্চনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ওই বছর এবং এর পরের বছরের শুরুতে কঠোর আন্দোলন করে। পরিসংখ্যন অনুযায়ী ২০১৫ সালের আান্দোলনে নিহত হয় ২৩১ জন মানুষ। এদের অধিকাংশই আগুনে পুড়ে এবং পেট্রলবোমায় নিহত হয়। আগুনে পুড়ে আহত হয় ১ হাজার ১৮০ জন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় ২ হাজার ৯০৩টি প্রাইভেটকার, ১৮টি রেলের বগি এবং ৮টি যাত্রীবাহী নৌযান। ৭০টি সরকারি অফিস ভাঙচুর করা হয়, আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয় ৬টি ভূমি অফিস। ওই আন্দালনগুলো সহিংসতায় রূপ নেয়ায় আন্দোলন ব্যথর্ হওয়ার পাশাপাশি বিএনপির ভাবমূতির্ দেশি ও আন্তজাির্তক মহলে চরমভাবে নষ্ট হয়। এরপর গত তিন বছর সহিংস কোনো আন্দোলন কমর্সূচিতে না গিয়ে বিএনপি শুধু সাংগঠনকে শক্তিশালী করার দিকে মনোননিবেশ করে যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চনে দাবি আদায় না হওয়ায় দশম সংসদ নিবার্চন বজর্ন করেছিল, বিএনপি সেই দাবি আদায় না হলেও তারা আর সহিংস কোনো আন্দোলনে যায়নি।

সংঘষের্র পরও উৎসব

মুখর নয়াপল্টন

এদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘের্ষর পরও চতুথির্দনের মতো বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের কমীর্-সমর্থকদের নিয়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে আসতে থাকেন। শোডাউন আর ¯েøাগানে ¯েøাগানে তারা নিজ নিজ প্রাথীর্র পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন এলাকায় নেতাকমীের্দর ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে। মনোনয়ন বিক্রির তৃতীয় দিনে বুধবার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকমীের্দর ব্যাপক সংঘষের্র পর নেতাকমীের্দর মধ্যে কিছুটা ভীতি ও আতঙ্ক ছিল। তবে তা উপেক্ষা করেই দলে দলে নেতাকমীর্ নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন। মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের পাশাপাশি বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকমীের্দর ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের সামনে থেকে নাইটিংগেল মোড় পযর্ন্ত মিছিল করতে দেখা যায়।

ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম রহমান হলের সদস্যসচিব মোমিনুল ইসলাম জিসান বলেন, বুধবারের ঘটনায় নেতাকমীের্দর মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে। এদিন বিএনপির নেতাকমীর্রাই নয়াপল্টন সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। নিজেদেরই নয়াপল্টন কাযার্লয় অভিমুখে মিছিলগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে দিতে দেখা গেছে। অন্যদিনের তুলনায় গতকাল পুলিশসহ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নয়াপল্টন কাযার্লয়ের বেশ খানিকটা দূরে নাইটিংগেল মোড়ে এপিসি, জলকামান ও প্রিজনসহ অবস্থান নেয়। মিছিল থেকে মনোনয়ন সংগ্রহকারীর পক্ষে ¯েøাগান দেয়ার পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মু্িক্ত ও তারেক রহমানের নামেও নানা ধরনের ¯েøাগান দেন বিএনপির নেতাকমীর্রা।

গতকাল রাজবাড়ী-১ আসনে আসলাম মিয়া, বরিশাল-১ আসনে বিএনপিরসহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, জামালপুর-৫ আসন থেকে সাবেক মেয়র ওয়ারেস আলী মামুন, যশোর-২ আসন থেকে বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, শামছুদ্দিন দিদার কুমিল্লা-১০ আসন থেকে, বিএনপিরসহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু-নাটোর-১, ফেনী-৩ আসনের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ফেনী-২ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ভিপি জয়নাল আবেদীন, ময়মনসিংহ-৪ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরিশাল-৩ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, পটুয়াখালী-১ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ঝালকাঠি-১ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর ও টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে আহমেদ আজম খান মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান গাজীপুর-৪ আসনের জন্য, গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং প্রবীণ শ্রমিক নেতা ও মহানগর সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর-২ আসনের জন্য, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন গাজীপুর-৩ আসনের জন্য, জেলা সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল আলম বাবুল ও কালিয়াকৈরের মেয়র মজিবুর রহমান গাজীপুর-১ আসনের জন্য, কারাব?ন্দি চট্টগ্রাম মহানগর বিএন?পির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের পক্ষে চট্টগ্রাম ৯ আসনের মনোনয়ন ফরম তোলা হয়, ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও জেলা যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজ গাজীপুর-৫ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান নরসিংদী-৩ আসনে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল নরসিংদী-৪ আসনে, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান মাদারীপুর-১ আসনে, জামালপুর-৩ আসনে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে শরীফুল আলম, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ঢাকা -১৪ ও ১৬ আসনের জন্য এবং অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া ঢাকা-৪ আসনের জন্য, নেত্রকোনা-৪ আসনে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন।

যশোর থেকে আসা সুমন মোল্লা যায়যায়দিনকে বলেন, সদ্য প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের জেলা যশোর। এই জেলায় বিএনপির অবস্থা ভালো। সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপির প্রাথীর্রা সেখানে জয়লাভ করবে।

গত সোমবার থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির কাযর্ক্রম শুরু করে বিএনপি। গত তিন দিনে ৩ হাজার ৭শ মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। আজ শুক্রবার বিএনপির মনোনয়ন বিক্রি ও জমাদানের কাযর্ক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22696 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1