শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
মিরপুর টেস্ট

মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরিতে উদ্ভাসিত, রঙিন বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০১
টেস্ট ইতিহাসে প্রথম কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটো ডাবল সেঞ্চুরি হঁাকিয়েছেন, মুশফিকুর রহিমের উদযাপনে তাই এমনই খ্যাপাটে। সোমবার মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরও অনেক রেকডের্ নিজের নাম তুলেছেন তিনি Ñবিসিবি

মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেললেন মুশফিকুর রহিম, ২১৯ রানের ইনিংসে নিজেকে নিয়ে গেলেন চ‚ড়ায়। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তুলে নিলেন দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। তাতে বিশ্বরেকডর্ও হলো। টেস্টে দুটো ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়া প্রথম কিপার-ব্যাটসম্যান তিনিই। মুশফিকের রেকডের্র মালায় মিরপুর টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে ৫২২ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। জবাব দিতে নেমে ২৫ রান তুলতেই ১ উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ফলে ৪৯৭ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করবে তারা। ৪০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করা বাংলাদেশ কাটিয়েছে ঝলমলে একটি দিন। মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরিতে স্বাগতিকরা পেয়েছে প্রত্যাশার চাইতেও বড় পুঁজি (৫২২)। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের দলীয় সবোর্চ্চ। আগের সবোর্চ্চ ছিল ৫০৩। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে গড়া ওই রেকডর্টাকে এদিন মুশফিকের ব্যাটেই টপকে গেছে বাংলাদেশ। আগের দিন ১৬১ রানের ইনিংস খেলে তাতে বড় অবদান রেখেছিলেন মুমিনুল হকও, এদিন হার না মানা ৬৮ রানের ইনিংসে অবদান রাখলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৯৯ রানে দাঁড়িয়ে লেগ স্পিনার ব্রেন্ডন মাভুতার একটি ওভার মেডেন খেলেন মুশফিক। সিকান্দার রাজার পরের ওভারে স্ট্রাইক পেয়ে দ্রæত একটি সিঙ্গেল নিয়ে জায়গা করে নেন ইতিহাসের পাতায়। শেষ পযর্ন্ত ২১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। সব মিলিয়ে তার ৪২১ বলের ইনিংসটি সাজানো ১৮ চার ১ ছয়ে। ওই ইনিংসেই মুশফিক ছাড়িয়ে গেছেন সাকিব আল হাসানকে। গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব ২১৭ রানের রেকডর্ গড়া ইনিংসটি খেলেছিলেন। এর আগে মুশফিকের ব্যক্তিগত সবোর্চ্চ ছিল ২০০ রান, ২০১৩ সালে গলে শ্রীলংকার বিপক্ষে ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের পক্ষে ওটাই ছিল প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। মুশফিক পেলেন নিজের দ্বিতীয় ডাবল, বাংলাদেশ পেল চতুথির্ট। তাতেই দীঘর্ ৬ বছর পর পাচশ’র উপরে রান দেখল হোম অব ক্রিকেট। বাংলাদেশ দলেরও এমন জমাট ব্যাটিং দেখা গেল দীঘির্দন পর। এই মাঠে সবশেষ ২০১২ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চারশ পেরিয়েছিল স্বাগতিকরা। প্রথম ইনিংসে টাইগাররা করেছিল ৫৫৬ রান। মিরপুরে বাংলাদেশের সবোর্চ্চ দলীয় সংগ্রহ সেটি। ওই ম্যাচের পর বাংলাদেশ মিরপুরে খেলেছে আটটি টেস্ট। নয় নম্বরে এসে পেল আরেকটি পাঁচশ’র দেখা। মিরপুর টেস্টে রোববার ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে চতুথর্ উইকেটে মুশফিক ও মুমিনুল গড়েন রেকডর্ ২৬৬ রানের জুটি। এর মধ্যে মুমিনুল ১৬১ রান করে প্রথম দিন সাজঘরে ফেরেন। আর মুশফিকুর রহিম ১১১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৫ উইকেটে ৩০৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে স্বাগতিক দল। সোমবার মিরপুরের সকাল ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। মুশফিকের ব্যাটের ঝলকানিতে সেটি হয়ে ওঠে আরও ঝলমলে। রোববারের খেলা শেষে মুমিনুল জানিয়েছিলেন, এই উইকেটে ব্যাটিং করা কঠিন। থিতু হওয়া ব্যাটসম্যানও হঠাৎ করে এখানে আউট হয়ে যেতে পারেন। সেই ২২ গজে মুশফিক ৫৬৪ মিনিট কাটিয়ে করেছেন ডাবল সেঞ্চুরিটি। এটিও রেকডর্। সোমবার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ ব্যাট করতে নেমে ৬ষ্ঠ উইকেটে ৩৭২ রান সংগ্রহ করেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ব্যক্তিগত ৩৬ রানে জারভিসের বলে ক্যাচ তুলে দেন। স্কোরবোডের্ ৬ রান যোগ করতেই সাজঘরে ফিরে যান আরিফুল হক (৪)। এরপর মুশফিকের সঙ্গে জুটি বেঁধে মেহেদী হাসান মিরাজ করেন হাফসেঞ্চুরি। ১০২ বল খেলে ৬৮ রানে থাকেন অপরাজিত। বাংলাদেশ ৫২২/৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করলে জিম্বাবুয়ে দল ব্যাট করতে নামে। টেস্ট অভিষেকে দ্বিতীয় ওভারে নিজের প্রথম উইকেট পেতে পারতেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। ডানহাতি এই পেসারের বলে ¯িøপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেছেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। অফ স্টাম্পের বাইরের বল জিম্বাবুয়ে অধিনায়কের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে সহজ ক্যাচ যাচ্ছিল প্রথম ¯িøপে। বল মুঠোয় নিতে তৈরি ছিলেন ফিল্ডার মোহাম্মদ মিঠুন। দ্বিতীয় ¯িøপ থেকে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ মুঠোয় নেয়ার চেষ্টা করলেও পারেননি আরিফুল। বেঁচে যান মাসাকাদজা। সে সময়ে ৭ রানে ব্যাট করছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু জীবন পেয়েও বেশিদূর যেতে পারেননি জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। দলীয় ২০ রানের মাথায় ১৫তম ওভারে তাইজুল ইসলাম বোলিংয়ে এলে ১ম বলেই ¯িøপে দঁাড়ানো মেহেদী মিরাজের তালুবন্দি হন মাসাকাদজা। ব্যাটিংয়ে রয়েছেন ব্রায়ান চারি ১০*, ত্রিপানো ০*। তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন ১ উইকেট। সিলেট টেস্টে ১১টি উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল। সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে) বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস: ১৬০ ওভারে ৫২২/৭ ডিক্লে. (মুশফিক ২১৯*, মাহমুদউল্লাহ ৩৬, আরিফুল ৪, মেহেদী মিরাজ ৬৮*; জাভির্স ৫/৭১, চাতারা ১/৩৪, ত্রিপানো ১/৬৫)। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস: ১৮ ওভারে ২৫/১ (হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ১৪, ব্রায়ান চারি ১০*, ডোনাল্ড ত্রিপানো ০*; তাইজুল ১/৫)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে