শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
খালেদার জন্য ৩ ফরম

নির্বাচনী ট্রেনে বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিন নেতাকমীের্দর সরব উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০৪
উৎসবমুখর পরিবেশে সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে শুরু হয়েছে সংসদ নিবার্চনের জন্য দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে প্রথম মনোনয়ন ফরম কিনেন দলের মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর Ñযাযাদি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিন নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা দলে দলে মিছিল সহকারে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে নয়াপল্টনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে সেখানে মাইকিং করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার আহবান জানানো হয়। নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসা নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।

প্রথমেই কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জন্য তিনটি আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেনে উঠল বিএনপি।

প্রথমেই খালেদা জিয়ার বাবার বাড়ির আসন ফেনী-১ (পরশুরাম উপজেলা, ফুলগাজী উপজেলা ও ছাগলনাইয়া)-এর জন্য তার পক্ষে বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়ার আরেক পুরনো আসন বগুড়া-৬ (সদর)-এর জন্য তার পক্ষে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

এছাড়া শ্বশুরবাড়ির আসন বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর)-এর জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে আরেকটি মনোনয়ন ফরম কেনেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

অষ্টম সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ফেনী, বগুড়ার এই তিনটিসহ পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে।

দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আছেন কারাগারে। দুর্নীতি মামলায় দ-িত হওয়ায় এবারও তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, ভিপি জয়নাল আবেদীন, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা রেহানা আখতার রানু, মীর সরফত আলী সপু, বেলাল আহমেদ, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এরপর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত নেতাকর্মীরা নিজ নিজ আসন থেকে তাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা আবদুল্লাহ বলেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, দেশনেত্রীর প্রতি যে অন্যায় করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানাব এর মাধ্যমে। জনগণের কাছে গিয়ে আমরা সরকারের মুখোশ উন্মোচন করব।’ পটুয়াখালীর আসিফ রহমান বলেন, ‘বরিশাল থেকে এসেছি। সকালে এখানে (নয়া পল্টনের কার্যালয়) এসে দেখি অনেকে এসেছেন। আমাদের উদ্দেশ্য মনোনয়ন ফরম কেনা। পটুয়াখালী থেকে আমরা এই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক চাইব।’

খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের জন্য ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের জন্য বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। চিত্রনায়ক হেলাল খান সিলেট-৬ আসনের জন্য মনোনয়ন কেনেন।

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে বেবী নাজনীন বলেন, ‘আমি নীলফামারী-৪ আসনের এলাকার মানুষের জন্য আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আমার জন্মস্থান সৈয়দপুরে, আমি এলাকার মানুষের পাশে থাকতে এই নির্বাচনে অংশ নেব। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি এই আসনটিতে জয়লাভ করে আমাদের মা ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে উপহার দেব।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি আমাদের মা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে।’

হেলাল খান বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির সংগ্রামের অংশ হিসেবে নির্বাচন করছি। আমি দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছি। আশা করি, দল আমাকে বিবেচনা করবে।’

এ ছাড়া ঢাকা-১৪ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকার সাবেক কমিশনার মাসুদ খান শতাধিক নেতাকর্মীর একটি মিছিল নিয়ে এসে তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। মুন্সিগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবদুল্লাহ মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। একইভাবে মিছিল নিয়ে আসেন ভোলা-২ থেকে সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দিন, ঢাকা-৭ মনোনয়নপ্রত্যাশী এই আসনের সাবেক এমপি মরহুম নাসির উদ্দিন মিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা। তারাও নিজ নিজ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন কিনেছেন। মুন্সিগঞ্জ-২ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিপুল ব্যবধানে জয়ী হবে। যদিও এখন পর্যন্ত সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে যাব।’

ঢাকা-১১ আসন থেকে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম ও তার স্ত্রী শামীম আরা, ফরিদপুর-৩ আসনে মাহাবুবুল হাসান পিংকু, নওগাঁ-৬ আসনে মামুন চৌধুরী স্টালিন, ঢাকা-১৬ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান ও ঢাকা-১৪ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সহসভাপতি মাসুদ খান, এ বি সিদ্দিক সাজু ও ঢাকা-১৮ আসনে উত্তরের যুগ্মসম্পাদক এম কফিল উদ্দিন, বাগেরহাট-৩ লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, ফেনী-৩ আবদুল লতিফ জনি, নোয়াখালী-২ মো. মফিজুর রহমান ও নোয়াখালী-৫ বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে