শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা নিবার্চনী তফসিল এক মাস পেছানোর দাবি

ভোটে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট

যাযাদি রিপোটর্
  ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
জাতীয় প্রেসক্লাবে রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একটি বিশেষ মুহ‚তের্ গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা ড. কামাল হোসেন Ñফোকাস বাংলা

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে ভোট এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর ১৫ মিনিট আগে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কাযার্লয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নিদর্লীয় সরকারের অধীনে নিবার্চনের দাবি জানিয়ে আসা ঐক্যফ্রন্ট বলছে, সাত দফা থেকে তারা সরে আসেনি; আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তাদের ভোটে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত।

রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জোটের এই সিদ্ধান্ত জানান বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা কামাল হোসেনের লিখিত বিবৃতি পড়ে শুনিয়ে ফখরুল বলেন, ‘নিবার্চন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নিবার্চনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত খুবই কঠিন। কিন্তু এ রকম ভীষণ প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিবার্চনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তবে ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবি থেকে পিছিয়ে আসছে না জানিয়ে ফখরুল বলেন, তার সঙ্গে তফসিল পিছিয়ে দেয়ার দাবি তারা যুক্ত করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বতর্মান তফসিল বাতিল করে নিবার্চন এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি করছি। সেই ক্ষেত্রেও বতর্মান সংসদের মেয়াদকালেই নিবার্চন করা সম্ভব হবে।’

ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় বতর্মান সংসদ ভেঙে দিয়ে নিদর্লীয় সরকারের অধীনে নিবার্চনের দাবি ছিল। মুখে ‘দাবি থেকে না সরার’ কথা বললেও বতর্মান সংসদের মেয়াদকালে ভোট আয়োজনে সম্মতি দিয়ে মূল দাবি থেকে পিছু হটলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে নিবার্চন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের যে তফসিল ঘোষণা করেছে, সেখানে ১৯ নভেম্বর পযর্ন্ত মনোনয়নপত্র জমা এবং ২৯ নভেম্বর পযর্ন্ত প্রাথির্তা প্রত্যাহারের সময় রাখা হয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এ নিবার্চন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নিবার্চন কমিশনের।

ঐক্যফ্রন্টের লিখিত বিবৃতিতে নিবার্চন পেছনোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, ২০০৮ সালের নিবার্চনে তৎকালীন চার দলীয় জোটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তফসিল দুই দফা পেছানো হয়েছিল।

আর জোটের সাত দফা দাবির বিষয়ে সেখানে বলা হয়, ‘এসব দাবি আদায়ের সংগ্রাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অব্যাহত রাখবে। নিবার্চনে অংশগ্রহণকেও সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করবে ফ্রন্ট।’

লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটা অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নিবার্চন অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার ও নিবার্চন কমিশনের। নিবার্চনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে সরকার এবং নিবার্চন কমিশনের আচরণের প্রতি।

‘আমরা বলে দিতে চাই, জনগণের দাবি মানা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব সরকার ও নিবার্চন কমিশনকেই নিতে হবে।’

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘আন্দোলন তো চলতেই থাকবে। নিবার্চনে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং পরিবেশ তৈরি করার জন্য আন্দোলন চলবে।’

কামাল হোসেনের নামে ফখরুলের পড়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নিবার্চন মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার অধিকার হরণ করেছে। নিশ্চিতভাবে আগামী নিবার্চন দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের নিবার্চন হবে।

‘আমরা বিশ্বাস করি, দশম সংসদ নিবার্চনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট দূর করে আমাদের ঘোষিত ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে একটা সুখী, সুন্দর, আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে দেশের জনগণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশে থাকবে।’

ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবে নিবার্চন করলে এবং এক দল অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করতে চাইলে রোববারের মধ্যেই তা নিবার্চন কমিশনকে জানাতে হবে। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলো অভিন্ন প্রতীকে নিবার্চন করবে কিনা জানতে চাইলে মিজার্ ফখরুল বলেন, ‘আমরা পরে জানাব।’

অন্যদের মধ্যে বিএনপির মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের মোস্তফা মহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ভোটে যাবে ২০

দলীয় জোটও

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ২০ দলীয় ঐক্যজোট। একই সঙ্গে বড়দিন ও অন্যান্য কারণে নিবার্চনের ঘোষিত তফসিল এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছে জোটটি।

রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কাযার্লয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

জোটের এই ঘোষণা পাঠ করেন সমন্বয়ক এলডিপির সভাপতি কনের্ল (অব.) অলি আহমদ। এ সময় ২০ দলীয় জোটের শীষর্ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে অলি আহমদ বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও জনগণের প্রতি আস্থা আছে বলেই এত প্রতিকূলতার মাঝেও ২০ দলীয় জোট সবর্সম্মতভাবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চনে জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও আমাদের নিবার্চনী সমঝোতা হবে। আমরা বিশ্বাস করি সরকারের দুনীির্ত, অনাচার, তিস্তার পানি আনতে ব্যথর্তাসহ রাষ্ট্রীয় স্বাথর্রক্ষায় সীমাহীন ব্যথর্তার বিরুদ্ধে রায় দেয়ার সুযোগ জনগণকে দেয়া উচিত। সে কারণেই আমরা নিবার্চনে অংশগ্রহণ করব। যাতে জনগণ তাদের ক্ষোভ ও বেদনা প্রতিবাদ প্রকাশের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়।’

কনের্ল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘আমরা দাবি করছি, সরকার দেশনেত্রীকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দিয়ে তাকে নিবার্চনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে; অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নিবার্চনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করবে; অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নিবার্চন অনুষ্ঠানে নিবার্চন কমিশন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে; নিবার্চনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকমীের্দর কোনো ধরনের হয়রানি করবে না।’

খালেদা জিয়াসহ দলীয় নেতাকমীের্দর মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, নতুন মামলা না দেয়া ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরও বেশি করে মামলা দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এখন পযর্ন্ত কোনো নেতাকমীের্ক মুক্তি দেয়া হয়নি। এমনকি ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দেয়া গায়েবি মামলায় হাইকোটর্ জামিন দেয়ার পর সরকারের আইনজীবীরা চেম্বার জজ আদালতে ওই সমস্ত মামলার জামিন বাতিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

এ সময় অলি আহমদ অভিযোগ করেন, অনুগত নিবার্চন কমিশনকে (ইসি) দিয়ে দেশের সকল বিরোধী দলের আবেদন ও যৌক্তিক পরামশর্ অগ্রাহ্য করে একতরফাভাবে নিবার্চনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এর উদ্দেশ্য বিরোধীদলগুলোকে নিবার্চনের জন্য সময় কম দেয়া। কারণ সরকারি দল গত কয়েক মাস ধরে নীতিমালা অমান্য করে নিবার্চনী প্রচারণা করেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে প্রকাশ্যে দলীয় প্রতীকে ভোট চেয়ে জনসভা করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, তফসিল না পেছালে ২০ দলীয় জোট পরবতীের্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

আসন বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, জোটের নেতারা বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এখনো তা চূড়ান্ত নয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নিবার্হী পরিষদের সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম, কল্যাণ পাটির্র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহীম, জাতীয় পাটির্ (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, মুসলিম লীগের সভাপতি এএইচ এম কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ লেবার পাটির্র চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি মুফতি মো. ওয়াক্কাস, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, ইসলামিক পাটির্র সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, ডেমোক্র্যাটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি, বাংলাদেশ পিপলস পাটির্র সভাপতি রিটা রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি এম এন শাওন সাদেকী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তবে জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পাটির্র সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পাথর্ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। টেলিফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গভীর রাতে আমাকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সকালে আমার এলাকার অনেক লোকজনের সঙ্গে মিটিং থাকায় আসতে পারিনি। তবে আমি জোটে আছি। জোটবদ্ধ হয়েই নিবার্চন করব।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22141 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1